উৎস : উদ্ধৃত অংশটুকু প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক আবুল মনসুর আহমদ রচিত ‘হুযুর কেবলা’ শীর্ষক ছোটগল্প থেকে চয়ন করা
প্রসঙ্গ : ধর্মে নিষ্ঠা না আসার বেদনায় এমদাদ কথিত সুফি সাহেবের শরণাপন্ন হলে সুফি সাহেব উক্ত উক্তিটির অবতারণা
বিশ্লেষণ : খিলাফত আন্দোলনে যোগদানের পর এমদাদ একেবারে বদলে গেল। সে তার কোলকাতার নাস্তিকতা জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে একজন খাঁটি মুসলমান হয়ে গেল। হাল ফ্যাশানের সমস্ত পোশাক পরিচ্ছদের পরিবর্তে সে সাধারণ পোশাকে নিজেকে অভ্যস্ত করে তুলল। সে নিজেকে পুরোপুরি ইসলামি লেবাসে আবৃত করল। সে ভয়ানক নামায পড়তে লাগল। বিশেষকরে সে নফল নামাযে একেবারে তন্ময় হয়ে পড়ল। নিজ হাতে তৈরি তসবির উপর আঙুল চালিয়ে আঙুলের মাথা ক্ষয় করে ফেলল। আত্মাকে ছোট করে দেহ যেন বেড়ে উঠতে না পারে তার জন্য দেহের কৃচ্ছতাসাধন শুরু করল। কিন্তু এতকিছুর পরেও এমদাদ এবাদতে নিষ্ঠা আনতে পারল না। তখন সে সুফি বলে খ্যাত স্থানীয় এক পীর সাহেবের খলিফার শরণাপন্ন হলো। সমাজে ঐ খলিফার একটু বিশেষ খ্যাতি ছিল। কেননা সে অনেক রাত পর্যন্ত জেগে এল্হু এল্হু করতো। মেয়েলোকের উপর জিনের আসর হলে ছাড়াতে পারতো। এমদাদের দুঃখের কথা শুনে সুফি সাহেব প্রথমে ইংরেজি শিক্ষাকে তার দুঃখের কারণ হিসেবে জানালো। এজন্য ইংরেজি শিক্ষিতদের উদ্দেশ্যে সে বেশ কিছু বাঁকা কথা শোনাল। তারপর জিজ্ঞেস করল সে কোন পীরের মুরিদ কি না। এমদাদ উত্তরে না বলাতে সুফি সাহেব এমন ভাব করলেন যেন রোগ নির্ণয় করে ফেলেছেন। মাথা নাড়তে নাড়তে তিনি বললেন গোড়াতেই তার ভুল হয়েছে। কেননা পীর না ধরে কেউ রুহানিয়ৎ হাসিল করতে পারে না। এরপরে তিনি এমদাদকে শুনিয়ে শুনিয়ে হাদিসে এ সম্পর্কে কি আছে আরবি উর্দুতে তার প্রশ্ন করতে লাগলেন।
মন্তব্য : আমাদের সমাজে এক শ্রেণির ধর্মান্ধ মানুষ নিজেদের জগতের বাইরে অন্যকিছুর অস্তিত্ব মেনে নিতে পারে না।