পাশ্চাত্য ত্রি-অবয়বী ন্যায়ের তুলনায় ভারতীয় পঞ্চ অবয়বী ন্যায়ের সুবিধা সংক্ষেপে আলোচনা কর।

অথবা, ত্ৰি-অবয়বী ন্যায়ের তুলনায় পঞ্চ অবয়বী ন্যায়ের সুবিধা সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, ত্রি-অবয়বী ন্যায় অপেক্ষা পঞ্চ অবয়বী ন্যায়ের সুবিধা কী?
অথবা, ত্রি-অবয়বী ন্যায় অপেক্ষা পঞ্চ অবয়বী ন্যায়ের উপযোগিতা কী?
উত্তরা৷ ভূমিকা :
ভারতীয় দর্শনের বিভিন্ন আস্তিক স্কুলসমূহের মধ্যে বস্তুবাদী দর্শন হিসেবে ন্যায়দর্শন স্বাধীন চিন্তা ও বিচারের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং এ দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা হলেন মহর্ষি গৌতম। ন্যায়দর্শনের মূলভিত্তি হলো ‘ন্যায়সূত্র’। ন্যায়দর্শন যুক্তির উপর প্রতিষ্ঠিত এবং বস্তুর জ্ঞান নিরপেক্ষ স্বাধীন সত্তায় বিশ্বাসী। ন্যায়দর্শনকে নামান্তরে তর্কশাস্ত্র, প্রমাণশাস্ত্র, হেতুবিদ্যা, বাদবিদ্যা এবং আন্বীক্ষিকী বিদ্যা বলা হয়। ন্যায়দর্শনের মূল ও প্রধান উপজীব্য বিষয় হলো জ্ঞানতত্ত্ব। নৈয়ায়িকরা জ্ঞানতত্ত্বের আলোচনায় বলেছেন প্রমাণ চার প্রকার। যথা : প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান ও শব্দ। পাশ্চাত্য ত্রি-অবয়বী ন্যায়ের তুলনায় ভারতীয় পঞ্চ অবয়বী ন্যায়ের সুবিধা (Merits of Indian Five-Membered Syllogism in comparison with Western Three-Membered Syllogism) :
ভারতীয় পঞ্চ অবয়বী ন্যায়ের প্রথম অবয়ব হলো প্রতিজ্ঞা, এ অবয়বটি সিদ্ধান্ত সম্পর্কে একটি আনুমানিক ধারণা। এ বচনটি থাকায় সুবিধা হলো, আমরা যুক্তির উদ্দেশ্য ও গতি সম্পর্কে সচেতন থাকি। ফলে আমাদের যুক্তি যথাযথভাবে চালিত হয় এবং আমাদের সময় ও শক্তির অপচয় হয় না। কিন্তু পাশ্চাত্য ন্যায়ে এ প্রতিজ্ঞাপ্রসূত সুবিধাটুকু নেই। পঞ্চ অবয়বী ন্যায়ের শেষ বচনটি আবার প্রথম বচনটির অনুরূপ হলেও এটা প্রথম বচনটির অর্থহীন পুনরাবৃত্তি নয়। যে বচনটি প্রতিজ্ঞায় কেবলমাত্র আনুমানিক ধারণা ছিল। সেটিই সিদ্ধান্তে প্রমাণিত সত্য রূপে প্রতিষ্ঠা লাভ করে । পঞ্চ অবয়বী ন্যায়ের সাহায্যে আমরা চিন্তার আকারগত ও বস্তুগত সত্যতা প্রমাণ করতে পারি। কেননা, ‘উদাহরণ’ নামক বচনটি আমাদের ব্যবহারিক অভিজ্ঞতার দ্বারা প্রমাণিত; কিন্তু পাশ্চাত্য ন্যায়ের সাহায্যে চিন্তার কেবল আকারগত সত্যতা প্রমাণ করা যায় কিন্তু বস্তুগত সত্যতা প্রমাণ করা যায় না।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, পঞ্চ অবয়বী ন্যায়ে বচনগুলো খুবই স্বাভাবিকভাবে সাজানো হয়। কিন্তু পাশ্চাত্য ন্যায়ে প্রথমে একটি সার্বিক বচনের উল্লেখ করা হয় এবং পরে তাকে একটি বিশেষ ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয় যা স্বাভাবিক নয়, এদিক থেকে বিবেচনা করলে পাশ্চাত্য ত্রি-অবয়বী ন্যায়ের তুলনায় ভারতীয় পঞ্চ অবয়বী ন্যায়ের গঠন- বিন্যাসকে অধিকতর যুক্তিযুক্ত ও সন্তোষজনক বলা যায় ।