পরমসত্তার অস্তিত্বের প্রমাণ সম্পর্কে আল-ফারাবির মতবাদ সংক্ষেপে লিখ।

অথবা, পরমসত্তার অস্তিত্বের প্রমাণগুলো লিখ।
অথবা, আল-ফারাবি কিভাবে পরমসত্তার অস্তিত্ব প্রমাণ করেন?
অথবা, পরমসত্তার অস্তিত্বের প্রমাণ সম্পর্কে আল ফারাবির যুক্তিগুলো সংক্ষেপে তুলে ধর।
অথবা, পরমসত্তার অস্তিত্বের ক্ষেত্রে আল ফারাবি যেসব প্রমাণ দিয়েছেন তা সংক্ষেপে উপস্থাপন কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
মুসলিম দর্শন সম্পর্কে যে কয়জন দার্শনিক আলোচনা করেছেন তাদের মধ্যে আল-ফারাবি ছিলেন অন্যতম। তিনি পরমসত্তাকে বলেছেন আল্লাহ যিনি জগতের সমুদয় বস্তুর কারণের ভিত্তি। তিনি দেশ ও কালের দ্বারা সীমিত নন। তিনি সর্বত্র বিরাজমান। তাকে সরাসরি জানা যায় না। জাগতিক বস্তুর জ্ঞানের মধ্যে তাঁকে জানার চেষ্টা করা হয়।
পরমসত্তার অস্তিত্ত্ব প্রমাণ : পরমসত্তা বা আল্লাহ্র পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান মানব বুদ্ধির সাধ্যাতীত। কারণ বুদ্ধির শক্তি নানাভাবে সীমিত। আল-ফারাবির মতে, পরমসত্তাকে যেগা বুদ্ধির মাধ্যমে উপলব্ধি করা সম্ভব নয় তেমনি দুর্বল চিন্তাশক্তি ও ক্ষীণ দৃষ্টিশক্তিতে উপলব্ধি করাও সম্ভব নয়। তবে বুদ্ধির মাধ্যমে যদিও আল্লাহকে জানা যায় না তবুও ঐশী জ্ঞান যে
কোন সার্থক দর্শনের লক্ষ্য। আল-ফারাবি পরমসত্তার অস্তিত্ব প্রমাণে কতকগুলো যুক্তি দিয়েছেন। যথা :
১. কারণ বিষয়ক প্রমাণ এবং
২. গতি বিষয়ক প্রমাণ।
১. কারণ বিষয়ক প্রমাণ : আল ফারাবি বলেন, আবশ্যিক সত্তা এবং সম্ভাব্য সত্তার মাঝখানে তৃতীয় কোন সত্তা নেই। তিনি বলেন, প্রত্যেক সম্ভাব্য সত্তার অস্তিত্ব একটি কারণের নির্দেশ করে, যে কারণ থেকে সেই সত্তা উদ্ভূত হয়। অর্থাৎ সম্ভাব্য সত্তার অস্তিত্ব কোন না কোন কারণের উপর নির্ভরশীল। কারণ ব্যতীত সত্তা থাকতে পারে না। এ কারণটি আবার একটি পূর্ববর্তী কারণের পরিণতি। এভাবে পশ্চাদগতিতে চলতে চলতে আমরা আদি কারণে উপনীত হই, যে কারণের পরে আর অগ্রসর হওয়া যায় না। সুতরাং নৈরায়িক বিশ্লেষণে দেখা যায় কারণ শৃঙ্খলের শেষ প্রান্তে আমরা নিশ্চয়াত্মক সত্তার অস্তিত্ব অনুমান করতে বাধ্য হই। কেননা এ শৃঙ্খল সীমাহীনভাবে চলতে পারে না। আল-ফারাবির মতে, এ নিশ্চয়াত্মক সত্তাই হলো পরমসত্তা বা আল্লাহ।
২. গতি বিষয়ক প্রমাণ : আল-ফারাবি আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য কারণ বিষয়ক প্রমাণ ছাড়াও গতি বিষয়ক প্রমাণের কথা বলেছেন। তিনি বলেন, পৃথিবী গতিশীল বস্তুতে ভরপুর। প্রত্যেক গতিশীল বস্তুর গতি যেমন চালিত হয় এক চালক বস্তু দ্বারা, তেমনি সেই চালক বস্তুও চালিত হয় অপর এক চালক বস্তুর দ্বারা। চালিত ও চালক বস্তুর এ অনুক্রম
অসীমভাবে চলতে পারে না। এটিকে এড়ানোর জন্য শেষ পর্যন্ত আমাদের এমন এক চালকের কথা ভাবতে হয়, যিনি সবকিছুর চালক হয়েও নিজে অচালিত। আল-ফারাবির মতে, এ অচালিত চালকই বিশ্বজগতের স্রষ্টা অর্থাৎ আল্লাহ
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আল-ফারাবির দার্শনিক আলোচনার মূল্যায়নে এটা স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, তাঁর মতবাদ বেশ সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাঁর মতের সাথে আধুনিক ও সাম্প্রতিককালের অনেক চিন্তাচেতনার আভাস মেলে। অর্থাৎ তাঁর মতের প্রভাব পরবর্তী দার্শনিকদের উপর পড়েছে। তিনি পরমসত্তাকে বলেছেন এক এবং বহুত্ব হচ্ছে আবশ্যিক সত্তা। তিনি এক ও বহুর সম্পর্কের ক্ষেত্রে উন্মেষবাদের সাহায্য নিয়েছেন এবং আদিসত্তা আল্লাহ থেকে বিভিন্ন বস্তুর উন্মেষের বিবরণ দেন।