ন্যায়দর্শনে ব্যাপ্তির স্বরূপ সংক্ষেপে আলোচনা কর।

অথবা, ব্যাপ্তির স্বরূপ সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
অথবা, ন্যায়দর্শনে ব্যাপ্তির স্বরূপ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, ব্যাপ্তির স্বরূপ কী?
অথবা, নৈয়ায়িকদের মতে ব্যাপ্তির প্রকৃতি কীরূপ?
উত্তর৷ ভূমিকা :
ভারতীয় দর্শনের বিভিন্ন আস্তিক স্কুলসমূহের মধ্যে বস্তুবাদী দর্শন হিসেবে ন্যায়দর্শন স্বাধীন চিন্তা ও বিচারের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং এ দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা হলেন মহর্ষি গৌতম। ন্যায়দর্শনের মূলভিত্তি হলো ‘ন্যায়সূত্র’। ন্যায়দর্শন যুক্তির উপর প্রতিষ্ঠিত এবং বস্তুর জ্ঞান নিরপেক্ষ স্বাধীন সত্তায় বিশ্বাসী। ন্যায়দর্শনকে নামান্তরে তর্কশাস্ত্র, প্রমাণশাস্ত্র, হেতুবিদ্যা, বাদবিদ্যা এবং আন্বীক্ষিকী বিদ্যা বলা হয়। ন্যায়দর্শনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ব্যাপ্তি। কারণ অনুমান পদ্ধতির গুরুত্বপূর্ণ এবং মূলভিত্তি হলো ব্যাপ্তি। নিম্নে প্রশ্নপত্রের আলোকে ব্যাপ্তির স্বরূপ কি তা আলোচনা করা হলো :
ব্যাপ্তির স্বরূপ : আক্ষরিক অর্থে ব্যাপ্তি বলতে ব্যাপ্ত হওয়া বা বিস্তৃত হওয়াকে বুঝায়। নৈয়ায়িকদের মতে, সাধ্য ও হেতুর ব্যতিক্রমহীন সহ-উপস্থিতির সম্পর্ককে ব্যাপ্তি বলে। যে ব্যাপ্ত হয় তাকে ব্যাপ্য ও যার দ্বারা ব্যাপ্য হয় তাকে ব্যাপক বলে এবং ব্যাপ্য ব্যাপক সম্বন্ধকে ব্যাপ্তি সম্বন্ধ বলে। অনুমানে হেতু জ্ঞান থেকে সাধ্য অনুমিত হয়। তাই হেতু হলো ব্যাপ্য ও সাধ্য হলো ব্যাপক, যে কারণে হেতুকে সাধ্য অনুগমন করতে বাধ্য। যেখানে ধূম আছে, সেখানে অগ্নি আছেই-একেই নিয়ত সহচর সম্পর্ক বলে। আবার এমন ক্ষেত্র নেই যেখানে ধূম আছে কিন্তু অগ্নি নেই-একেই অবিনাভাব সম্বন্ধ বলে। অর্থাৎ হেতুর সঙ্গে সাধ্যের নিয়ত, ব্যতিক্রমহীন, অবিনাভাব সম্বন্ধকেই ব্যাপ্তি বলা যায়। ব্যাপ্তি বা ব্যাপ্তি সম্বন্ধ দু’প্রকার। যথা : ক. সমব্যাপ্তি এবং খ. অসম বা বিষমব্যাপ্তি।
ক. সমব্যাপ্তি : যে ব্যাপ্তি সম্পর্কের অধীন ব্যাপক (সাধ্য) এবং বাপ্যের (হেতুর) বিস্তৃতি সমান তাকে সমব্যাপ্তি বলে। যেমন- যা উৎপন্নশীল তা বিনাশশীল। উৎপন্নশীল বস্তু এবং বিনাশশীল বস্তুর বিস্তৃতি সমান। তাই উৎপন্নশীল বস্তু এবং বিনাশশীল বস্তুর মধ্যে যে ব্যাপ্তি সম্পর্ক তা সমব্যাপ্তি। একইভাবে মানুষ ও বুদ্ধিসম্পন্ন জীবের মধ্যে যে ব্যাপ্তি তা সমব্যাপ্তি।
খ. অসম বা বিষমব্যাপ্তি : যে ব্যাপ্তি সম্পর্কের অধীন ব্যাপক (সাধ্য) এবং বাপ্যের (হেতুর) বিস্তৃতি অসমান তাকে অসম বা বিষমব্যাপ্তি বলে । যেমন- যা ধূমবান তা অগ্নিমান। এখানে ধূম ও অগ্নির বিস্তৃতি সমান নয়। তাই ধূম ও অগ্নির মধ্যে যে ব্যাপ্তি সম্পর্ক তা অসম বা বিষমব্যাপ্তি। একইভাবে মানুষ ও মরণশীল জীবের মধ্যে যে ব্যাপ্তি সম্পর্ক তা অসম বা বিষমব্যাপ্তি। প্রত্যেক ব্যাপ্তি সম্পর্কে হেতু ও সাধ্যের সহ-উপস্থিতির সম্পর্ক বিদ্যমান। যেমন- যেখানে ধূম আছে সেখানে অগ্নি আছে। সুতরাং ধূম ও অগ্নির সহ-উপস্থিতির সম্পর্ক ব্যাপ্তি সম্পর্ক।
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, ন্যায়দর্শনের ব্যাপ্তি সম্পর্কিত আলোচনা ভারতীয় দর্শনের এক অমূল্য সম্পদ। মূলত ভারতীয় দর্শন যে বিচার বিযুক্ত নয় এবং অতিসূক্ষ্ম বিচার বিশ্লেষণের উপর প্রতিষ্ঠিত ন্যায়দর্শনের ব্যাপ্তি সম্পর্কিত আলোচনায় সে কথাই প্রমাণিত হয়।