অথবা, ন্যায় ঈশ্বর বলতে কী বুঝ?
অথবা, নৈয়ায়িকদের ঈশ্বরবাদ সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
অথবা, ন্যায়দর্শনিকদের মতে ঈশ্বর কিরূপ?
অথবা, ন্যায়দর্শন অনুসারে ঈশ্বরতত্ত্ব সংক্ষেপে লেখ।
উত্তর৷ ভূমিকা : ভারতীয় দর্শনের আস্তিক স্কুলসমূহের মধ্যে বস্তুবাদী দর্শন হিসেবে ন্যায়দর্শন স্বাধীন চিন্তা ও বিচারের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং এ দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা হলেন মহর্ষি গৌতম। ন্যায়দর্শনের মূলভিত্তি হলো ‘ন্যায়সূত্র’। ন্যায়দর্শন যুক্তির উপর প্রতিষ্ঠিত এবং বস্তুর জ্ঞান নিরপেক্ষ স্বাধীন সত্তায় বিশ্বাসী। ন্যায়দর্শনকে নামান্তরে তর্কশাস্ত্র, প্রমাণশাস্ত্র, হেতুবিদ্যা, বাদবিদ্যা এবং আম্বীক্ষিকী বিদ্যা বলা হয়। ন্যায়দর্শনের প্রধান আলোচ্যবিষয় হলো জ্ঞানতত্ত্ব, জীবাত্মার স্বরূপ ও যুক্তিতত্ত্ব এবং ঈশ্বরতত্ত্ব। আমাদের আলোচ্যবিষয় ন্যায় ঈশ্বরতত্ত্ব। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
ন্যায় ঈশ্বর : “God is the ultimate cause of the creation, maintenance and destruction of the world.” (Chatterjee & Datta; An Introduction to Indian Philosophy) ন্যায়দর্শন বুদ্ধিবৃত্তিক, যুক্তিনির্ভর ও বিশ্লেষণমূলক আলোচনার মাধ্যমে ভারতকেন্দ্রিক দার্শনিক চিন্তার ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র ধারা প্রবর্তন করেছে যার সুস্পষ্ট প্রতিফল পরিলক্ষিত হয় তাঁদের ঈশ্বরতত্ত্বে। তবে ন্যায়দর্শনে মহর্ষী গৌতমের পদার্থ সংকলনে ঈশ্বরের নাম নেই। তাছাড়া ঈশ্বর সম্পর্কে জ্ঞান লাভ মুক্তির সহায়ক-এমন কথাও ন্যায়দর্শনে বলা হয় নি। সে কারণে নৈয়ায়িকরা নিরীশ্বরবাদী এমন একটি ধারণা জাগা স্বাভাবিক। মহর্ষি গৌতম বিস্তারিতভাবে ঈশ্বর সম্পর্কে আলোচনা না করলেও তাঁর ন্যায়সূত্রের চতুর্থ অধ্যায়ের প্রথম আহ্নিকে তিনটি সূত্রে ঈশ্বরের উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, জীবের কর্ম ও কর্মফল জীবের আয়ত্তে নয়; ঈশ্বরই জীবের কর্ম ও কর্মফল নিয়ন্ত্রণ করেন। বাৎসায়ন, উদ্যোৎকর, বিশ্বনাথ প্রমুখ ন্যায়াচার্য ঈশ্বর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করে ঈশ্বরের সঙ্গে অপবর্গের সম্বন্ধ নির্দেশ করেন। অতএব, ন্যায়দর্শনকে নিরীশ্বরবাদী বলা যায় না। S. Radhakrishnan তাঁর Indian Philosophy’ গ্রন্থে বলেন, “In Nayayasutra we find only a causal mention of God, which justifies the suspicion that the ancient doctrine of the Nyaya was not theistic.” (Vol-II; page-105)
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, নৈয়ায়িকদের ঈশ্বরতত্ত্বের আলোচনা ভারতীয় দর্শনের অমূল্য সম্পদ। ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে তাঁদের যুক্তিগুলো এ কথাই প্রমাণ করে যে, ভারতীয় দর্শন বিচারবিযুক্তবাদী দর্শন নয়, বরং অতিসূক্ষ্ম বিচার বিশ্লেষণের উপর প্রতিষ্ঠিত। এ দৃষ্টিতে ন্যায়দর্শনের ঈশ্বরতত্ত্ব গুরুত্বের দাবিদার এবং একটি সন্তোষজনক মতবাদ।