উত্তর৷ ভূমিকা : সামাজিক জীবনে নেতৃত্ব একটি পরিচিত ও বহুল ব্যবহৃত প্রত্যয়। যে কোন দলীয়, পরিস্থিতিতে দলের লক্ষ্য অর্জন এবং সদস্যদের কার্যাবলি পরিচালনার জন্য কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের দলের উপর প্রভাব
বিস্তারকারী আচরণকে নেতৃত্ব (Leadership) বলা হয়। দলভুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বিশেষ কোন ব্যক্তি কতকগুলো বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলির অধিকারী হয়। এ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ব্যক্তিই নেতা এবং তার কাজকেই নেতৃত্ব বলা হয় ।
নেতৃত্ব প্রক্রিয়ার উপাদান (Elements of leadership process) : সাধারণ অর্থে ‘নেতৃত্ব’ ও ‘নেতা’ শব্দ দুটি একই অর্থে ব্যবহৃত হলেও প্রকৃতপক্ষে শব্দ দুটি একই অর্থ জ্ঞাপন করে না। ‘নেতৃত্ব’ কোন ব্যক্তি নয়, একটি প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ার মধ্যে তিনটি উপাদান রয়েছে, যার কোন একটিকে বাদ দিয়ে নেতৃত্বের সংজ্ঞা দেয়া যায় না। উপাদান তিনটি হচ্ছে-
- The leader, with his or her characteristics including motivation, perception and resources related to the attainment of group goal. HIIRET The followers, with their characteristics including motivation, perception and relevant resources.
- The situation; involving functions to be fulfilled desired goals, resources and other conditions.
উপর্যুক্ত বিষয়গুলোকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে, নেতৃত্ব প্রক্রিয়া মূল নেতা, পরিস্থিতি ও অনুগামী এ তিনটি বিশেষ বিষয়ের উপর নির্ভর করে। নিম্নে প্রথমে তিনটি বিষয়ের আলোচনা ও পরবর্তীতে তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হলো :
১. নেতা : সামাজিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ারত সম্বন্ধযুক্ত কিছু ব্যক্তির ঐক্য হলো দল বা গোষ্ঠী (Group)। পরস্পর বিচ্ছিন্ন ব্যক্তির এ ঐক্যকে যদি কার্যকরী করে তুলতে হয় তাহলে ব্যক্তিদের পৃথক ও ভিন্নপথগামী প্রকৃতির উপর এই ঐক্যকে ছেড়ে দিলে চলে না। এ ঐক্যকে কার্যকর করে তোলার দায়িত্ব যিনি গ্রহণ করেন তিনিই নেতা।
অনুগামী : নেতৃত্ব বলতে বুঝায় অনুগামীরা নেতৃত্বকে স্বীকার করে নিয়েছে। নেতার সাফল্য সবসময় অনুগামীদের সাথে তার সম্পর্কের উপর নির্ভর করে।
৩. পরিস্থিতি : সাম্প্রতিক গবেষণায় নেতৃত্বের কতকগুলো দিকের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এসব গবেষণালব্ধ তথ্য থেকে জানা যায় যে, পরিস্থিতি (Situation) নেতৃত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক
হলো্যান্ডারের ব্যাখ্যা : হলো্যান্ডার (১৯৭৬) নিম্নোক্ত চিত্রের মাধ্যমে নেতৃত্বের অর্থ বিশ্লেষণ করেছেন :
খ্রিাশ চিত্রের বর্ণনা : এ চিত্রে দেখা যাচ্ছে যে, নেতার সকল বৈশিষ্ট্য যেমন- প্রেষণা, দৃষ্টিভঙ্গি ও অন্যান্য গুণাবলি যা দলের লক্ষ্য অর্জনে প্রাসঙ্গিক, অনুগামীদের বৈশিষ্ট্য ও চাহিদা এবং পরিস্থিতিমূলক বৈশিষ্ট্য অর্থাৎ ইপ্সিত লক্ষ্য, সামাজিক কাঠামো ও সমসাময়িক অবস্থা এ তিনটি উপাদানের সংমিশ্রণেই নেতৃত্ব নির্ণীত হয়। তিনটি উপাদানের কোনটিই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। চিত্রটির একটি লক্ষণীয় বিষয় এই যে, নেতা ও অনুগামীগণ প্রধানত পরিস্থিতির মধ্যেই অবস্থান করেন এবং পরিস্থিতিতে নেতা ও অনুগামী উভয়ের ভূমিকা আংশিক, সার্বিক নয়। তাছাড়া নেতার অবস্থান তার অনুগামীদের থেকে ভিন্ন নয়।
নেতৃত্ব একটি দ্বিমুখী প্রভাবের সম্পর্ক : হলো্যান্ডার ও জুলিয়ান (১৯৬৯) এর ভাষায় নেতৃত্ব একটি দ্বিমুখী (Two way) প্রভাবের সম্পর্ক। অর্থাৎ নেতৃত্বের ক্ষেত্রে নেতা ও অনুগামীদের আদানপ্রদানের (Transaction) সম্পর্ক রয়েছে। এ আদানপ্রদানে নেতা তার অনুগামীদের প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা করেন এবং অনুগামীরা নেতার প্রচেষ্টা ও কার্যাবলির প্রেক্ষিতে তার মূল্যায়ন করেন।
পরিস্থিতিমূলক ভাবধারা : পরিস্থিতি শব্দটি অত্যন্ত ব্যাপক। পরিস্থিতি বলতে দলীয় গঠন কাজের প্রকৃতি, দলের আয়তন, সম্পদ, সংগঠনগত অবস্থান বা পদমর্যাদা এবং তার ইতিহাস প্রভৃতি বুঝায়। পরিস্থিতিমূলক ভাবধারায় পরিচালিত সাম্প্রতিক গবেষণায় ক্ষমতা, নিয়ন্ত্রণ, নেতা ও অনুগামীদের সম্পর্ক প্রভৃতি উপাদানের উপরও বিশেষ গুরুত্ব
দেয়া হয়েছে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে নির্দিধায় বলা যায় যে, নেতৃত্ব মূলত বিশেষ পরিস্থিতিতে নেতা ও তার অনুগামীদের সম্পর্কের ফলাফল। এ সম্পর্কে হলো্যান্ডের ব্যাখ্যাও অধিক গুরুত্বের দাবিদার।