অথবা, পারলৌকিক জীবন সম্পর্কে গাজালি কী বলেছেন?
অথবা, পরকাল সম্পর্কে গাজালির মতবাদ সংক্ষেপে লেখ।
অথবা, পরলৌকিক জীবন সম্পর্কে গাজালির অভিমত সংক্ষেপে তুলে ধর।
অথবা, পরলৌকিক জীবন সম্পর্কে গাজালির মতবাদ সংক্ষেপে লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা : মুসলমান দার্শনিকদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দার্শনিক হলেন আল গাজালি। তিনি দুই ধরনের জীবনের কথা বলেছেন- ইহলৌকিক এবং পারলৌকিক জীবন। ইহলৌকিক জীবন ক্ষণস্থায়ী, আর পারলৌকিক জীবন দীর্ঘস্থায়ী। মানুষের মৃত্যুর পরের জীবনই হলো পারলৌকিক জীবন। পারলৌকিক জীবন সম্পর্কে গাজালির অভিমত ইসলামি ধারণার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
পারলৌকিক জীবন সম্পর্কে গাজালির অভিমত : মৃত্যুর পরবর্তী জীবন সম্পর্কে দার্শনিকগণ সন্দেহ পোষণ করেন এবং তারা সুখ-দুঃখ ও বেহেশত-দোযখের অস্তিত্ব স্বীকার করেন না। তাদের মতে মানুষের মৃত্যুর পর দেহ মাটির সাথে মিশে যায়। তাই তার পুনরুত্থান সম্ভব নয়। গাজালি দার্শনিকদের এরূপ বক্তব্য ভ্রান্ত বলে মনে করেন। গাজালির মতে, আল্লাহ সর্বশক্তিমান এবং দয়ালু। বাইরের শক্তি দ্বারা তার ইচ্ছা কখনো সীমিত নয়। তাঁর পক্ষে দৈহিক পুনরুত্থানের মতো অলৌকিক ঘটনা ঘটানো অসম্ভব.নয়। আল্লাহর ইচ্ছাই যদি সব সৃষ্টির কারণ হয়ে থাকে তাহলে তাঁর ইচ্ছায় মৃত্যুর পর দৈহিক পুনরুত্থান ঘটাও সম্ভব। দার্শনিকদের মতে, পারলৌকিক জীবন অধ্যাত্মিক। বেহেশত ও দোযখ আসলে কোনো স্থান নির্দেশ করে না, বরং মনের অবস্থাকে বুঝায়। তাঁরা স্বীকার করেন যে, কুরআনের কোনো কোনো অংশে বেহেশত ও দোযখ তথা পারলৌকিক জীবনকে পদার্থিক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু আল গাজালির মতে, দার্শনিকদের এসব যুক্তি ভ্রান্ত। আসলে তারা.কুরআনের সেসব বাণীই নির্বাচন করেছেন যেগুলো তাদের নিজেদের ব্যাখ্যার পক্ষে অনুকূল। পবিত্র কুরআনে পারলৌকিক জীবনে সেসব বিষয়ের কথা বলা হয়েছে আল্লাহর পক্ষে তা করা সবসময় সম্ভব। কিন্তু গাজালির মতে, সেগুলো শুধু
ভাষাগত অর্থে গ্রহণ করা সম্ভব।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার আলোকে আমরা বলতে পারি, দৈহিক পুনরুত্থান বা পারলৌকিক জীবন সম্পর্কে দার্শনিকদের অভিমতের ভ্রান্তি যেভাবে তুলে ধরেছেন তা প্রশংসার দাবিদার। তিনি কুরআনে বর্ণিত বিষয়গুলোকে গ্রহণ করার প্রতি জোর দিয়েছেন। পারলৌকিক জীবন সম্পর্কে গাজালির অভিমত মুসলিম দর্শনের ইতিহাসে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।