পুঁজিবাদ হল একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যা ব্যক্তিগত মালিকানা, উৎপাদনের উপায়ের নিয়ন্ত্রণ এবং লাভের জন্য তাদের পরিচালনার উপর ভিত্তি করে নিয়ন্ত্রিত। পুঁজিবাদের কেন্দ্রীয় বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে রয়েছে পুঁজি সংগ্রহ, প্রতিযোগিতামূলক বাজার, সরবরাহ এবং চাহিদা দ্বারা নির্ধারিত একটি মূল্য ব্যবস্থা, ব্যক্তিগত সম্পত্তি, সম্পত্তির অধিকারের স্বীকৃতি, স্বেচ্ছাসেবা বিনিময় এবং মজুরি শ্রম । পুঁজিবাদী বাজার অর্থনীতিতে, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বিনিয়োগ; সম্পদ, সম্পত্তি, পুঁজি চালনা করার ক্ষমতা বা পুঁজিবাজার ও আর্থিক বাজারে উৎপাদন ক্ষমতার মালিকদের দ্বারা নির্ধারিত হয়—যেখানে মূল্য এবং পণ্য ও পরিষেবার বণ্টন প্রধানত পণ্যের এবং সেবার বাজারের প্রতিযোগিতার দ্বারা নির্ধারিত হয়।
কোনো দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বা বিশুদ্ধভাবে পুঁজিবাদী নয়, কেননা সরকার গ্রাহক চুক্তির বিবরণ এবং মুক্ত বাজারকে সমস্ত মূল্য নির্ধারণের অনুমতি দিতে পারে না। অর্থনীতিবিদ, ইতিহাসবিদ, রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ এবং সমাজবিজ্ঞানীরা তাদের পুঁজিবাদের বিশ্লেষণে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছেন এবং বাস্তবে এর বিভিন্ন রূপকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেলেসে-ফেয়ার বা মুক্ত-বাজার পুঁজিবাদ, রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদ এবং কল্যাণমূলক পুঁজিবাদ। পুঁজিবাদের বিভিন্ন রূপ; মুক্ত বাজার, জনস্বত্ব, মুক্ত প্রতিযোগিতার বাধা এবং রাষ্ট্র-অনুমোদিত সামাজিক নীতির বিভিন্ন মাত্রার বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে। পুঁজিবাদের বিভিন্ন মডেল জুড়ে বাজারে প্রতিযোগিতার মাত্রা এবং হস্তক্ষেপ ও নিয়ন্ত্রণের ভূমিকার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় মালিকানার সুযোগ পরিবর্তিত হয়। বিভিন্ন বাজার কতটা মুক্ত এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তি সংজ্ঞায়িত করার নিয়মগুলি রাজনীতি ও নীতির বিষয়। বিদ্যমান পুঁজিবাদী অর্থনীতিগুলো মিশ্র অর্থনীতি, যেখানে মালিকানা এবং উৎপাদনের উপায়গুলোর নিয়ন্ত্রণ বেশিরভাগই ব্যক্তিগত, এবং তা রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ এবং কিছু ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক পরিকল্পনার সাথে মুক্ত বাজারের উপাদানগুলিকে সংযুক্ত করে। তাই ইতালি, নিউজিল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সুইডেন এবং ফ্রান্সের মতো বৈচিত্র্যময় দেশগুলির উল্লেখ করার জন্য রাজনৈতিক আলোচনায় “পুঁজিবাদ” শব্দটি খুব শিথিলভাবে ব্যবহৃত হয়; যতক্ষণ না যথেষ্ট পরিমাণে মুক্ত বাণিজ্য থাকে এবং সরকার উৎপাদনের প্রধান উপায়গুলির মালিক না হয়, একটি দেশকে সাধারণত পুঁজিবাদী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।
বাজার অর্থনীতি বিভিন্ন ধরনের সরকারের অধীনে এবং বিভিন্ন সময়ে, স্থান ও সংস্কৃতিতে বিদ্যমান রয়েছে। আধুনিক পুঁজিবাদী সমাজগুলো পশ্চিম ইউরোপে এমন একটি প্রক্রিয়ায় বিকশিত হয়েছিল যা শিল্প বিপ্লবের দিকে নিয়ে গিয়েছিল। বিভিন্ন মাত্রার প্রত্যক্ষ সরকারি হস্তক্ষেপসহ পুঁজিবাদী ব্যবস্থা পশ্চিমা বিশ্বে প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে এবং তা ছড়িয়েও পড়ছে। পুঁজিবাদী অর্থনীতির একটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ প্রবণতা হলো অর্থনৈতিক বৃদ্ধি।