পরীক্ষণের নিয়ন্ত্রণ ব্যাখ্যা কর। পরীক্ষণের নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব লিখ?

অথবা, পরীক্ষণের নিয়ন্ত্রণ কি? পরীক্ষণে চলের নিয়ন্ত্রণ ব্যাখ্যা কর।
অথবা, পরীক্ষণে চলের নিয়ন্ত্রণ আলোচনা কর।
অথবা, পরীক্ষণে চলের নিয়ন্ত্রণ বর্ণনা কর?
অথবা, পরীক্ষণে নিয়ন্ত্রণ উল্লেখপূর্বক চলের নিয়ন্ত্রণ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : পরীক্ষণে চলের নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব অপরিসীম। পরীক্ষণে চলের নিয়ন্ত্রণ বলতে বুঝায় প্রয়োজন অনুসারে চলসমূহের পরিবর্তন সাধন। আমরা জানি যে, পরীক্ষণ হল নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে পর্যবেক্ষণ অর্থাৎ, পরীক্ষণ পরিচালনা করতে হলে পরিবেশ বা পরিস্থিতির উপর পরীক্ষকের নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে। এর অর্থ হল পরীক্ষক খুশিমতো পরীক্ষণের চলসমূহের সৃষ্টি করতে পারেন অথবা অনুপস্থিত রাখতে পারেন। পরীক্ষণ পদ্ধতির উদ্দেশ্য হল নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় একটি চলের সাথে অন্য একটি চলের সম্পর্ক নির্ণয়। অর্থাৎ, সকল অবাঞ্ছিত চলকে ধ্রুব রেখে একটি চল এর প্রভাবে মানুষ বা প্রাণীর আচরণ বা নির্ভরশীল চলের অনুধ্যান করাই হল পরীক্ষণের উদ্দেশ্য।
পরীক্ষণের নিয়ন্ত্রণ : কোন পরীক্ষণে বাহ্যিক চলসমূহকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সর্বাগ্রে জানা প্রয়োজন কোন চল নির্ভরশীল চলের উপর প্রভাব বিস্তার করে। পরীক্ষণে নিয়ন্ত্রণ বলতে বুঝায় নিরপেক্ষ চলের সাথে নির্ভরশীল চলের সম্পর্ক সুস্পষ্টভাবে অনুধাবন করার উদ্দেশ্যে সবরকমের চলকে ধ্রুব রেখে পরীক্ষণ কার্য পরিচালনা করা। অবাঞ্ছিত চলকে ধ্রুব অর্থাৎ, পরীক্ষক যখন কোন ব্যক্তিবিশেষের আচরণের উপর কোন একটি চলের প্রভাব দেখতে চান, তখন পরীক্ষণের পরিবেশটা এমন হওয়া উচিত যে ঐ মুহূর্তে নিরপেক্ষ চল ছাড়া আর কোন চল ব্যক্তির করণীয় পরীক্ষণীয় আচরণের উপর প্রভাব বিস্তার না করতে পারে। তাই বাস্তবিকপক্ষে পরীক্ষণের নিয়ন্ত্রণ বলতে চলের নিয়ন্ত্রণকেই বুঝায়। আবার পরীক্ষক যেন ইচ্ছামতো অনির্ভরশীল বা নিরপেক্ষ চল প্রয়োগ করতে পারেন তার মাত্রা পরিবর্তন করতে এবং প্রয়োজনে এ চলটি প্রত্যাহার করতে পারেন, তারও ব্যবস্থা থাকতে হবে। আর এটিকেই বলা হয় পরীক্ষণের নিয়ন্ত্রণ। যেসব বাহ্যিক চলের প্রভাব থেকে অনির্ভরশীল চলকে অর্থাৎ, পর্যবেক্ষণীয় আচরণকে মুক্ত রাখা হয়, সেগুলোকে বলা হয় নিয়ন্ত্রিত চল।
পরীক্ষণের নিয়ন্ত্রণ একটি উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা হল : যেমন- একজন পরীক্ষক দেখতে চান যে,পুরস্কৃতকরণের ফলে শিক্ষণের পরিমাণ বাড়ে কি না। এ বিষয়টি তিনি পরীক্ষণ করে দেখার আগে একটি অনুমান করলেন যে, পুরস্কৃত করলে শিক্ষণের পরিমাণ বাড়ে। লক্ষণীয় যে, এখানে পরীক্ষক শিক্ষণের পরিমাণের উপর পুরস্কৃতকরণের প্রভাব দেখতে চাইছেন। অর্থাৎ, পুরস্কৃতকরণ হল অনির্ভরশীল চল, শিক্ষণের পরিমাণ হল নির্ভরশীল চল।
প্রখ্যাত মনোবিজ্ঞানী McGuigan নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেছেন, “The word control implies that the experimental has a certain power over the conditions of his experiment. He is able to manipulate variables in an effort to arrive at a sound conclusion.”
এক্ষেত্রে পরীক্ষক সমান মেধাসম্পন্ন দু’দল ছাত্র নিয়ে প্রত্যেক দলকে একটি দশ লাইনের কবিতা মুখস্থ করতে দেওয়া হল। এরপর বলা হল একদল ছাত্রকে পুরস্কৃত করা হবে আর অন্য দলকে পুরস্কৃত করা হবে না। এ পার্থক্যটুকু ছাড়া দু’দলের অনুশীলনের ক্ষেত্রে যাবতীয় সকল উপাদান, কক্ষের তাপমাত্রা, আলোর উজ্জ্বলতা ইত্যাদি একই রকম হল।এখন নির্দিষ্ট সময় অনুশীলনের পর যদি দু’দলকে শিক্ষণের পরিমাণের মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় তবে তার জন্য অবশ্যই পুরস্কৃতকরণকে দায়ী করা যাবে।
উপরিউক্ত উদাহরণে দেখা যাচ্ছে যে, পরীক্ষণ পরিস্থিতির উপর বা পরীক্ষণের উপর পরীক্ষকের নানারকম নিয়ন্ত্রণ আছে। যেমন- তিনি ইচ্ছা করলে পুরস্কৃত করতে পারেন আবার তা প্রত্যাহার করতে পারেন। আবার দু’টি দল (পরীক্ষণ দল ও নিয়ন্ত্রিত দল) নির্বাচন করার সময়ও পরীক্ষক কিছু চল নিয়ন্ত্রণ করেছেন, যেন দু’টি দল সর্বাত্মকভাবে সমান হয় বা সবদিক দিয়ে সমান হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা হয়েছিল। অর্থাৎ, দু’দল ছাত্রের বয়স, বুদ্ধি, শিক্ষাগত যোগ্যতা, সামর্থ্য, লিঙ্গ সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা যথাসম্ভব সমতুল্য রাখা হয়। এছাড়া দু’টি দলকে একই অর্থহীন শব্দাংশের তালিকা মুখস্থ করতে দেওয়া হয়েছিল। পরীক্ষণ পরিচালনার সময় এ দলের অনুশীলনের স্থান এবং কক্ষও একই রকম ছিল।
এমনিভাবে শিক্ষণে ব্যবহৃত বিস্তারকারী সবরকম চলকে দু’পর্যায়ে একই রকম রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল। সুতরাং,কনো পরীক্ষণে এমনিভাবে বিভিন্ন প্রকার চলের নিয়ন্ত্রণকেই পরীক্ষণে নিয়ন্ত্রণ বলা হয়।
পরীক্ষণে নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব : পরীক্ষণের ফলাফল পরীক্ষণের নিয়ন্ত্রণের উপর নির্ভর করে। তাই পরীক্ষণে নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব অপরিসীম। পরীক্ষণে নিয়ন্ত্রণ অত্যাবশ্যকীয় এজন্য যে, নিয়ন্ত্রণ না থাকলে পরীক্ষক বুঝতে পারে না যে,অনির্ভরশীল চলের প্রভাবেই নির্ভরশীল চলটির মধ্যেই পরিবর্তন ঘটছে না, অন্য কোন চলের প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করা হয় নি তার কারণে এ পরিবর্তন ঘটেছে, যার ফলে পরীক্ষণের ফলাফল ত্রুটিপূর্ণ হবে।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, যে কোন পরীক্ষণ করতে হলে চলের নিয়ন্ত্রণ করা আবশ্যক। অর্থাৎ, নিয়ন্ত্রণ ছাড়া কোন পরীক্ষণই কোন সময় সম্ভব হবে না। সুতরাং, দেখা যায় যে, পরীক্ষণ মনোবিজ্ঞানের সঠিক ফলাফল তথা অনির্ভরশীল ও নির্ভরশীল চলের সম্পর্ক নির্ণয় করার জন্য নিয়ন্ত্রণ আবশ্যক।