অথবা, নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতি কাকে বলে?
অথবা, নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতি বলতে কী?
অথবা, নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতি বলতে কী বুঝায়?
উত্তরঃ ভূমিকা: মার্কিন সংবিধানে’ ব্যক্তিস্বাধীনতার মূলমন্ত্র হিসেবে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির কঠোর প্রয়োগ ঘটলে সরকারের বিভিন্ন বিভাগগুলোর মধ্যেও অশুভ প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হবে। প্রতিটি বিভাগের মধ্যে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার ও স্বৈরাচারী হওয়ার প্রবণতা দেখা দিবে। তাই সচেতন সংবিধান প্রণেতাগণ এসব প্রবণতা রোধকল্পে ‘নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতির’ কথা বলেছেন। তাই গার্কিন রাজনৈতিক ব্যবস্থায় আইন,শাসন ও বিচার বিভাগ পারস্পরিক নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্যের ক্ষমতা ও সুযোগ লাভ করে নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতি: যে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থায় সরকারের তিনটি বিভাগের প্রত্যেকে এমন কতকগুলো আনুষ্ঠানিক উপায় লাভ করে যা দ্বারা একটি বিভাগ অপর দু’টি বিভাগের দ্বারা স্ব-স্ব সাংবিধানিক ক্ষমতার লঙ্ঘন নিবৃত্ত করতে পারে তাকে নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য ব্যবস্থা বলা হয়।
অর্থাৎ নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতি বলতে বুঝায় সরকারের আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে এক বিভাগকে অন্য বিভাগের ক্ষমতা দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা: নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতির কতিপয় সংজ্ঞা বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী নানাভাবে প্রদান করেছেন। নিম্নে তাঁদের সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য কয়েকটি সংজ্ঞা উপস্থাপন করা হল:
অধ্যাপক হ্যামিলটন (Hamilton) এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞের মতে, এ ব্যবস্থা এমনভাবে সরকারের অভ্যন্তরীণ কাঠামোর বিন্যাস করে যাতে এর বিভিন্ন বিভাগ এদের পারস্পরিক সম্পর্কাদির মাধ্যমে অন্যান্য প্রত্যেক বিভাগকে এর নিজস্ব যথার্থ এক্তিয়ারের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে পারে।”
New Dictionary of American Politics এ বলা হয়েছে, ‘নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতিতে আইনসভা, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতা পৃথক পৃথকভাবে বণ্টন করে দেয়ার নীতিকে স্বীকৃতি দানের সাথে সাথে এক বিভাগের কার্যে অন্য বিভাগের অনুমোদন গ্রহণের বিধান রাখা হয় এবং এভাবে প্রত্যেক বিভাগকে অন্যান্য বিভাগের
স্বেচ্ছাচারিতার হাত হতে রক্ষা করতে চাওয়া।”
সুতরাং বলা যায়, সরকারের প্রত্যেকটি বিভাগই অপরাপর বিভাগ কর্তৃক ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রেখে কোন না কোনভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে। আর ক্ষমতা বিন্যাসের এ নীতিকেই বলা হয় নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতি।
উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতি হল সরকারের বিভাগগুলো পারস্পরিক হস্তক্ষেপযুক্ত থেকে স্ব-স্ব দায়িত্ব পালনের সাথে সাথে স্বেচ্ছাচারী হবে না। অর্থাৎ এক বিভাগের সাথে অন্য বিভাগের নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য বজায় থাকবে। মূলত ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির কুফল প্রতিরোধের জন্যই নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতির প্রবর্তন করা হয়েছে।