নেতৃত্বের প্রধান প্রধান লক্ষণসমূহ লিখ।

অথবা, নেতৃত্বের প্রধান প্রধান লক্ষণ উল্লেখ কর।
অথবা, নেতৃত্বের প্রধান প্রধান গুণাবলি উল্লেখ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
যে কোন দলীয় পরিস্থিতিতে দলের লক্ষ্য অর্জন ও সদস্যদের কার্যাবলি পরিচালনার জন্য কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের দলের উপর প্রভাব বিস্তারকারী আচরণকে নেতৃত্ব (Leadership) বলা হয়। দলভুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বিশেষ কোন ব্যক্তি কতকগুলো বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলির অধিকারী হয়। এ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ব্যক্তিই হলো নেতা আর তার দ্বারা পরিচালিত কর্মকাণ্ডই নেতৃত্ব হিসেবে চিহ্নিত।
নেতৃত্বের প্রলক্ষণসমূহ (Traits of leadership) : Halpin and Winter নেতৃত্ব সম্পর্কে গবেষণা চালিয়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, নেতৃত্বের চারটি প্রলক্ষণ বিদ্যমান-
১. বিচার বিবেচনা— অর্থাৎ অনুগামীদের সাথে নেতার সম্পর্ক এবং তাদের দুর্বলতা সম্প র্কে বিচার বিবেচনা।
২. সংগঠন প্রবর্তন- অর্থাৎ দক্ষতার মান গঠন করা ও তা বজায় রাখা, নিজের মনোভাব ও ধারণাকে সুস্পষ্টভাবে বলার ক্ষমতা।
উৎপাদনের গুরুত্ব- অর্থাৎ সময় তালিকা অনুযায়ী কাজ করার এবং সাধ্যমতো চেষ্টা করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি । সংবেদনশীলতা ও সামাজিক অগ্রগতি- অর্থাৎ নেতা ও সদস্যদের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া সম্পর্কে অবগতি। অনুগামীদের সাথে পারস্পরিক সম্পর্কের প্রত্যক্ষ জ্ঞান ও এর অন্তর্ভুক্ত।
সিম্যান ও মরিস প্রদত্ত প্রলক্ষণ : Seeman এবং Morris শিক্ষার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব নিয়ে গবেষণা করে কতকগুলো প্রলক্ষণের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন :
১. যোগাযোগ- অর্থাৎ গোষ্ঠীর মধ্যে ভাব, অভিমত প্রভৃতির আদানপ্রদান।
২. স্বাতন্ত্র্য- অর্থাৎ নেতা নিজ পদমর্যাদার ভাব কতটুকু বজায় রাখতে পারেন এবং কতটুকু মাত্রায় তার অনুগামীদের উপর ক্রিয়াপ্রতিক্রিয়া করতে পারেন।
৩. পরিবর্তন- অর্থাৎ নতুন ভাব ও পদ্ধতির প্রতি প্রতিবেদনশীলতা।
৪. কর্তৃত্ব- অর্থাৎ নেতার সে অধিকার যে অধিকার বলে পরিস্থিতি অনুযায়ী নেতা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন।
কর্তৃত্ব-বশ্যতা (Ascendance-submission) : সাধারণত মনে করা হয় যে, কিছু লোক নেতা হওয়ার জন্য জন্মেছে এবং কিছু লোক নেতাকে অনুসরণ করার জন্য জন্মেছে। এ লৌকিক ধারণাকে মনস্তাত্ত্বিক গবেষণার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটা স্বীকার্য যে, মুখোমুখি পরিস্থিতিতে কিছু লোকের কর্তৃত্ব করার এবং অপরকে নিয়ন্ত্রণ করার সামর্থ্য আছে। এ বিষয়টিকে ব্যক্তিগত নেতৃত্ব বা Personal leadership বলা হয় ।
Tist Allport ব্যক্তিগত নেতৃত্বের প্রসঙ্গে বলেন যে, যদি সমমর্যাদাসম্পন্ন দু’জন ব্যক্তি মুখোমুখি সম্পর্কের মধ্যে এসে পড়ে এবং যদি প্রত্যেকের আচরণ অপরজনের প্রত্যক্ষ আচরণের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ হয়, তখন অজ্ঞাতসারে প্রকৃত সংঘর্ষের শুরু হয়। এ দু’য়ের একজনের প্রভু হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তার আবেগ কর্তৃত্ব করে (His impulse dominates)। অপরজন বশ্যতা স্বীকার করে এবং প্রথম ব্যক্তির কর্তৃত্বের সাথে নিজের সংগতি বিধান করে। এক্ষেত্রে প্রথম ব্যক্তি হলো কৰ্তৃত্বমূলক (Ascendant) এবং দ্বিতীয় ব্যক্তি হলো বশ্যতামূলক (Submissive)।
এম. বি. পারটেন (M. B. Parten) : M. B. Parten শিশু বিদ্যালয়ের খেলাধুলা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে লক্ষ্য করেন যে, একই ব্যক্তির মধ্যে কর্তৃত্ব ও বশ্যতা এ দুই প্রলক্ষণের সংগতিপূর্ণ আবির্ভাব ঘটেছে। তিনি আরো লক্ষ্য করেন যে, কিছু শিশু কৌশল করে অন্য শিশুদের উপর কর্তৃত্ব করছে আর কিছুকে পীড়ন করে তাদের নিয়ন্ত্রণ করছে। যে
শিশু কোন দলের বশ্যতা স্বীকার করছে, অপর দলে সে নেতা, অনেক সময় শিশুরা কোন শক্তিশালী নেতার অনুগামী হয়ে নেতা হতে শিখে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, নেতৃত্বের ভূমিকা নির্ধারিত হয় কোন নিঃশর্ত প্রলক্ষণের এবং সামর্থ্যের দ্বারা নয়, পরিস্থিতির চাহিদা দ্বারা। তবু কতকগুলো ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য (Personal characteristics) আছে যার দ্বারা এ নেতৃত্বের সম্ভাবনা নির্ধারিত হয় যেগুলো অনেকাংশে পরিস্থিতি নিরপেক্ষ বলা চলে ।