পরীক্ষণে প্রতিবেদন লেখার ধাপসমূহ বর্ণনা কর।

অথবা, একটি পরীক্ষণের প্রতিবেদন লিখনের ধাপসমূহ বর্ণনা কর।
অথবা, পরীক্ষণে প্রতিবেদন লেখার প্রক্রিয়াসমূহ আলোচনা কর।
অথবা, পরীক্ষণে কি কি প্রতিবেদন লেখা হয়? আলোচনা কর।
উত্তর।। ভূমিকা : গবেষক তাঁর পরিকল্পনা ও নকশা অনুযায়ী যখন পরীক্ষণ (গবেষণা) শেষ করেন, তখন উত্ত গবেষণার ফলাফল জনসম্মুখে প্রকাশ করা তাঁর একটি দায়িত্ব ও কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়। তাই পরীক্ষণ পরিচালনার পর তিনি প্রতিবেদন (Research report) লেখার জন্য প্রস্তুতি নেন। প্রতিবেদন লেখার সময়, তাকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যে, সমাজের কোন শ্রেণীর পাঠকরা তাঁর এ প্রতিবেদনটি পড়বে। সেসব পাঠকদের কথা বিবেচনা করে প্রতিবেদনের ভাষা ঠিক করতে হবে এর ভাষা হবে সহজ, সরল, দ্ব্যর্থহীন, যথাসম্ভব দুর্বোধ্য বক্তব্য পরিহার করা উচিত।
পরীক্ষণের প্রতিবেদন লিখার ধাপ : নিম্নে প্রতিবেদন লিখার ধাপসমূহ আলোচনার করা হলো।
1. শিরোনাম (Title page): Title Page এ তিনটি Elements বা উপাদান থাকতে হবে। যথা :
১. গবেষণার শিরোনাম বা Title,
২. গবেষকের নাম বা Authors name,
৩. যারা কাজ করছে; নিজের নাম অর্থাৎ, Running head
১. গবেষণার শিরোনাম বা Title : পরীক্ষণের একটি শিরোনাম থাকতে হবে। শিরোনামটি সংক্ষিপ্ত, চিত্তাকর্ষক এবং পরীক্ষণ সম্পর্কে সহজে ধারণা করা যাবে। Title ১২-১৫ শব্দের মধ্যে হওয়া বাঞ্ছনীয়। Title খাতার ১ম পৃষ্ঠায় লিখতে হবে। এখানে উল্লেখ্য যে, খাতার এ পৃষ্ঠায় কোন পৃষ্ঠা সংখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন পরবে না।
২. গবেষকের নাম বা Authors name : Authors Name খাতার মাঝখানে Title এর নিচে লিখতে হবে। এ পৃষ্ঠায় অর্থাৎ, শিরোনাম পৃষ্ঠায়ই গবেষকের নাম এবং সে বা তারা কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে সংযুক্ততার নাম ঠিকানা লিখতে হবে।
৩. যারা কাজ করেছে অর্থাৎ, নিজের নাম Running head: Title Page এর উপরের ডানদিকের কোনায় Running head লিখতে হবে, যা সংক্ষিপ্ত আকারে ৫০ শব্দের মধ্যে হবে। Title Page এর পর যদি প্রতিবেদনটি কোন সাময়িকীতে স্থাপনের জন্য লেখা হয়, তাহলে Abstract Page নতুন পৃষ্ঠায় বা সবার শেষে সারাংশ হিসেবে লিখতে হয়।Heading এ Abstract কথাটি লিখতে হয় এবং ডানদিকের উপরের কোনায় Page Number লিখতে হয়। প্রতিবেদনের শেষ পর্যন্ত তা ক্রমানুসারে দিয়ে যেতে হয়। এ পৃষ্ঠার নম্বর হবে ২, কারণ প্রথম পাতা ছিল Title Page. সারাংশের দৈর্ঘ্য 100-150 শব্দের মধ্যে হওয়া উচিত এবং তা এমন হওয়া উচিত যেন তা পরে সম্পূর্ণ পরীক্ষণটি সম্পর্কে ধারণা করা যায়। লক্ষ্য রাখতে হবে সারাংশের মধ্যে কোন নির্দেশনা থাকবে না। পরীক্ষণে ব্যবহৃত বিশেষ শব্দগুলোকে Keyword বলে। Abstract Page এ এগুলো লিখতে হয়।
2. মূল পাতা (Text page) : এ পাতা থেকে পুরো পরীক্ষণটির বিস্তারিত বর্ণনা লিখে যেতে হয়। এ পাতার নাম্বারগুলো পাতার উপরে ডান কোনায় দিতে হয় এবং reference এর আগ পর্যন্ত এভাবেই লিখে যেতে হয়। এ পাতার মধ্যে সে মূল অংশগুলো রয়েছে যেগুলোর শিরোনাম, Title Page এ বড় করে লিখতে হয় এবং সেগুলো বামদিকের কোনায় লিখতে হয়। অর্থাৎ, যদি আগে কোন অংশ লেখার পর এ পাতায় জায়গা থাকে, তবুও সে জায়গা বাদ দিয়ে নতুন পৃষ্ঠা থেকে শিরোনাম শুরু করতে হয়। সহশিরোনামের বেলায় এরকম বিশেষ কোন নিয়ম নেই।
১. ভূমিকা : যে বিষয়ের উপর গবেষণা করা হচ্ছে তা বিস্তারিতভাবে লিখতে হবে। এখানে গবেষণার সমস্যাদি উপস্থিত করা হবে এবং এ বিষয়ে বা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ইতঃপূর্বে যেসব গবেষণা হয়েছে, সেসব গবেষণার সারসংকলন করতে হবে। পূর্ববর্তী গবেষণার অসম্পূর্ণতা, ত্রুটি ইত্যাদি নির্দেশ করতে হবে এবং ক্রমশ বর্তমান গবেষণার যৌক্তিকতা উল্লেখ করতে হবে। পটভূমিকার শেষ পর্যায়ে বর্তমান গবেষণার সমস্যাটি সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করতে হবে। যেমন- একটি পরীক্ষণ
“নিরপেক্ষ ও আবেগীয় শব্দে প্রত্যক্ষণের প্রতিক্রিয়াকাল নির্ণয় কর।”
এক্ষেত্রে, নিরপেক্ষীয়, আবেগীয়, প্রতিক্রিয়াকাল ইত্যাদি শব্দগুলো সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে।
ক. ঐতিহাসিক পটভূমি : এটা Sub-heading বা উপশিরোনাম হবে। যে বিষয়ের উপর গবেষণা করা হচ্ছে, সে বিষয়ে পূর্বে যারা গবেষণা করেছেন, কি ফলাফল পেয়েছেন এগুলো উল্লেখ করতে হবে।
খ. সমস্যা : বর্তমান পরীক্ষণের সমস্যাটি কি তা এখানে লিখতে হবে। এটাও Sub-heading হবে।
গ. প্রকল্প : পরীক্ষক বর্তমান পরীক্ষণের সমস্যা, সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পরীক্ষণের ফলাফল পর্যালোচনা করে যদি প্রকল্প প্রণয়ন করেন তা এ ধাপে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করবেন। প্রকল্প সবসময় Future Tense এ লিখতে হয়।
‘ঘ. চল : বর্তমান পরীক্ষণের অনির্ভরশীল ও নির্ভরশীল চল কোনটি তা এখানে উল্লেখ করতে হয়।
3. পদ্ধতি ও কার্যক্রম (Method & Procedure) :
১. পরীক্ষণপাত্র : বর্তমান পরীক্ষণে ব্যবহৃত পরীক্ষণপাত্রের সংখ্যা উল্লেখ করতে হবে। কোন কোন পরীক্ষণপাত্রকে কোন কোন দলে ভাগ করা হয়েছে তাও উল্লেখ করতে হবে। অনেক বড় গবেষণায় Sample লেখা হয়। Sample এর ক্ষেত্রে কতজন নেওয়া হয়েছিল তা উল্লেখ করতে হয়। এছাড়াও পরীক্ষণ পাত্রের নাম, বয়স, লিঙ্গ, আর্থসামাজিক অবস্থা উল্লেখ করতে হয়।
২. যন্ত্রপাতি : পরীক্ষণে যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়েছে তা লিখতে হবে বিশদভাবে। পরীক্ষক যদি নতুন কোন যন্ত্র ব্যবহার করে থাকেন, তবে যন্ত্রটির ছবি প্রতিবেদনে প্রদর্শন করতে হবে। আর যদি যন্ত্রটি বহুল প্রচলিত হয়, তবে নাম উল্লেখ করলেই চলবে। যেমন- স্মৃতি যন্ত্র।
৩. পরীক্ষণের নকশা : প্রতিবেদনের এ অংশে পরীক্ষক পরীক্ষণের নকশার বর্ণনা এবং নকশাটি উপস্থাপন করবেন।তিনি কোন পদ্ধতিতে পরীক্ষণপাত্র নির্বাচন করলেন, কি পদ্ধতিতে দলে ভাগ করলেন, চলকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করলেন, এসবের বর্ণনা দিতে হয় এবং সবকিছুই Future Tense এ লিখতে হয়।
৪. পরীক্ষণ কার্যক্রম : এটি উপশিরোনাম হিসেবে লিখতে হবে। Subject কে গবেষণাগারে আনা এবং পরীক্ষণ শেষ পর্যায় পর্যন্ত যেসব কাজ করানো হয় এবং যে উপায়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়, তা এ ধাপের আওতাভুক্ত। এ অংশটুকু Past te… এ লিখতে হয়।
৫. ফলাফল : ফলাফল শিরোনাম হিসেবে লিখতে হয়। ফলাফল লেখার সময় বিশেষ মনোযোগ সহকারে লিখতে হয়, যাতে Common error গুলো না হয়। ফলাফল উপস্থাপনের উপর প্রতিবেদনের আকর্ষণ বৃদ্ধি পায়। সাধারণত ফলাফলকে দু’ভাবে উপস্থাপন করা যায়। যথা : ১. ছকের সাহায্যে, ২. গ্রাফের সাহায্যে।
৬. আলোচনা : এটা শিরোনাম হিসেবে লিখতে হবে। ফলাফলের বিস্তৃত বর্ণনা, বিশ্লেষণকে আলোচনা বুঝায়।আলোচনায় কোন সমস্যা নিয়ে কাজ করেছি, Subject কতজন ছিল, যন্ত্রপাতি কি ছিল, Hypothesis কি ছিল, Result কি Hypothesis কে সমর্থন করেছে বা না করলে কেন করে নি তার সম্ভাব্য কারণগুলো ব্যাখ্যা করতে হবে। পূর্বে ঐ বিষয়ে যারা গবেষণা করেছেন, তাদের নাম লিখতে হবে এবং তাদের ফলাফলের সাথে বর্তমান ফলাফলটি মিলে কি না, না মিললে কেন মিলে নি, যাদের সাথে মিলে নি তাদের নাম উল্লেখ করতে হবে।
৭. সারাংশ : এটা শিরোনাম আকারে হবে, খুব সংক্ষেপে সমগ্র পরীক্ষণের বিভিন্ন অংশের বর্ণনা বিশেষ করে ফলাফল ও আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সংক্ষিপ্ত অংশটির বর্ণনা করতে হবে। উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, সারসংক্ষেপ অংশটি প্রথমে লেখার জন্য যদি কোন নির্দেশ থাকে, তাহলে পরীক্ষক প্রতিবেদনের প্রথম পৃষ্ঠায় সারসংক্ষেপ লিখবেন কারণ উক্ত প্রতিবেদনটির পাঠক যদি সমাজের এসব শ্রেণীর লোক হন, যাদের পক্ষে সব প্রতিবেদনটি পাঠ করা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে প্রতিবেদনের প্রথম পৃষ্ঠায় সারসংক্ষেপ থাকলে তারা সহজেই তা পড়তে পারেন। তবে কোন প্রকার নির্দেশ না থাকলে প্রতিবেদনের শেষের দিকে সারসংক্ষেপ লেখা উত্তম। পরিশেষে পরীক্ষণের ফলাফলের প্রেক্ষিতে একটি উপসংহার দিবেন।
৩. গ্রন্থপঞ্জি : এটি সম্পূর্ণ একটি নতুন পৃষ্ঠায় শুরু করতে হবে। প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে যেসব গ্রন্থের সাহায্য নেওয়া হয়েছে, সেসব গ্রন্থের নাম লিখতে হবে। গ্রন্থপঞ্জি লেখার সময় বর্ণমালা অনুযায়ী সাজিয়ে লিখতে হবে। প্রথমে A দিয়ে কোন লেখকের নাম থাকলে A দিয়ে আর না থাকলে B দিয়ে লিখতে হবে। আর দু’জনের নাম একই বর্ণমালা দিয়ে হলে 2nd অংশের দিকে লক্ষ্য রেখে বর্ণমালা অনুযায়ী লিখতে হবে। প্রথমে লেখকের নাম, তারপর গ্রন্থের নাম, গ্রন্থের প্রকাশকাল লিখতে হয়। লেখকের নামের বেলায় আগে শেষের অংশ লিখতে হয়, তারপর বাদবাকি সবকিছু। যেমন-Rowshan Ali লিখতে হবে-
Ali, R. (1995), Heading Writing General এরপর underline করে দিতে হবে।
৪. পরিশিষ্ট : এটা সম্পূর্ণ আলাদা পৃষ্ঠায় Heading আকারে হবে। এ পর্যায়ে গ্রাফ, ডাটা শীট, পরীক্ষকের প্রতি নির্দেশনা, পরীক্ষকের মন্তব্য ইত্যাদি অতিরিক্ত কাগজে আটকে দিতে হবে। Research report লেখার ক্ষেত্রে উপরিউক্ত নিয়মনীতি মেনে চলতে হয়। অন্যথায়, সে Report লেখা অপূর্ণাঙ্গ থেকে যায়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, একজন গবেষককে একটি প্রতিবেদন চূড়ান্ত আকারে পেশ করার জন্য উপরিউক্ত ধাপসমূহ অতিক্রম করে আসতে হয়। এসব ধাপসমূহের কার্য যথাযথভাবে সম্পন্ন করার পরই একটি প্রতিবেদন প্রকাশের উপযোগী হয়। উক্ত ধাপসমূহ যদি যথাযথ ভাবে অনুসরণ করা হয় তাহলে প্রতিবেদনটি অসম্পুন্ন থেকে যাবে।