পিতৃতান্ত্রিক ও মাতৃতান্ত্রিক পরিবারের মধ্যে কোনটি প্রাচীন? তোমার
উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।
অথবা, পিতৃতান্ত্রিক ও মাতৃতান্ত্রিক পরিবারের মধ্যে কোনটি প্রাচীন? তোর নিজের ভাষা
অথবা, পিতৃতান্ত্রিক ও মাতৃতান্ত্রিক পরিবারের তুলনামূলক আলোচনা কর।
আলোচনা করে দেখাও।
উত্তর ভূমিকা : পরিবার হলো সমাজের অন্যতম মৌলিক এবং ক্ষুদ্রতম সংগঠন। পৃথিবীতে মানবসমাজে অস্তিত্ব যত দিন পরিবারের অস্তিত্বও তত দিন। পরিবার হলো মানুষের সংঘবদ্ধ জীবনের সার্বজনীন রূপ। পরিবার এব
গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান । কোন পরিবার প্রাচীন : এ প্রশ্নটিকে নিয়ে প্রায়ই বিতর্কের ঝড় বয়ে যায়। তবে বেশকিছু নৃবিজ্ঞানী ব্যাকোরে মর্গ্যান, মেকলেনান, ব্রিকল্ট মানবসমাজে মাতৃতান্ত্রিক পরিবারের পূর্বগামিতা বা Prior Existence এর কথা বলেছেন অর্থাৎ তাঁদের মতে, পিতৃতন্ত্রের পূর্বেই মাতৃতন্ত্র লক্ষ করা গিয়েছে। পিতৃতন্ত্র আগে এসেছে নাকি মাতৃতন্ত্র আগে এসে তা নির্ণয় করার জন্য উভয় পরিবার-প্রথা সম্পর্কে আমাদের জানা উচিত। নিম্নে মাতৃতান্ত্রিক পরিবারের পূর্বগামিতার যুি এবং পিতৃতন্ত্র পরিবারের পূর্বগামিতার যুক্তি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
মাতৃতন্ত্রের পূর্বগামিতার পক্ষে যুক্তি : বস্তুত, যেসব নৃবিজ্ঞানী আদিম সমাজে অবাধ যৌনাচারের কথ বলেছেন তারাই সমাজে পিতৃতন্ত্রের আগে মাতৃতন্ত্রের আবির্ভাবের যুক্তি দেন। প্রথমত, এদের অনেকের মতে, আদিকালে আজকের অর্থে না ছিল রাষ্ট্র না ছিল পরিবার। জ্ঞাতি গোষ্ঠী মিলে ছিল ক্ষু
সমাজ। সব বয়স্কা মহিলারা ছিল মাতা এবং সব বয়স্ক পুরুষরা ছিল পিতা। তাঁদের মতে, এ সময়ের অবাধ যৌনাচার জীবনে সম্ভা
প্রসবের দায়ে মাতাকে চিহ্নিত করা গেলেও পিতাকে চিহ্নিত করা যায়নি। তাই সন্তান জন্মানোর পর মাতাকেই লালনপালনের ভার
নিতে হয়েছে। সে কারণে যুক্তি দেওয়া হয়েছে যে মাতা তার সন্তানদের নিয়ে প্রথম পরিবার জীবন গঠন করে। দ্বিতীয়ত, মাতৃতন্ত্রের পূর্বগামিতার উপর্যুক্ত যুক্তির সাহায্য নিয়ে এটাও বলা হয়েছে যে, রাষ্ট্র উৎপত্তির প্রাথমি
পর্যায়ে পরিবার ও সমাজের শাসন ক্ষমতা মেয়েদের হাতেই ন্যস্ত ছিল। বস্তুত যুক্তি দেওয়া হয়েছে যে, পরিবার ও রাষ্ট্রহী জ্ঞাতি বা গোষ্ঠীভিত্তিক সমাজের নেতৃত্ব ছিল মেয়েদের হাতে। তৃতীয়ত, মাতৃতন্ত্রের পূর্বগামিতার সমর্থক নৃবিজ্ঞানীরা আরো যুক্তি দেন যে, দলগত বিবাহভিত্তিক পরিবাহ্ণে
মহিলাদের ক্ষমতাই প্রাধান্য পায়। কেননা, তখনও পিতাকে নির্দিষ্ট করা যায়নি। তবে মর্গান বর্ণিত সিনডিয়াসমিয়ান পরিবারে স্তর থেকে মাতার স্থলে পিতাই নেতৃত্ব দিতে শুরু করে। এ ধরনের পরিবারে অবশ্য পিতা ও মাতা উভয়কে চিহ্নিত করা সহ ছিল । সিনডিয়াসমিয়ান পরিবার ছিল অস্থায়ী। তবে অস্থায়ী হলেও নেতৃত্ব তখন পুরুষের হাতেই বর্তাতে শুরু করে।
পিতৃতন্ত্রের পূর্বগামিতার পক্ষে যুক্তি : পিতৃতন্ত্রের পূর্বগামিতার পক্ষে যে যুক্তি রয়েছে তা নিম্নে উপস্থাপ
করা হলো :
প্রথমত, ১৮৬১ সালে সুইজ আইনবিদ ব্যাকোকেন অবাধ যৌনাচার ও মাতৃতন্ত্রের ব্যাখ্যা দেন। পক্ষান্তরে, ঐ একই
বছর ইংরেজ আইনবিদ হেনরি মেইন ‘Ancient Law’ গ্রন্থে বলেছেন, “পিতৃপ্রধান পরিবারই আদি পরিবার।” কেননা,
তিনি প্রাচীন রোম ও ভারতীয় সমাজে পিতৃতন্ত্রই দেখতে পান।
দ্বিতীয়ত, অবাধ যৌনাচার তত্ত্বের ঘোরবিরোধী নৃবিজ্ঞানী ওয়েস্টার মার্ক যুক্তি দেন যে, আদি থেকেই সমাজে স্বামী- স্ত্রীর যুগল পরিবারের অস্তিত্ব ছিল এবং সেখানে পিতাকে চিহ্নিত না করার কোনো কারণ নেই। ঐ সময়ের আদি পরিবারের ক্ষমতাও পিতার হাতেই ন্যস্ত ছিল।
তৃতীয়ত, রাষ্ট্র উৎপত্তির নৃতাত্ত্বিক ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, প্রাথমিক পর্যায়ের মাতৃতান্ত্রিক পরিবারে মাতাই নেতৃত্ব, মহিলাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই মাতৃতন্ত্র নয় পিতৃতান্ত্রিক অভিব্যক্তিই হলো রাষ্ট্র উৎপত্তি মূলে।
দেয়। এর পাল্টা যুক্তি দিয়ে বলা হয়েছে যে, রাষ্ট্র গঠন পরিচালনায় মাঝে মধ্যে যে কঠোরতার আশ্রয় নিতে হয়
“উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, উপর্যুক্ত বর্ণিত কারণগুলো আধুনিক অনেক নৃবিজ্ঞানীই মাতৃত পূর্বগামিতার কথা স্বীকার করতে চান না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ম্যালেনোস্কি মাতৃতন্ত্রের পূর্বগামিতা সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণ
আগে দেখা দিতে পারে তবুও আধুনিক সমাজ নৃবিজ্ঞানীরা এ অভিমত দেন যে, ক্ষেত্রবিশেষ মাতৃসূত্রীয় প্রথা ও পিতপ্রধান বা