অথবা, ন্যায় মতে বিরুদ্ধ হেত্বাভাস ও সৎপ্রতিপক্ষ হেত্বাভাস বলতে কী বুঝ?
অথবা, বিরুদ্ধ হেত্বাভাস ও সৎপ্রতিপক্ষ হেত্বাভাস কী?
অথবা, বিরুদ্ধ হেত্বাভাস ও সৎপ্রতিপক্ষ হেত্বাভাস কাকে বলে?
উত্তরা৷ ভূমিকা : ন্যায়দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা হলেন মহর্ষি গৌতম। ন্যায়দর্শনের মূলভিত্তি হলো ‘ন্যায়সূত্র’। ন্যায়দর্শন যুক্তির উপর প্রতিষ্ঠিত এবং বস্তুর জ্ঞান নিরপেক্ষ স্বাধীন সত্তায় বিশ্বাসী। নৈয়ায়িকরা জ্ঞানতত্ত্বের আলোচনায়
অনুমান সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। যে অনুমানের হেতু প্রকৃতপক্ষে হেতু নয়, হেতুর আভাস মাত্র (অর্থাৎ আসলে হেতু নয় হেতুর মতো দেখায় মাত্র।) সেই অনুমান ভ্রান্তিজনক এবং এ ভ্রান্তির নাম হলো হেত্বাভাস। ন্যায়দর্শন মতে হেত্বাভাস পাঁচ প্রকার। যথা : ১. সব্যভিচার হেত্বাভাস, ২. বিরুদ্ধ হেত্বাভাস, ৩. সৎপ্রতিপক্ষ হেত্বাভাস, ৪. অসিদ্ধ হেত্বাভাস এবং ৫. বাধিত হেত্বাভাস।
বিরুদ্ধ হেত্বাভাস : হেতুপদের কাজ হলে পক্ষপদের মধ্যে সাধ্যপদের অস্তিত্ব প্রমাণ করা। কিন্তু কোন অনুমানে হেতুপদ যদি পক্ষপদের অস্তিত্ব প্রমাণ না করে তার অনস্তিত্বই প্রমাণ করে, তবে সেই অনুমান বিরুদ্ধ হেত্বাভাসে দুষ্ট হয়। যেমন— বায়ু ভারী, কারণ বায়ু শূন্য। এখানে হেতুপদ ‘শূন্য’ বস্তুর ভারীত্ব প্রমাণ করে না। ভারীত্ব এবং শূন্যতা পরস্পর বিরুদ্ধ পদ । সুতরাং এ অনুমান বিরুদ্ধ হেত্বাভাসে দুষ্ট।
সৎপ্রতিপক্ষ হেত্বাভাস : কোন একটি অনুমানের হেতু তার সিদ্ধান্তকে প্রমাণ করে না, এ কথা যদি অপর একটি অনুমানের হেতু প্রমাণ করে দেয় তবে সেই হেতুকে সৎপ্রতিপক্ষ বলা হয়। যেমন- একটি অনুমানে সিদ্ধান্ত করা হলো- শব্দ নিত্য, কারণ শব্দ শ্রবণযোগ্য। আবার আর একটি অনুমানে সিদ্ধান্ত করা হলো- শব্দ অনিত্য, কারণ শব্দ উৎপত্তিশীল । এখানে প্রথম অনুমানের হেতু দ্বিতীয় অনুমানের হেতুর দ্বারা ভ্রান্ত প্রমাণিত হলো।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ন্যায়দর্শনের অনুমান সম্পর্কিত আলোচনা ভারতীয় দর্শনের এক অমূল্য সম্পদ। ভারতীয় দর্শন যে বিচার বিযুক্ত নয় এবং অতিসূক্ষ্ম বিচার বিশ্লেষণের উপর প্রতিষ্ঠিত তা ন্যায়দর্শনের হেত্বাভাস সম্পর্কিত আলোচনায় প্রমাণিত হয়।