Download Our App

পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য উল্লেখপূর্বক গুণাবলি আলোচনা কর।

অথবা, পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার ইতিবাচক দিক লিখ।
অথবা, পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার সদর্থক গুণাবলি লিখ।
অথবা, পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার সুবিধা আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
মানবসমাজ প্রধানত চারটি পর্যায় অতিক্রম করে বর্তমান পর্যায়ে এসে উপনীত হয়েছে। এ পর্যায়গুলো হচ্ছে যথাক্রমে সামন্তবাদী সমাজব্যবস্থা, দাস সমাজব্যবস্থা, সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা এবং ধনতান্ত্রিক বা পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা। সপ্তদশ শতাব্দী থেকে ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত সংগঠিত বিপবগুলোর মাধ্যমে বুর্জোয়াগণ
সামন্তবাদী ব্যবস্থার পরিবর্তে পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা বা সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন।
পুঁজিবাদী অর্থনীতির গুণাবলি : পুঁজিবাদী অর্থনীতির বেশকিছু গুণ রয়েছে। নিম্নে সেগুলো আলোচনা করা হলো :
১. দক্ষতা বৃদ্ধি : অবাধ প্রতিযোগিতা বিদ্যমান থাকায় পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় প্রত্যেকে তাদের দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা করে। এর ফলে ব্যক্তির সুপ্ত প্রতিভা ও গুণাবলির পূর্ণ বিকাশ ঘটে।
২. অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সাধন : পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সাধিত হয়। ঊনবিংশ এবং বিংশ শতাব্দীতে আমেরিকা ও ইউরোপের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সাধন পুঁজিবাদের ফলেই সম্ভব হয়েছে।
৩. অবাধ প্রতিযোগিতা : পুঁজিবাদ অবাধ প্রতিযোগিতার নীতিতে বিশ্বাসী। অবাধ প্রতিযোগিতার ফলে উৎপাদিত পণ্য বা দ্রব্যের গুণগত উৎকর্ষতা ও পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
৪. জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন : পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সাধিত হয় বলে জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়। ফলে জনগণের সুপ্ত প্রতিভা ও মানসিক বিকাশ সাধিত হয়।
৫. দ্রব্যমূল্য হ্রাস : এ ব্যবস্থায় অবাধ প্রতিযোগিতা বিদ্যমান থাকায় দ্রব্যমূল্যের নিম্নগতি লক্ষ্য করা যায়। উৎপাদন ব্যয় এবং মূল্যস্তরের নিম্নগতির ফলে ক্রেতাগণ লাভবান হয়।
৬. শিল্প ও প্রযুক্তির উন্নয়ন : পুঁজিবাদ শিল্প ও প্রযুক্তির উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি সহায়তা করে। জাপান, জার্মান, যুক্তরাষ্ট্র পুঁজিবাদী পথ অবলম্বন করেই শিল্প ও প্রযুক্তিতে অভাবনীয় উন্নতি সাধন করেছে।
৭. ক্রেতার স্বাধীনতা : পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় ক্রেতা তার পছন্দ বা রুচি অনুযায়ী দ্রব্যসামগ্রী কিনতে পারে। এর ফলে ক্রেতার স্বার্থ ও স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ থাকে।
৮. আমলাতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ মুক্ত : পুঁজিবাদে উৎপাদকগণ দাম ও লাভের মধ্য দিয়ে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে কাজ করে থাকে। দ্রব্যের চাহিদার উপর মুনাফার হার নির্ধারিত হয়। রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ বা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থেকে পুঁজিবাদী অর্থনীতি মুক্ত।
৯. সম্পদের যথাযথ ব্যবহার : ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উৎপাদনের সাথে ঝুঁকি জড়িত থাকে বলে উৎপাদনকারী অত্যন্ত সতর্কতা ও বিবেচনার সাথে সম্পদ ব্যবহারের চেষ্টা করে। এর ফলে সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, পুঁজিবাদে শিল্প ও প্রযুক্তির উন্নতি সাধন, জাতীয় উৎপাদন ও জাতীয় আয় বৃদ্ধি পেলেও তা বিশ্বযুদ্ধ, শ্রমিক শোষণ, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, নিন্দনীয় প্রতিযোগিতা প্রভৃতি ডেকে আনে। এজন্য বর্তমান যুগে পুঁজিবাদকে জনকল্যাণের দিক থেকে মুর্দাবাদ জানানো হচ্ছে। তবে মালিকগণ যদি একটু সহৃদয় মানসিকতা নিয়ে তাদের উৎপাদন কার্য পরিচালনা করেন এবং রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ পর্যাপ্ত তদারকির ভার গ্রহণ করেন তবে পুঁজিবাদ জনকল্যাণে বেশ সহায়তা করবে বলে আশা করা যায়।