পরিবার সম্পর্কে মর্গানের তত্ত্বটি ব্যাখ্যা কর।

পরিবার সম্পর্কে মর্গানের তত্ত্বটি ব্যাখ্যা কর।
অথবা, পরিবারের উৎপত্তিবিষয়ক মর্গানের মতবাদ আলোচনা কর।
অথবা, মর্গানের পরিবার সম্পর্কিত তত্ত্বটি ব্যাখ্যা কর।
অথবা, পরিবার সম্পর্কিত মরগানের ঐতিহাসিক তত্ত্বটি আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : পরিবার হলো সবচেয়ে মৌলিক ও প্রাচীন সামাজিক সংগঠন। মানুষকে যেমন সমাজ ছাড়া কল্পনা করা যায় না, তেমনি সমাজকে পরিবার ছাড়া কল্পনা করা যায় না। বলা হয়ে থাকে যে, সমাজের সবচেয়ে মৌলিক‌ইউনিট হলো পরিবার। পরিবারের বাইরে সামাজিক জীবনযাপন মানুষের পক্ষে সম্ভব হয় না।‌ মর্গানের পরিবার সম্পর্কিত মতবাদ : মর্গান ১৮৬৮ সালে একটি গ্রন্থ প্রণয়ন করেন, যার নাম “সিস্টেম
অব কনস্যাঙ্গুইনিটি অ্যান্ড এফিনিটি অব দ্যা হিউম্যান ফ্যামিলি” গ্রন্থটি বুদ্ধিজীবী মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। এ‌গ্রন্থে তিনি বিবর্তনবাদী ধারায় জাতিগোষ্ঠীর যে পরিবর্তিত রূপ তা সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলতে দক্ষতার পরিচয় দেন।‌, ১৮৭৭ সালে মর্গানের আলোড়ন সৃষ্টিকারী ‘Ancient Society’ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। এ গ্রন্থে তিনি মানবসমাজের
বিবর্তনকে তিনটি শাখায় বিভক্ত করেছেন। যথা : ১. আদিম সমাজ, ২. বর্বর যুগ ও ৩. সভ্যতার যুগ।‌ বিবর্তনের ধারায় তিনি পাঁচ ধরনের পরিবারের কথা বলেছেন। এদের একটির সাথে অন্যটির সামঞ্জস্য বা কোনো প্রকার মিল নেই। এ পরিবারগুলো প্রতিটিই স্বতন্ত্র। নিম্নে তা বর্ণিত হলো :
১. স্বগোত্রীয় ভাইবোনের বিবাহভিত্তিক পরিবার : মর্গানের মতে, “এ ধরনের পরিবার প্রাচীন বা আদিম প্রকৃতির । বর্তমানে এ ধরনের পরিবার উপজাতীয়দের মধ্যে খুঁজে পাওয়াও দুষ্কর। বর্বর যুগে এ ধরনের পরিবারের প্রমাণ পাওয়া যায়। এ ধরনের পরিবার গঠিত হতো স্বগোত্রীয় ভাই ও বোনের মধ্যে বিবাহের মাধ্যমে। এটি করা হতো বংশের বিশুদ্ধতা
রক্ষার জন্য। এ ধরনের পরিবার গঠনের মূল উদ্দেশ্য ছিল জ্ঞাতি সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী করা।”
২. দলগত বিবাহভিত্তিক পরিবার : মানবসমাজের অগ্রগতির উন্নত সংস্করণ হলো দলগত বিবাহভিত্তিক পরিবার। আপন ভাইবোনের বিবাহের ফলে যেসব শারীরিক ও আত্মিক অসুবিধা দেখা দেয়, সে সম্পর্কে সচেতনতা থেকে এ ধরনের্যবিবাহের উৎপত্তি বলে মর্গান মনে করেন। এ ধরনের পরিবার ব্যবস্থায় দুই বা ততোধিক ভাই এবং দুই বা ততোধিক বোন একসাথে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ভিত্তিতে বসবাস করে।১৯৬
G
৩. জোড়া বিয়ে বা সীনডিয়াসমিয়ান পরিবার : দলগত বিয়ের পর যে ধরনের বিয়ের প্রচলন হয় তা হলো জোড়া বিয়ে এবং এ ধরনের বিয়ের উপর ভিত্তি করে যে পরিবার গড়ে উঠে তা হলো জোড়া বিয়ে পরিবার বা সীনডিয়াসমিয়ান ধরনের পরিবার ব্যবস্থায় কয়েক জোড়া পরিবার এক সাথে বসবাস করতো। তবে তারা শুধু স্বামী বা স্ত্রী নয়, তাদের
সন্তানদের অবিভাবকও। এখানে সাধারণত স্বামী বা স্ত্রীর মায়েরা বিয়ের পাত্রপাত্রী ঠিক করতো। এমনকি এ ধরনের বর কনের মধ্যে বিয়ের অনুষ্ঠানেই প্রথম দেখা হতো।
৪. পিতৃপ্রধান পরিবার : প্রাচীন সেমেটিক গোষ্ঠীর মধ্যে পিতৃপ্রধান পরিবারের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। এ ধরনের পরিবারের উদ্ভব বলা চলে বর্বর যুগের শেষের দিকে এবং সভ্যতার পদার্পণের পরও তা অব্যাহত থাকে। এ পরিবারের প্রধান ছিল পুরুষ। পুরুষ তার ইচ্ছানুসারে একাধিক স্ত্রী রাখতে পারত। তবে পিতৃপ্রধান পরিবারের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো
পুরুষ ছিল পরিবারের মূল কর্তা যেখানে স্ত্রীর কোনো কর্তৃত্ব ছিল না। এখানে পুরুষ বা পিতা তার অনুগত ব্যক্তিদের প্রতিও
কর্তৃত্ব করতো। এখানে পিতাই ছিল সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।
৫. এক বিয়ে পরিবার : এক বিয়ে পরিবার গড়ে উঠে এক স্বামী ও এক স্ত্রী নিয়ে এবং তাদের দ্বারা গড়ে উঠে পারিবারিক জীবন। এ ধরনের পরিবারে কিছু চাকর চাকরানি থাকলেও তারা দম্পতির কর্তৃত্বের অধীন থাকে। প্রাচীন হিব্রু, ল্যাটিন ও গ্রিক সমাজে এ ধরনের পরিবারের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। মর্গান মনে করেন, “বর্বর যুগের শেষ পর্যায়ে এ ধরনের
এক বিয়ে পরিবার স্থায়ীরূপ লাভ করে ।” তিনি আরো বলেছেন, আগে যে জোড়া বিয়ে পরিবার গড়ে উঠেছিল, সেখানেই এ্যধরনের পরিবারের বিশেষ রূপ গড়ে উঠেছিল। এ সময়ে সমাজে বিভিন্ন সংস্কার প্রচলন ছিল। বিশেষ করে এ সময়ে স্ত্রীর সতীত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখত। ফলে স্ত্রীদের পৃথক আবাস ও পর্দার ব্যবস্থা রাখা হতো। কিন্তু এর বিপরীতে
পুরুষরা নিজেদের যৌন স্বাধীনতা বজায় রেখেছিল।
উপসংহার : পরিশেষে বলা চলে যে, পরিবার হলো স্বামী, স্ত্রী এবং সন্তানসন্ততি দ্বারা গঠিত একটি জৈবিক সামাজিক
একক। মানবসভ্যতার কোনো বিশেষ স্তরে পরিবারের উৎপত্তি হয়নি।
এরূপ বলা চলে না। মূলত মানুষের জৈবিক চাহিদা, অর্থনৈতিক ও মানসিক নিরাপত্তা, বংশরক্ষা প্রভৃতির কারণে পরিবার গঠিত হয়েছে।
আদিম সমাজে কোন পরিবার ছিল না