অথবা, পরীক্ষণ পদ্ধতির প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ লিখ।
অথবা, পরীক্ষণ পদ্ধতির বিশেষ দিকসমূহ উল্লেখ কর।
অথবা, পরীক্ষণ পদ্ধতির কী কী বৈশিষ্ট্য রয়েছে?
অথবা, পরীক্ষণ পদ্ধতির বৈশিষ্ট্যগুলো উল্লেখ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : প্রতিটি বিজ্ঞানই তার বিষয়বস্তু আলোচনা করার জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকে।বিজ্ঞান হিসেবে মনোবিজ্ঞানও এর ব্যতিক্রম নয়। আচরণ সম্পর্কীয় বিজ্ঞান হিসেবে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর আচরণের বিভিন্ন দিক সম্বন্ধে উপাত্ত সংগ্রহের জন্য মনোবিজ্ঞান যে কয়টি পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকে, তার মধ্যে পরীক্ষণ পদ্ধতিটি অন্যতম।
পরীক্ষণ পদ্ধতির বৈশিষ্ট্যসমূহ : নিম্নে পরীক্ষণ পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো-
১. প্রায়োগিক : প্রায়োগিক বলতে বুঝায় যে, বিষয়বস্তু বা ঘটনার মধ্যে যেসব শব্দ বা শব্দসমূহ আছে, তা সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা। বিষয়বস্তুর সাথে সম্পর্কযুক্ত শব্দ বা শব্দসমূহের প্রায়োগিক সংজ্ঞা প্রদান পরীক্ষণ পদ্ধতির একটি বৈশিষ্ট্য।
২. চলের নিয়ন্ত্রণ : পরীক্ষণ পদ্ধতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল বিভিন্ন চলের নিয়ন্ত্রণ। পরিবেশের উপর পরীক্ষকের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে বলে পরীক্ষণ পদ্ধতিতে ব্যাপক সুবিধা পাওয়া যায়। পরীক্ষণ পদ্ধতিতে পরীক্ষণ উদ্দীপক বা অনির্ভরশীলচল নিয়ন্ত্রণ করেন।
৩. চলের পরিবর্তন : পরীক্ষণ পদ্ধতিতে পরীক্ষক তার ইচ্ছামতো চলের পরিবর্তন করতে পারেন।
৪. বস্তুনিষ্ঠতা : পরীক্ষণ পদ্ধতির আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল বস্তুনিষ্ঠতা। পরীক্ষণ পদ্ধতি একটি বস্তুনিষ্ঠ পদ্ধতি। এখানে ব্যক্তির পছন্দ অপছন্দ, ইচ্ছা অনিচ্ছার স্থান নেই। এ পদ্ধতিতে বস্তুনিষ্ঠভাবে অনুসন্ধানকার্য পরিচালনা করা হয়।
৫. নির্ভরযোগ্য : পরীক্ষণ পদ্ধতি অন্য কোন পদ্ধতির তুলনায় বেশি নির্ভরযোগ্য। পরিবেশের উপর নিয়ন্ত্রণ, চল পরিবর্তনের সুবিধা, বারবার পরীক্ষা গ্রহণ ইত্যাদি পরীক্ষণ পদ্ধতির ফলাফলকে অধিক নির্ভরযোগ্য করে তোলে।
৬. পুনরাবৃত্তি : পুনরাবৃত্তি পরীক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। এতে গবেষক তার পরীক্ষণের উদ্দীপক, প্রতিক্রিয়া ও পদ্ধতি সম্পর্কে বর্ণনা প্রকাশ করেন। এসব বর্ণনা অনুসারে পৃথিবীর যে কোন স্থানে গবেষণাটির পুনরাবৃত্তি করা যায়।
৭. সাধারণীকরণ : অল্প সংখ্যক দৃষ্টান্ত বিশ্লেষণ করে একটি সাধারণ সত্যে উপনীত হওয়াকে সাধারণীকরণ বলে।বিজ্ঞানী তার এ জ্ঞানের সাহায্যে অনুরূপ বিষয় সম্বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকেন।
৮. নির্ভুল ও মার্জিত তথ্য : পরীক্ষণের সাহায্যে প্রাপ্ত তথ্য নির্ভুল, মার্জিত বা সংক্ষিপ্ত হয়। প্রাকৃতিক পর্যবেক্ষণের সাহায্যে লব্ধ তথ্যে অনেক সময় অবান্তর ঘটনা স্থান পায়। কিন্তু পরীক্ষণে তার সম্ভাবনা থাকে না। তাছাড়া পরীক্ষণ
পদ্ধতিতে প্রাপ্ত তথ্য পরিমাণগতভাবে প্রকাশ করা সম্ভব হয়।
৯. বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ : মনোবিজ্ঞানে ব্যবহৃত অন্যান্য পদ্ধতির তুলনায় পরীক্ষণ পদ্ধতি অধিকতর বিজ্ঞান নির্ভর।বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির নিয়মকানুন পরীক্ষণ পদ্ধতিতে কঠোরভাবে অনুসরণ করা হয়।
১০. সম্বন্ধ নির্ণয় : পরীক্ষণ পদ্ধতির সাহায্যে মানসিক প্রক্রিয়া ও দেহগত প্রক্রিয়ার মধ্যে পরিমাণগত সম্বন্ধ নিৰ্ণয় করা যায়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, যে কোন পদ্ধতির প্রধান অবলম্বনই হল নির্ভরযোগ্য গবেষণা পদ্ধতি। পরীক্ষণ পদ্ধতি এ শর্ত পূরণ করে। সেজন্য পরীক্ষণ পদ্ধতিকে সকল পদ্ধতির শ্রেষ্ঠতম পদ্ধতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পরীক্ষণ পদ্ধতি
আবিষ্কারের ফলেই মনোবিজ্ঞান আজ পূর্ণ বৈজ্ঞানিক মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত।


