অথবা, ইবনে সিনা সহানুমান ও সার্বিক বিশেষ সম্পর্কিত মত সংক্ষেপে লিখ।
অথবা, ন্যায় বা সহানুমান ও বিশেষ সার্বিক সম্পর্কে ইবনে সিনার মতবাদ সংক্ষেপে তুলে ধর।
অথবা, ইবনে সিনার সহানুমান ও সার্বিক বিশেষ মতবাদ সংক্ষিপ্তকারে ব্যাখ্যা কর।
অথবা, ইবনে সিনা সহানুমান ও সার্বিক বিশেষ সম্পর্কে কী বলেছেন?
উত্তর৷ ভূমিকা : যুক্তিবিদ্যায় ইবনে সিনা আল ফারাবি দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন সর্বাধিক। তিনি বুঝতে পারেন যে, সত্যানুসন্ধানে যুক্তিবিদ্যার বিকল্প নেই। আর তাই যুক্তির মাধ্যমেই তিনি সমস্ত রচনার সূচনা/আরম্ভ করেছেন। তিনি যুক্তিবিদ্যাকে চিন্তনমূলক শিল্প বলে অভিহিত করেছেন। ‘আননাজাত’ রচনা এবং ‘আল ইশরাত’ গ্রন্থে তিনি যুক্তিবিদ্যা
সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।
যুক্তিবিদ্যা : ইবনে সিনা তাঁর যুক্তিবিদ্যায় যেসব বিষয়ের আলোচনা করেছেন সহানুমান বা ন্যায় অনুমান এবং বিশেষ ও সার্বিক সম্পর্কিত আলোচনা তার মধ্যে অন্যতম।
ন্যায় বা সহানুমান : ইবনে সিনা এরিস্টটলের মতো যুক্তিবিদ্যার ন্যায় বা সহানুমানের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। সহানুমান হলো একটি পদ্ধতি, যেখানে দুটি সত্যের বিচারের ভিত্তিতে তৃতীয় কোন সত্যকে অনুমান করা হয়। প্রকৃতপক্ষে যৌক্তিক কাঠামোর মূল হচ্ছে সহানুমান। ইবনে সিনা কোন ঘটনার পিছনে চারটি কারণের কথা বলেছেন । যথা : উপাদান, রূপগত, নিমিত্ত ও পরিণতি কারণ। ইবনে সিনার এ চারটি কারণ এরিস্টটলের কারণতত্ত্বেরই পুনরাবৃত্তি।
বিশেষ ও সার্বিক : যুক্তিবিদ্যা হলো সাধারণ ধারণাবলির মানসিক সত্তা। এগুলোর বাস্তব সত্তা নেই। যেসব বাস্ত ববাদী মনে করেন যে, বিশেষের পূর্বে সাধারণ ধারণাবলি স্রষ্টার মনে অস্তিত্বশীল ছিল। যেমন- কোন ছবি আঁকার আগে ছবির চিত্রটির ধারণা শিল্পীর মনে থাকে। বিশেষকে বাদ দিয়ে সার্বিকসমূহ হচ্ছে শুধু মানসিক সত্তা। তাই দেখা যায় সার্বিক
শুধু মানসিক জগতেই বিরাজ করে। অর্থাৎ সার্বিক হলো ধারণাগত বিষয়। ইবনে সিনার মতে, গণিতের মতো যুক্তিবিদ্যাও বিমূর্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করে তবে গণিতের বিমূর্তকরণ ও যুক্তিবিদ্যার বিমূর্তকরণে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে।
উপসংহার : ইবনে সিনা মূলত গ্রিক দর্শন ও আল ফারাবির দর্শন দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যুক্তিবিদ্যা চর্চা করেন এবং নতুনতর বিকাশ সাধন করেন। তিনি মনে করেন যুক্তিবিদ্যার ধারণাকে কখনো ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতায় প্রদর্শন করা যায় না। তিনি যুক্তিবিদ্যা বলতে সহানুমানকে বা ন্যায়ানুমানকে বুঝিয়েছেন।