পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির অসুবিধা কী?

অথবা, পর্যবেক্ষণের নেতিবাচক দিকগুলো কী
কী?
অথবা, পর্যবেক্ষ
ণ পদ্ধতির সীমাবদ্ধতাগুলো কী কী?
উত্তর৷ ভূমিকা : সামাজিক গবেষণায় উপাত্ত সংগ্রহের একটি প্রাচীন এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হচ্ছে পর্যবেক্ষণ। পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে গবেষক গবেষণার পরিবেশ অর্থাৎ সামাজিক অবস্থাকে কোনরূপ বাধাগ্রস্ত বা প্রভাবিত না করে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর আচার আচরণ, রীতিনীতি, সামাজিক সম্পর্ক, প্রথা প্রতিষ্ঠান প্রভৃতি সম্পর্কে বিশুদ্ধ ও অবিকৃত উপাত্ত সংগ্রহ করে থাকেন । প্রকৃতপক্ষে স্বাভাবিক অবস্থায় মুক্ত পরিবেশে মানুষের সত্যিকারের আচরণ অধ্যয়নই পর্যবেক্ষণের মূল লক্ষ্য । এজন্য পর্যবেক্ষণকে সমাজ গবেষণার উপাত্ত সংগ্রহের একটি মৌলিক ও বস্তুনিষ্ঠ কৌশল হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির অসুবিধা : পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির উল্লিখিত সুবিধার পাশাপাশি বেশকিছু অসুবিধা লক্ষ্য করা যায়। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. নিয়ন্ত্রণের সমস্যা : প্রাকৃতিক পরিবেশে স্বাভাবিক মাত্রায় এটা সাধারণত নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয় না। কারণ পর্যবেক্ষণ কম পরিস্থিতিতেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে যেটা অন্য পদ্ধতির দ্বারা সহজে সম্ভব হয়।
২. ক্ষুদ্রাকৃতির নমুনা : পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির সাহায্যে সাধারণত অতি অল্প কিছু বিষয়ের ঘটনা ও বিষয় গবেষণা করা হয়। তাই এর দ্বারা নমুনায়ন করার ক্ষেত্রে ক্ষুদ্রাকৃতির নমুনা করা সম্ভব হয়। অনেক সময় গবেষণার জন্য সেটা যথেষ্ট নাও হতে পারে।
৩. পরিমাপগত অসুবিধা : তথ্যকে যদি পরিমাপ করা না যায় তবে সেটা গবেষণার উপযোগী করা সম্ভব হয় না। অথচ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে গৃহীত তথ্য পরিমাপ করা সহজ হয় না।
৪. দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার : পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে যে তথ্যসংগ্রহ করা হয় তা মোটামুটি দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। এজন্য গবেষককে অন্য পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়।
৫. অংশগ্রহণের সুযোগ নেই : এ পদ্ধতিতে সর্বদা পর্যবেক্ষকের বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণ করার ব্যাপারে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। কারণ ঘটনার সর্বক্ষেত্রে প্রবেশাধিকার নাও থাকতে পারে যা তথ্যসংগ্রহের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে থাকে।
৬. সংবেদনশীল ব্যাপারে অনুসন্ধানে অক্ষম : পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি সংবেদনশীল বিষয়গুলোতে তথ্যসংগ্রহ করতে অক্ষম। কারণ সেখানে সাধারণের অংশগ্রহণ কাম্য নয়। যেমন- পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহার, অপরাধ ইত্যাদি ।
৭. ঘটনার স্থায়িত্ব নির্ভর : পর্যবেক্ষণের একটা সীমাবদ্ধতা হলো ঘটনার নিজস্ব স্থায়িত্বের উপর নির্ভর করে। অর্থাৎ ঘটনা কতক্ষণ স্থায়ী হবে তা পর্যবেক্ষককে অপেক্ষা করতে হয় তথ্যসংগ্রহের জন্য।
৮. গবেষকের পক্ষপাতদুষ্টতা : এ পদ্ধতিতে গবেষক পক্ষপাতিত্ব করতে পারেন। কারণ এখানে একান্ত পরিবেশে পর্যবেক্ষকের তথ্যসংগ্রহ করার সুযোগ থাকে, তাছাড়া এ পদ্ধতিতে লিখিত কোন ডকুমেন্ট থাকে না যার জন্য পর্যবেক্ষকের স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ আছে।
৯. জনমত যাচাইয়ের ক্ষেত্রে : গবেষণার ক্ষেত্রে যেখানে জনমত যাচাই করার প্রয়োজন হয় সেখানে সে পদ্ধতি একেবারে অকার্যকর । মতামত প্রকাশ, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রণয়ন প্রভৃতি ক্ষেত্রে এ পদ্ধতির অকার্যকারিতা লক্ষণীয়।
১০. সামগ্রিক সীমাবদ্ধতা : কিছু কিছু সামাজিক ঘটনা বা আচরণ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে অনুসন্ধান করা প্রায় দুরূহ। যেমন— জনমত যাচাই, দৃষ্টিভঙ্গি পরিমাপ, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নির্ধারণ প্রভৃতি ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করা যায়। প্রাপ্ত ধারণা থেকে একথা বলা যায় যে, এ পদ্ধতিতে সুবিধা ও অসুবিধা বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও এতে সুবিধার পরিমাণই বেশি। ফলে সামাজিক গব েষণার এটাই সর্বাপেক্ষা গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃত।