অথবা, পুঁজিবাদ বলতে কী বুঝ?
অথবা, পুঁজিবাদ কাকে বলে?
উত্তর৷ ভূমিকা : সমাজতাত্ত্বিক আলোচনায় পুঁজিবাদ একটি তাৎপর্যপূর্ণ প্রত্যয়। পুঁজিবাদ বর্তমান পৃথিবীতে সর্বত্র বিরাজমান। সমাজ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে পুঁজিবাদী অবস্থায় পর্যবসিত হয়েছে। পার্থিব সুখশান্তি, সম্পদ লাভ, মুনাফা অর্জন প্রভৃতিকে কেন্দ্র করে পুঁজিবাদের বিকাশ ঘটে। বর্তমান পৃথিবীর সমাজ, ধর্ম, রাজনীতি, সংস্কৃতিসহ সমাজজীবনের সকল ক্ষেত্রে পূজিবাদের প্রভাব স্পষ্ট।
পুঁজিবাদ (Capitalism) : সামন্ত সমাজের পতন পুঁজিবাদের উদ্ভব ঘটায়। শিল্পবিপ্লবকে পুঁজিবাদের স্রষ্টা হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। পুঁজিবাদ বলতে এমন এক ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে বুঝানো হয় যেখানে উৎপাদনের উপায়ের উপর ব্যক্তিগত মালিকানা স্বীকৃত এবং অবাধ ব্যবসায় বাণিজ্যের মাধ্যমে সম্পদ সংগ্রহের সুযোগ বিদ্যমান। উৎপাদন ব্যবস্থায় । ব্যক্তিগত মালিকানা পুঁজিবাদের মূল ভিত্তি।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী ও তাত্ত্বিক ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে পুঁজিবাদের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে তাদের প্রদত্ত কয়েকটি সংজ্ঞা উপস্থাপন করা হলো :
সিডনি উলফ (Sidney Welf) এর মতে, “পুঁজিবাদ হচ্ছে সমাজ উন্নয়নের একটি স্তর, যেখানে ব্যক্তিমালিকানাধীন উৎপাদন ব্যবস্থা বিদ্যমান এবং শিল্পকারখানা ও শ্রমিকের শ্রম নিয়ন্ত্রণ করে মালিক উৎপাদিত দ্রব্যের একচেটিয়া অধিকার ভোগ করেন । শ্রমিকগণ উৎপাদিত দ্রব্যের মুনাফা থেকে বঞ্চিত হয়।”
অধ্যাপক ডি. এম. সি. রাইট (D. M. C. Wright) বলেছেন, “পুঁজিবাদ এমন এক ধরনের ব্যবস্থা যেখানে অর্থনৈতিক কার্যক্রমের অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত উদ্যোগ গৃহীত হয় এবং অবাধ প্রতিযোগিতা ও মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে পরিচালিত হয়।”
আর. টি. শেফার (R. T. Schaefer) এবং আর. পি. ল্যাম (R. P. Lamm) বলেছেন, “পুঁজিবাদ হচ্ছে এমন এক ধরনের অর্থব্যবস্থা, যেখানে উৎপাদনের উপায়ের বৃহৎ অংশ ব্যক্তির হাতে ন্যস্ত থাকে এবং আর্থিক কর্মের মূল উত্তেজক হচ্ছে সঞ্চিতি লাভ” অক্সফোর্ড এডভান্স লার্নারস্ ডিকশনারি অফ কারেন্ট ইংলিশ (Oxford Advanced Learner’s Dictionary of Current English) গ্রন্থে পুঁজিবাদের সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে এভাবে, “পুঁজিবাদ হলো এমন এক ধরনের অর্থনৈতিক
ব্যবস্থা যেখানে একটি দেশের ব্যবসায় বাণিজ্য এবং শিল্পকারখানা কোন পুঁজিপতির ছত্রছায়ায় গড়ে উঠে ও নিয়ন্ত্রিত হয় এবং এর প্রধান উপকরণসমূহ হলো প্রতিযোগিতা, মুনাফা, যোগান এবং চাহিদা। লেনিন (Lanin) এর মতে, “পুঁজিবাদ বলতে পণ্য উৎপাদনের ঐ উন্নত স্তর বুঝায় যেখানে মানুষ, শ্রমের উৎপাদন শুধু নয়, মনুষ্য শ্রমশক্তি নিজেই পণ্যে পরিণত হয়।” সমাজবিজ্ঞান অভিধান (Dictonary of Social Science) এর ভাষায়, “Capitalism is a system in which
the mode of production is controlled by the private entrepreneure.”
উপসংহার : উপর্যুক্ত সংজ্ঞাগুলোর প্রেক্ষিতে বলা যায়, পুঁজিবাদ হচ্ছে এমন একটি অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থা যেখানে সম্পত্তির উপর ব্যক্তিমালিকানা স্বীকৃত, অবাধ প্রতিযোগিতা বিদ্যমান এবং শ্রেণীশোষণ চরম মাত্রায় বিরাজ করে।