অথবা, পুঁজিবাদের বৈশিষ্ট্য লিখ।
অথবা, পুঁজিবাদের বৈশিষ্ট্যগুলো কী কী?
উত্তর৷ ভূমিকা : সমাজতাত্ত্বিক আলোচনায় পুঁজিবাদ একটি তাৎপর্যপূর্ণ প্রত্যয়। পুঁজিবাদ বর্তমান পৃথিবীতে সর্বত্র বিরাজমান। সমাজ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে পুঁজিবাদী অবস্থায় পর্যবসিত হয়েছে। পার্থিব সুখশান্তি, সম্পদ লাভ, মুনাফা অর্জন প্রভৃতিকে কেন্দ্র করে পুঁজিবাদের বিকাশ ঘটে। বর্তমান পৃথিবীর সমাজ, ধর্ম, রাজনীতি, সংস্কৃতিসহ সমাজজীবনের সকল ক্ষেত্রে পুঁজিবাদের প্রভাব স্পষ্ট।
পুঁজিবাদের বৈশিষ্ট্য : নিম্নে পুঁজিবাদের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. ব্যক্তিমালিকানা : পুঁজিবাদের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো ব্যক্তিমালিকানা। অর্থ প্রচলনের মধ্য দিয়ে ব্যক্তিমালিকানার ধারণা চলে আসে। পুঁজিবাদে ব্যক্তি উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের মালিক এবং উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্যক্তিই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অর্থাৎ পুঁজিবাদ রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে।
২. মুনাফার জন্য উৎপাদন : পুঁজিবাদের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য মুনাফা অর্জন। মুনাফা অর্জনের মাধ্যমে বৃহৎ পুঁজি গড়ে তোলাই হলো পুঁজিবাদের মর্মকথা। মুনাফা অর্জনের জন্য উৎপাদন ব্যবস্থাকে সুবিধামতো পরিচালনা করা হয়। উৎপাদনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ মুনাফা লাভের লক্ষ্য সর্বদা বর্তমান থাকে। এমনকি অধিক মুনাফা লাভের জন্য পুঁজিপতিদের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা দৃশ্যমান হয়।
৩. অবাধ প্রতিযোগিতা : অবাধ প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে অধিক মুনাফা লাভ পুঁজিবাদের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। মানসম্মত পণ্য সহজেই ভোক্তাকে আকর্ষণ করে। পুঁজিপতিরা ভোক্তাকে মানসম্মত পণ্য সরবরাহে তীব্র প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। প্রতিযোগিতায় যারা টিকে থাকে স্বাভাবিকভাবেই তারা অধিক মুনাফা লাভে সক্ষম হয়।
৪. শ্রমিকের অবস্থা : পুঁজিবাদী সমাজে সাধারণ দৃষ্টিতে শ্রমিককে স্বাধীন হিসেবেই মনে হয়। তারা পুঁজিপতির কাছে শ্রম বিক্রির মাধ্যমে বেঁচে থাকে। শ্রমিক তার সুবিধামতো শ্রম বিক্রির সুযোগ লাভ করে। আপাতদৃষ্টিতে শ্রমিক তার শ্রম প্রয়োগের ক্ষেত্রে স্বাধীন। কিন্তু পুঁজিপতিরা শ্রমিক শোষণের ভিত্তিতে পুঁজি গড়ে তোলে ।
৫. শ্রমিক শোষণ : পুঁজিবাদী সমাজে শ্রমিক যা উৎপাদন করে তা থেকে ন্যায্য মূল্য পায় না। শ্রমিকের উদ্বৃত্ত উৎপাদন ভোগ করে পুঁজিপতি। উদ্বৃত্ত উৎপাদনে শ্রমিকের কোন অধিকার থাকে না। এভাবে শ্রমিক শোষিত হতে থাকে। শ্রমিকের উদ্বৃত্ত উৎপাদন পুঁজিপতি আত্মসাতের মাধ্যমে একদিকে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলে, অন্যদিকে শ্রমিক শ্রেণী মানবেতর জীবনযাপন করে।
৬. আধুনিক অর্থব্যবস্থা : পুঁজিবাদ একটি বিশেষ ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, যেখানে সরকারি নিয়ন্ত্রণের বাইরে পুঁজিপতি অর্থ পরিচালনা করে। এখানে এক ধরনের দার্শনিক ভিত্তি গড়ে উঠে। অবাধ বাণিজ্য, বৃহৎ পুঁজি, গণতন্ত্র প্রভৃতির উপস্থিতিতে আধুনিক অর্থব্যবস্থা গড়ে উঠে।
৭. শ্রেণীবৈষম্য ও শ্রেণীসংঘর্ষ : পুঁজিবাদী সমাজে ব্যাপকভাবে শ্রেণী বিভাজন, শ্রেণীবৈষম্য, শ্রেণীশোষণ প্রভৃতি লক্ষ্য করা
যায়। কর্ম বিভাজনের মাধ্যমে পুঁজিবাদে বিভিন্ন শ্রেণীর সৃষ্টি হয়। শ্রেণীস্বার্থকে কেন্দ্র করে সর্বদা বিভিন্ন শ্রেণীর মাঝে সংঘর্ষ লেগে
থাকে । পুঁজিপতিরা শ্রমিকদের উদ্বৃত্ত উৎপাদন শোষণ করে এবং এভাবে দুই শ্রেণীর মধ্যে বিরোধপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকে ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, পুঁজিবাদ হচ্ছে সমাজের এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে মানুষের ব্যক্তিগত সম্পত্তি গড়ে তোলায় এবং ব্যবসায় দ্বারা অবাধ মুনাফা লাভের স্বাধীনতা থাকে। পুঁজিবাদ অপরাপর সমাজব্যবস্থা থেকে ভিন্ন। অধিক মুনাফা লাভের জন
্য এখানে অবাধ প্রতিযোগিতা বিদ্যমান ।