পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক আলোচনা কর।

পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে আœসম্পর্ক আলোচনা কর।
অথবা, পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানগুলো পরস্পর সম্পর্কযুক্ত? ব্যাখ্যা কর।
অথবা, পরিবেশের বিভিন্ন নিয়ামকের মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা কর।
অথবা, পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যকার সম্পর্ক সম্পর্কে তুমি যা জান উল্লেখ কর। উত্তর৷ ভূমিকা : পৃথিবী সৃষ্টির ঊষালগ্ন থেকে বর্তমান পর্যন্ত পরিবেশ নামক প্রত্যয়টির সাথে মানুষ তথা গোটা
প্রাণিজগতের সম্পর্ক অতি নিবিড়, চিরন্তন ও অবিচ্ছেদ্য। পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের স্বাভাবিক ও ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানের উপর প্রাণিজগতের অস্তিত্ব ও স্থায়িত্ব বহুলাংশে নির্ভরশীল। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরিবেশের উপাদান হলো একে অপরের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত এবং কোন কোন ক্ষেত্রে এক উপাদান অন্য উপাদানের উপর অস্তিত্বগতভাবে
নির্ভরশীল। আর এ সামগ্রিক পরিবেশ ব্যবস্থা প্রাণিজগতকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে। এ প্রসঙ্গে অনাদী কুমার মহাপাত্র তাঁর ‘বিষয় সমাজতত্ত্ব’ গ্রন্থে বলেছেন, “Any kind of living thing dependents on his or her environment and he or she has a good relationship with environment in the view of interactions.”
পরিবেশের উপাদানসমূহের মধ্যে পারস্পরিক আন্তঃসম্পর্ক : পরিবেশের প্রত্যেকটি উপাদানের নিজস্ব স্বকীয়তা বা বৈশিষ্ট্য এবং Discipline থাকা সত্ত্বেও প্রত্যেকটি উপাদান একে অন্যের সাথে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে
সম্পর্কিত। তাই সামগ্রিকভাবে একে অন্যকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সাহায্য করার মাধ্যমে একত্রে এবং অভিন্নভাবে উপাদানগুলো তাদের কাজ করে যাচ্ছে। পরিবেশের উপাদানগুলোর আন্তঃসম্পর্ক বিশ্লেষণ করতে গেলে নিম্নোক্ত দিক
থেকে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে । যথা :
১. বৈচিত্রমুখী উপাদানের ঐক্যবদ্ধতা (Varieties differeciation and unity),
২. পরিবেশের উপাদানগুলো একে অপরের প্রতি নির্ভরশীল (Existent dependence of the elements),
৩. পরিবেশের উপাদানের একটি পরিবর্তন হলে অন্যটির উপর প্রভাব পড়ে ( Change of anyone element influence the change another one element) 1.
এগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. বৈচিত্রমুখী উপাদানের ঐক্যবদ্ধতা (Varieties differenciation and unity) : জীব বা জড় প্রতিটি উপাদানই বৈচিত্র্যের দিক থেকে ভিন্ন হলেও এরা একে অন্যের সাথে ঐক্যসূত্রে আবদ্ধ। যেমন- পানির কথা বলা যায় ।
পানি দু’টি উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত। তারা হলো অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন । এ দু’টির নির্দিষ্ট আনুপাতিক সংমিশ্রণে পানি তৈরি ।
এছাড়া সালফিউরিক এসিডের (SO4) ক্ষেত্রে S ও O এর সমন্বয় ঘটে। কাজেই দেখা যাচ্ছে যে, পরিবেশের উপাদানগুলো বৈশিষ্ট্যগত ও অবস্থানের দিক থেকে বিভিন্ন হলেও টিকে থাকার প্রয়োজনে এরা ঐক্যবদ্ধ। এদিক থেকে উপাদানগুলোর মধ্যে সম্পর্ক বিদ্যমান।
২. পরিবেশের উপাদানগুলো একে অপরের প্রতি নির্ভরশীল (Existent dependence of the elements) :
পরিবেশের প্রতিটি উপাদান অস্তিত্বগতভাবে অন্য উপাদানের উপর নির্ভরশীল। এ সকল উপাদান মূলত চক্রাকারে
আবর্তিত হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে গাছপালা বেঁচে থাকে আবার
প্রাণীকূল গাছপালা থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে জীবন ধারণ করে এবং প্রাণীর নিঃশ্বাসের মাধ্যমে কার্বন ডাই-অক্সাইড
পুনরায় বাতাসে মিশে যাচ্ছে। এভাবে প্রতিটি উপাদান একে অপরের উপর নির্ভরশীল।
৩. পরাগায়ন : উদ্ভিদ পরাগায়নের মাধ্যম হিসেবে বিভিন্ন ধরনের কীটপতঙ্গ এবং বাতাসের উপর নির্ভরশীল যা তার
বংশবৃদ্ধি তথা অস্তিত্বের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
Food Webs :
সূর্য
শিয়াল
খরগোশ

বাজপাখি
চড়ুই
মানুষ
গরু
উৎপাদক
এ চিত্র থেকে দেখা যাচ্ছে যে, পরিবেশের উপাদানগুলো অস্তিত্বগতভাবে একটি আরেকটির উপর নির্ভরশীল।Food Webs এর চিত্রটিকে একটি Level হিসেবে বিবেচনা করলে বিষয়টি দাঁড়ায় নিম্নরূপ :
উৎপাদক → তৃণভোজী → মাংসাসী → সর্বভুক
কাজেই দেখা যাচ্ছে যে, পরিবেশের প্রত্যেকটি উপাদানই একটি অন্যটির উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল ।
৩. পরিবেশের উপাদানের একটি পরিবর্তন হলে অন্যটির উপর প্রভাব পড়ে (Change of any one-element influence the change of other one element) : পরিবেশের কোন একটি উপাদানের পরিবর্তন তথা তারতম্য ঘটলে তার প্রভাবে অন্য উপাদানটিও ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা বলতে
পারি, যেমন— বন্যা, খুরা, জলোচ্ছ্বাস, গ্রিন হাউস এফেক্ট প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগসমূহ পরিবেশের কোন উপাদানের ঘটিত বা বৃদ্ধির ফলে সুসংগঠিত হয়। তাছাড়া বিষয়টিকে অন্যভাবেও ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। যেমন- কোন কারণে যদি কোন নির্দিষ্ট অঞ্চলে কোন
প্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, তবে ঐ প্রাণীর সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রাণীর সংখ্যাও বেড়ে যায়। ধরা যাক, একটি বন্য ভূমিতে
বাঘ, হরিণ, গরু, শুকর প্রভৃতি বাস করে। হরিণ ও শুকর বাঘের খাদ্য। কোন কারণে যদি শুকরের পরিণত বৃদ্ধি পায় তবে বাঘ
বেশি পরিমাণে খাদ্য পায় । ফলে বাঘের সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়। আবার শুকরের সংখ্যা কমে গেলে বাঘের সংখ্যাও কমে যায় ।
এমনিভাবে আমাদের পরিবেশের চারপাশের বিষয় হতে প্রমাণিত হয় যে, পরিবেশের একটি উপাদানের পরিবর্তন
হলে তার প্রভাব অন্য উপাদানের উপর প্রভাব বিস্তার করে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার দ্বারা এটাই প্রতীয়মান হয় যে, পরিবেশের প্রত্যেকটি উপাদান একে অন্যের
সাথে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত যাদের কোন অবস্থাতেই বিচ্ছিন্নভাবে দেখা সম্ভব নয়। কোন কোন উপাদানের মধ্যে সম্পর্ক
এত নিবিড় যে একটিকে ছাড়া অন্যটি কল্পনা করা যায় না।