উত্তর : আলোচ্য অংশটুকু স্বনামধন্য ছোটগল্পকার আবুর মনসুর আহমদ রচিত ‘আয়না’ গল্পগ্রন্থের অন্তর্গত ‘হুযুর কেবলা’ ছোটগল্পে হুযুর কেবলার ভোজনপটুতাকে কটাক্ষ করে গল্পকার আলোচ্য তাৎপর্যপূর্ণ উক্তিটি করেছেন। বাঙালি মুসলমান সমাজে দীর্ঘকাল ধরে পীর পূজা চালু হয়ে আছে। পরজীবী এ পীরেরা অন্যের উপর দিয়ে নিজেদের বিলাসিতা ও শান-শওকত মিটিয়ে থাকেন। পরের বাড়ির হালুয়া-রুটি খেতে খেতে এঁরা প্রত্যেকেই ভোজনরসিকে পরিণত হয়ে যান। খাওয়ার ব্যাপারে এঁরা যেমন উৎসাহী কাজের বেলায় তেমনটি নন। ‘হুযুর কেবলা’ গল্পের পীর সাহেবের ক্ষেত্রেও এ মন্তব্য যথার্থ। একবার দূরবর্তী স্থানের মুরিদেরা পীর সাহেবকে দাওয়াত করায় সোৎসাহে যাত্রার আয়োজন শুরু হলো। প্রকাণ্ড বজরায় এক মণ ঘি, আড়াই মণ তেল, দশ মণ সরু চাল, তিন শত মুরগি, সাত সের অম্বুরি তামাকসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য তোলা হলো। তেরো জন শাগরেদ নিয়ে পীর সাহেব মুরিদানে রওনা হলেন। পীর সাহেবের ভ্রমণ বৃত্তান্ত ইংরেজিতে লিখে কলিকাতার সংবাদপত্রে পাঠাবার উদ্দেশ্যে এমদাদকেও সাথে নেয়া হলো। নদীর সৌন্দর্য ও নদীর পাড়ের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য উপভোগ করতে করতে এবং উন্নতমানের খানাপিনা খেতে খেতে পীর সাহেব গন্তব্য স্থানে উপস্থিত হলেন। মুরিদানে পৌছে পীর সাহেব যে অভ্যর্থনা পেলেন তা দেখলে অনেক রাজা-বাদশা রাজত্ব ছেড়ে দিয়ে পীরালি শুরু করতেন। বিভিন্ন দিন বিভিন্ন মুরিদের বাড়িতে বিরাট বিরাট ভোজ চলতে লাগল। পীর সাহেবের থেকে একটু দূরে বসে এমদাদ গুরুভোজন চালিয়ে যেতে থাকল। পীর সাহেবের ভোজনপ্রিয়তা ও ভোজনক্ষমতা এর পূর্বে দেখার সুযোগ এমদাদের হয়নি। এবার সে সুযোগ পেয়ে এমদাদ বুঝতে পারল, পীর সাহেবের রুহানী শক্তি বা আধ্যাত্মিক ক্ষমতা যত বেশিই থাকুক না কেন, তাঁর হজমশক্তি নিশ্চয়ই তার চেয়ে বেশি। অর্থাৎ পীর সাহেব খেতে ভালোবাসতেন এবং প্রচুর খেতে পারতেন। প্রত্যেক পীর সাহেবের মত এ গল্পের হুযুরও একজন ভোজনরসিক পীর ছিলেন।