নয়নচারা গাঁয়ে কী মায়ের বাড়ি?”- উক্তিটি কে, কাকে, কেন করেছে? বর্ণনা কর।

উত্তর : সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্র ‘নয়নচারা’ গল্পটি দুর্ভিক্ষের পটভূমিতে রচিত। নয়নচারা একটি গ্রাম। এই গ্রামের আমু, ভুতো, ভুতনি দুর্ভিক্ষের শিকার হয়ে ক্ষুধার যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে গ্রাম থেকে শহরে আসে জীবিকার অন্বেষণে। শহরে আমুর মতো দুর্ভিক্ষ- পীড়িত মানুষেরা শহরের অলিতে-গলিতে দুমুঠো খাদ্যের অন্বেষণে ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কাছে আত্মসমর্পণ করে। এই শহরে আমুর মতো ক্ষুধাতাড়িতেরা মর্মান্তিকভাবে পরাজিত, প্রতিবাদ কিংবা প্রতিরোধ অসম্ভব। কেননা দুর্ভিক্ষের করাল গ্রাসাচ্ছিত নির্দয় সময়ের কিনারায় দাঁড়িয়ে চারিদিকে মৃত্যুর যে ছায়া নেমে আসে তা থেকে আমুদের মুক্তি নেই। দুর্ভিক্ষ কবলিত মানুষগুলো দারুণভাবে পরাজিত হয়ে অন্নহীন অবস্থায় খড়কুটোর মতো রাজপথে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে ধ্বংসস্তুপের মধ্যেও মানুষের মনোবীণায় বেজে ওঠে হারানো সুখস্মৃতি ‘কোথায় গো নয়নচারা গাঁ।’ তাই আমুদেরও অন্তর্জগৎ ভরে ওঠে নয়চারাকে ঘিরে। নয়নচারা গ্রাম ছিল আমুদের জীবনীশক্তি। আমুর মতো আরো অনেকে খাদ্যের অন্বেষণে শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে চলেছে। তাদের অনন্ত ছোটাছুটি মৃত্যু ছাড়া থামে না। ফুটপাথের ধারে কেউ বেদনায় গোঙাচ্ছে, কেউ বা নিঃশব্দে ধুঁকছে। এ থেকে পালিয়ে বাঁচার কোন রাস্তার সন্ধান তাদের জানা নেই। আমুর ধারণা সেও অন্যদের মতো মৃত্যুর সদর দরজায় এসে পৌঁছেছে। এ-সময় প্রাণহীন
দরজা খুলে একটি মেয়ে আমুকে ক্ষুধা নিবৃত্তির অন্ন জোগায়। আমু ত্রস্তভঙ্গিতে কাপড়ের প্রান্ত মেলে ধরে খাবারটুকু গ্রহণ করে এবং মেয়েটির কাছে জানতে চায় : নয়নচারা গাঁয়ে কি মায়ের বাড়ি? মূলত আমু শহরে এসে শহরের মানুষের মধ্যে প্রত্যক্ষ করেছে অমানবিকতা এবং তাদের চোখে স্নেহ-মায়া-মমতার পরিবর্তে তাদের চোখে দেখেছে হিংস্রতা। তাই শহরের কেউ তাদের সাহায্যের জন্যে এগিয়ে এলেও তাদের দৃঢ়বিশ্বাস তার বাড়ি নয়নচারা গ্রামে। নয়নচারা গ্রাম যে তাদের বাঁচিয়ে রেখেছিল এবং এখনো সেই প্রতিচ্ছবি তাদের সামনে ভেসে ওঠে- যা আলোচ্য জিজ্ঞাসার মধ্য দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%a8%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%a8%e0%a6%9a%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%be-%e0%a6%97%e0%a6%b2%e0%a7%8d%e0%a6%aa-%e0%a6%b8%e0%a7%88%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%a6-%e0%a6%93%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%be/