অথবা, পরিসংখ্যানের অপব্যবহার তুলে ধর।
অথবা, পরিসংখ্যানের অপব্যবহার উল্লেখ কর।
অথবা, পরিসংখ্যানের অপব্যবহার সম্পর্কে ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : পরিসংখ্যানের অন্যতম সীমাবদ্ধতা হচ্ছে এর ব্যবহারকারীকে পরিসংখ্যান বিষয়ের উপর দক্ষ, অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এবং বিষয়টির গতি ও প্রকৃতি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। কারণ পরিসংখ্যান পদ্ধতিসমূহ যথাযথভাবে প্রয়োগ না করতে পারলে অথবা পদ্ধতি প্রয়োগের ফলে প্রাপ্ত ফলাফলের সঠিক ব্যাখ্যাকরণ না হলে উদ্দেশ্য বা অনুসন্ধান সম্পর্কিত মারাত্মক বিভ্রান্তি ঘটতে পারে ।
পরিসংখ্যানের অপব্যবহার : পরিসংখ্যানের যথাযথ ধারণা ব্যতীত কোন ব্যবহারকারী যদি পরিসংখ্যানকে ব্যবহার করেন তাহলে নিম্নলিখিত অপব্যবহারগুলো সংঘটিত হতে পারে । যথা :
১. পরিসংখ্যানের অন্যতম প্রধান কাজগুলোর মধ্যে হচ্ছে নমুনা উপাত্ত দ্বারা তথ্যবিশ্ব সম্পর্কে মন্তব্য করা এবং কোন অনুসন্ধান সম্বলিত অতীত ও বর্তমান তথ্য বিশ্লেষণ করে অনুসন্ধানটির যথাযথ মূল্যায়ন এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ধারণা প্রদান করা । এক্ষেত্রে নমুনার আকার এবং বিশ্লেষণের প্রাপ্ত ফলাফল ব্যাখ্যাকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে পরিসংখ্যানের যথেষ্ট জ্ঞান ব্যতীত দু’ধরনের সমস্যা হতে পারে ।
ক. তথ্যবিশ্বের বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করে না এমন অনেক তথ্য সংগৃহীত হতে পারে ।
খ. নমুনার মাত্রা সঠিক মাত্রার না হয়ে অল্পসংখ্যক হতে পারে ।
উক্ত সমস্যা দুটির কারণে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করে ভুল সিদ্ধান্ত আসতে পারে, যা পুরো বিষয়টিকে বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলতে পারে ।
২. তথ্যবিশ্বের যেসব বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে মন্তব্য করতে হবে তাদেরকে সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করতে হবে। পরিসংখ্যানের সংঘবদ্ধ জ্ঞান ব্যতীত বৈশিষ্ট্যগুলোকে যথাযথভাবে সংজ্ঞায়িত করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে পরিসংখ্যানের অপব্যবহার হতে পারে। পরিসংখ্যান পদ্ধতি ব্যবহার করে দুই বা ততোধিক তথ্যবিশ্বের কোন বিশেষ বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে তুলনামূলক পর্যালোচনা করা যায়। এছাড়াও তথ্য বিশ্বের কোন একটি বৈশিষ্ট্য অন্য অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। এক্ষেত্রে বৈশিষ্ট্যগুলোকে সঠিকভাবে সংজ্ঞায়িত করাটা জরুরি। কারণ সংজ্ঞার উপর নির্ভর করবে কোন ধরনের বিশ্লেষণমূলক পরিসংখ্যান পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে। যেমন- শ্রমিকের দক্ষতা, যোগ্যতার উপর নির্ভর করে কি না যাচাই করতে হলে কোন ধরনের পরিসংখ্যান পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে তা পর্যাপ্ত পরিসংখ্যান জ্ঞানের উপর নির্ভরশীল। এক্ষেত্রে অনেকে মনে করতে পারেন যেহেতু দক্ষতা শিক্ষাগত যোগ্যতার উপর নির্ভরশীল, স্বাভাবিকভাবে সংশ্লেষণ বিশ্লেষণ (Correlation analysis) ব্যবহার করে যাচাই করতে পারেন । এটা ভুল পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে। এক্ষেত্রে সঠিক পদ্ধতি হবে কাইবর্গ যাচাই । কারণ চলক দুটি উভয়ই গুণগত চলক এবং পুঁজির সাথে বিনিয়োগের সম্পর্কের মাত্রা যাচাই করতে সংশ্লেষণ এবং নির্ভরণ বিশ্লেষণ প্রয়োগ করা হয় ।
৩. তথ্যগুলোর এককের সঠিক সংজ্ঞায়িতকরণ হতে হবে। তা না হলে বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফল ত্রুটিপূর্ণ হতে পারে । এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়ানোর সাথে সাথে ফলাফলটি সম্পর্কে অবিশ্বাস জন্ম দিবে। তথ্যাদির চিত্র অঙ্কন করলে একেকজন একেক রকম ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে পারে, যা জনমনে পরিসংখ্যান সম্পর্কে অবিশ্বাস জন্ম দিবে ।
৪. নমুনায়নের মাধ্যমে তথ্যবিশ্ব সম্পর্কে মন্তব্য করা পরিসংখ্যানের কার্যকারিতাগুলোর অন্যতম কাজ। এ কারণে তথ্যবিশ্বকেও পরিপূর্ণভাবে সংজ্ঞায়িত করতে না পারলে ফলাফলে বিভ্রান্তি জন্ম দিতে পারে, তা ব্যবহারও এক ধরনের অপব্যবহার। যেমন- ঢাকার কাঁচাবাজারে বিভিন্ন সবৃজির খুচরা মূল্যকে সারা বাংলাদেশের সবৃ
জির খুচরা মূল্য বললে প্রকৃতপক্ষে তা সঠিক মন্তব্য হবে না। এটাও এক ধরনের পরিসংখ্যানের অপব্যবহার। আবার অনেক সময়ন উদ্দেশ্যমূলকভাবে পরিসংখ্যানের অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যাবলি ইচ্ছামতো পরিবর্তন করে প্রাপ্ত ফলাফলের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাও পরিসংখ্যানের অপব্যবহারের সামিল।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে একথা বলা যায় যে, পরিসংখ্যানের উপরে উল্লেখিত অপব্যবহারের কারণে অনেকে পরিসংখ্যানকে অবিশ্বাস ও মিথ্যা হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। এ কারণে সম্পূর্ণ দক্ষ ও অভিজ্ঞ পরিসংখ্যানবিদ এবং সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে পরিসংখ্যানের অপব্যবহার দূর করা সম্ভব ।