অথবা, নৃতাত্ত্বিক পদ্ধতি কী?
অথবা, নৃতাত্ত্বিক পদ্ধতি কাকে বলে?
অথবা, নৃতাত্ত্বিক পদ্ধতির সংজ্ঞা দাও।
অথবা, নৃতাত্ত্বিক পদ্ধতি ধারণাটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : পদ্ধতিগত প্রশ্ন সমাজবিজ্ঞানে এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে । ফরাসি অংকবিদ হেনরি পয়কর বলেছেন, “The science with the most methods and the fewest results.” এতদসত্ত্বেও সমাজবিজ্ঞানের গবেষণায় বিভিন্ন পদ্ধতির আশ্রয় নেওয়া হয়। সমাজবিজ্ঞানের গবেষণা কার্যকে সুন্দর সুসামঞ্জস্যশীল ও কার্যোপযোগী করে তোলার ক্ষেত্রে নৃতাত্ত্বিক পদ্ধতির গুরুত্ব অপরিসীম। বর্তমানে সমাজ গবেষণার ক্ষেত্রে বস্তুনিষ্ঠ ও নিবিড় তথ্যসংগ্রহের জন্য সামাজিক নৃবিজ্ঞানীরা এ পদ্ধতির বহুল ব্যবহার করেন ।
নৃতাত্ত্বিক পদ্ধতি : যে পদ্ধতিতে একজন গবেষক কোনো একটি বিশেষ সমাজের সংস্পর্শে এসে সে সমাজে দীর্ঘদিন অবস্থান করে সেখানকার মানুষের আচার-আচরণ, চালচলন, রীতিনীতি তথা জীবন প্রণালি সম্পর্কে অবলোকন করে তাকে নৃতাত্ত্বিক পদ্ধতি বলে। আমরা অন্যভাবেও বলতে পারি, সামাজিক নৃবিজ্ঞানীরা কোন মানবজাতি বা কোনো মানব সংস্কৃতি সম্পর্কে বিবরণী তৈরি করতে সরেজমিনে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক সূত্রে বা অংশগ্রহণমূলক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে যে গবেষণা করেন তাকেই নৃতাত্ত্বিক পদ্ধতি বলে । K.D.Bailey বলেছেন, “The study of the methods used in everyday, common place, routine social activity.”
নৃতাত্ত্বিক পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য : নৃতাত্ত্বিক পদ্ধতির কতকগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে । এগুলো হলো :
ক.একজন গবেষককে একটি নির্দিষ্ট এলাকা নির্বাচন করতে হবে।
খ. গবেষককে গবেষণাধীন এলাকায় সরেজমিনে দীর্ঘদিন অবস্থান করতে হবে।গ.গবেষণাধীন এলাকার লোকজনের ভাষা শিখতে হবে।
ঘ.তাদের আচার-আচরণ তথা সংস্কৃতির সাথে একাত্ম হতে হবে ।
ঙ.গবেষককে জনগণের কাছে এমন বিশ্বস্ত হতে হবে, যাতে তারা তাকে নিজেদের একজন মনে করে ।
চ.গবেষক তার সাথে নোট বুক কিংবা ক্যাসেট প্লেয়ার রাখবেন ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, বাংলাদেশের সমাজ গবেষণায় নৃতাত্ত্বিক পদ্ধতির গুরুত্ব
অপরিসীম । বাংলাদেশের নয়া সমাজবিজ্ঞান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এ নৃতাত্ত্বিক পদ্ধতির ভূমিকা অনন্য। তাই বাংলাদেশের
সমাজবিজ্ঞানের পুরোধা ড. নাজমুল করিম যথার্থই বলেছেন, “বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলকে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক মণ্ডলে
বিভক্ত করে এবং এসব মণ্ডলের বিশেষ এলাকাতে নৃতাত্ত্বিক পদ্ধতিতে জরিপ কাজ চালালে দ্রুত বিলীয়মান বাঙালি সংস্কৃতির বিভিন্ন নমুনাকে আমরা আজও রক্ষা করতে পারি।”