অথবা, পরীক্ষণ পদ্ধতির অপকারিতাগুলো লিখ।
অথবা, পরীক্ষণ পদ্ধতির অসুবিধাসমূহ উল্লেখ কর।
অথবা, পরীক্ষণ পদ্ধতির কী কী অসুবিধা রয়েছে?
উত্তর৷ ভূমিকা : প্রতিটি বিজ্ঞানই তার বিষয়বস্তু আলোচনা করার জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকে।বিজ্ঞান হিসেবে মনোবিজ্ঞানও এর ব্যতিক্রম নয়। আচরণ সম্পর্কীয় বিজ্ঞান হিসেবে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর আচরণের বিভিন্ন দিক সম্বন্ধে উপাত্ত সংগ্রহের জন্য মনোবিজ্ঞানে কতগুলো পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এগুলোর মধ্যে পরীক্ষণ পদ্ধতি অন্যতম।
পরীক্ষণ পদ্ধতির অসুবিধা : পরীক্ষণ পদ্ধতি সর্বোত্তম পদ্ধতি হলেও এর কতকগুলো অসুবিধা রয়েছে যা নিম্নরূপ :
১. গবেষণা বাইরের ঘটনার ক্ষেত্রে অপ্রযোজ্য : মনোবিজ্ঞানের গবেষণায় পরীক্ষণ পদ্ধতির ব্যবহার সীমিত।যেসব ঘটনা গবেষণাগারে সৃষ্টি করা যায় না, বরং এর জন্য অপেক্ষা করতে হয়, সেসব ক্ষেত্রে পরীক্ষণ পদ্ধতি অচল।যেমন- দাঙ্গাকারী জনতার আচরণ, মিছিলকারীর আচরণ ইত্যাদি।
২. সামাজিক অবস্থায় সৃষ্ট আচরণের ক্ষেত্রে অপ্রযোজ্য : সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে যেসব আচরণের সৃষ্টি হয়। যেমন- জনমত, মনোভাব, বিশ্বাস ইত্যাদি সেসব ক্ষেত্রে পরীক্ষণ পদ্ধতির ব্যবহার খুবই অসুবিধাজনক।
৩. যন্ত্রপাতির দুষ্প্রাপ্যতা : উপযুক্ত যন্ত্রপাতির দুষ্প্রাপ্যতার কারণে অনেক সময় গবেষককে নতুন যন্ত্রপাতি ও নকশা নির্মাণ করতে হয়, যা খুবই ব্যয়বহুল।
৪. কৃত্রিম পরিবেশ : পরীক্ষণ পদ্ধতির অন্যতম প্রধান ত্রুটি হল কৃত্রিম পরিবেশ। কৃত্রিম পরিবেশ সৃষ্টি করে এ পদ্ধতিতে পরীক্ষণ চালানো হয়। গবেষণাগারের নতুন এবং নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে এসে জীবের আচরণ স্বাভাবিক না হয়ে কৃত্রিম হতে পারে।
৫. নিয়মকানুনের কঠোরতা : পরীক্ষণ পদ্ধতির একটি বিশেষ অসুবিধা হল নিয়মকানুনের কঠোরতা। পরীক্ষককে বৈজ্ঞানিক নিয়মকানুন কঠোরভাবে মেনে চলতে হয়।
৬. মানসিক প্রক্রিয়ার চঞ্চলতা : কিছু কিছু মানসিক প্রক্রিয়া এত বেশি চঞ্চল যে, সেগুলো পরীক্ষণ করা দুরূহ হয়ে পড়ে।
৭. পরীক্ষণ পাত্রের অসহযোগিতা : এ পদ্ধতির আরেকটি অসুবিধা হল পরীক্ষণ পাত্র সবসময় পরীক্ষককে সহযোগিতা নাও করতে পারে।
৮. অনির্ভরযোগ্য ফলাফল : অনেক সময় পরীক্ষণের নকশা ত্রুটিপূর্ণ হতে পারে। ফলে নির্ভরযোগ্য ফলাফল পাওয়া যায় না।
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, কিছু অসুবিধা থাকলেও পরীক্ষণ পদ্ধতিটি মনোবিজ্ঞানের গবেষণায় একটি বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি। আধুনিক বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, সংখ্যাতত্ত্বের উন্নতিসাধন ও ব্যাপক প্রচলন এবং সর্বোপরি গবেষণার নতুন নতুন উপকরণ আবিষ্কারের ফলে পরীক্ষণ পদ্ধতির ব্যাপক প্রসার লাভ ঘটেছে।


