উৎস : আলোচ্য অংশটুকু মার্কসবাদী সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘প্রাগৈতিহাসিক’ গল্পের অন্তর্গত।
প্রসঙ্গ : বসির মিয়াকে খুন করার পর পাঁচীকে কাঁধে চাপিয়ে ভিখু যখন অজানার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় তখনকার প্রাকৃতিক পরিবেশ সম্পর্কে গল্পকার মন্তব্যটি করেছেন।
বিশ্লেষণ : এক সময়কার দুর্ধর্ষ ডাকাত সর্দার ভিখুর ডানহাতটা পঙ্গু হয়ে যাওয়ার পর জীবিকানির্বাহের জন্য সে ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। ভিক্ষালব্ধ পয়সায় সে যখন স্বাচ্ছন্দ্যে দিন কাটাচ্ছিল তখন ভিখুর কামলালসা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। নারীসঙ্গহীন নিরুৎসব জীবন তার আর ভালো লাগে না। ভিখুর তখন নজর পড়ে অল্পবয়সী ভিখারিণী পাঁচীর উপর। পাঁচীকে পাওয়ার জন্য সে উঠে পড়ে লাগে। কিন্তু পাঁচী তাকে পাত্তা দেয় না। সে থাকত মুসলমান ভিক্ষুক বসিরের সাথে। পাঁচীকে দখল করার উদ্দেশ্যে ভিখু বসিরের সাথে আলাপ করতে গিয়ে জীবন নাশের হুমকি শোনে। সে বুঝতে পারে বসির জীবিত থাকতে পাঁচীর দখল সে পাবে না। পূর্ব পরিকল্পনা মতো একরাতে ভিখু অভিনব কৌশলে বসিরকে খুন করে। এরপর নিজের, বসিরের ও পাঁচীর সঞ্চিত টাকাকড়ি নিয়ে পাঁচীকে সঙ্গে করে ভিখু নতুন জীবনের আশায় পাড়ি জমায়। পাঁচীর পায়ের ঘায়ের কারণে তার হাঁটতে কষ্ট হওয়ায় ভিখু পাঁচীকে পিঠে তুলে নেয়। ভিখুর গলা জড়িয়ে ধরে পাঁচী তার পিঠের উপর ঝুলে পড়ে। পাঁচীর শরীরের ভারে সামনে ঝুঁকে ভিখু জোরে জোরে পথ চলতে থাকে। তখন গভীর রাত। পথের দু’দিকে ধানের ক্ষেত আবছা আলোয় নিঃসাড়ে পড়ে আছে। দূরের গ্রামের গাছপালার পিছন থেকে নবমীর চাঁদ আকাশে উঠে এসেছে। ঈশ্বরের পৃথিবীতে তখন বিরাজ করছে শান্ত স্তব্ধতা। এ স্তব্ধতা ভেদ করে আদিম প্রবৃত্তির দাস এক জোড়া নরনারী এগিয়ে চলে।
মন্তব্য : প্রকৃতি সমগ্র মানব-কাহিনির নীরব দর্শক। তার চোখকে কেউ ফাঁকি দিতে পারে না।