অথবা, পুঁজিবাদী সমাজে নারীর অবস্থান ব্যাখ্যা কর।
অথবা, পুঁজিবাদে নারীর অবস্থান কোথায়? সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, “পুঁজিবাদ নারীকে পণ্যে পরিবর্তিত করেছে? সংক্ষেপে লিখ।
অথবা, পুঁজিবাদে নারীকে কীভাবে দেখা হয় সংক্ষেপে মূল্যায়ন কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় নারী পুরুষের ভোগের বস্তু বলে গণ্য হতো। আধুনিক সমাজেও নারী পুরুষের ভোগের বস্তু এবং লালসার শিকার। পুঁজিবাদী সমাজ নারীকে পণ্যে পরিণত করেছে।
পুঁজিবাদে নারীর অবস্থান : পুঁজিবাদ একধরনের অর্থনৈতিকব্যবস্থা। ধ্রুপদী মার্কসীয় তত্ত্ব অনুসারে উৎপাদন পদ্ধতি, সম্পত্তি, শ্রম এবং শ্রেণিসংগ্রামের উপর ভিত্তি করে এই আর্থ-ব্যবস্থা বিকাশ লাভ করে। পুঁজির চরিত্র তাই এমন যে তা একাধারে প্রগতিশীল ও ক্ষয়িষ্ণু। মার্কসবাদ অনুসারে পুঁজিই মানুষের সম্পর্ক কেমন হবে তা নির্ধারণ করে দেয়। নারী-পুরুষ বা জেন্ডার সম্পর্কও এই পুঁজিবাদের উপর নির্ভরশীল। নারীবাদীরা পুঁজিবাদের ইতিবাচক দিক লক্ষ্য করে বলেছেন বংশগতির পরিবর্তে এই প্রথম শ্রম এবং উৎপাদন সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে নারী পুরুষের সম্পর্ককে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে। এই পদ্ধতি অনুসারে পুঁজির মালিক ও নিয়ন্ত্রক পুরুষ। ফলে নারীকে পুরুষের অধস্তন হয়ে থাকতে হয়। নারীর আর্থসামাজিক নির্ভরশীলতার কারণে পুঁজিবাদী সমাজে পুরুষের সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয় নারী। পুরুষ নারীকে নানা কৌশলে নানা পন্থায় শোষণ ও নির্যাতন করে। অধিকাংশ নারীবাদীরা মনে করেন যে পুঁজিবাদীসমাজ নারী নিপীড়নের যন্ত্র। পুঁজিবাদের কারণেই নারী পুরুষের সম্পর্কও অসম হয়ে গেছে। এঙ্গেলের কথায় তার (নারীর) ঘটেছে বিশ্ব ঐতিহাসিক পরাজয়। সম্প্রতি পুঁজিবাদের ফল হিসেবে বিশ্বায়নের সূচনা ঘটেছে। তাতেও পুরুষের তুলনায় নারী আরো অধস্তন হয়ে পড়েছে। শিকার হচ্ছে ব্যাপক শোষণের। অনেক নারী পুরুষের এই বৈষম্যমূলক জেন্ডার সম্পর্ককে বিলম্বিত বা ক্ষয়িষ্ণু পুঁজিবাদের ফল বলে মনে করেন।
পুঁজিবাদের বিকাশের ফলে শিল্পের বিকাশ ঘটতে থাকে এবং উৎপাদনের ক্ষেত্র পরিবার থেকে পাবলিক গণ্ডিতে স্থানান্তরিত হয়। নারীরা এতে স্থান পায় না, বরং তারা গৃহস্থালির কাজই করতে থাকে যা অনুৎপাদনশীল কাজ বলে গণ্য হয়। এভাবে পুঁজিবাদ নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতা হরণ করে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, দরিদ্র ছিন্নমূল পরিবারের মেয়েদের শারীরিক এবং অর্থনৈতিকভাবে শোষণের ক্ষেত্র তৈরি করেছে। বিভিন্ন পত্র ও টেলিভিশনের বিজ্ঞানী প্রচারণা এ সত্যকে তুলে ধরে।