উৎস : উদ্ধৃত গদ্যাংশটুকু বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান কথাসাহিত্যিক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ বিরচিত ‘নয়নচারা’ শীর্ষক ছোটগল্প থেকে চয়ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ : হৃদয়হীন শহরের নিষ্ঠুর মানুষদের মধ্যে একজন গৃহবধূর সহৃদয় ব্যবহারে বিস্মিত আমুর মনে যে প্রশ্ন জেগেছিল তা-ই এখানে ব্যক্ত করা হয়েছে।
বিশ্লেষণ : ময়ূরাক্ষী নদীতীরবর্তী নয়নচারা গ্রামের একদল বানভাসি মানুষের সাথে আমু পেটের তাগিদে শহরে এসেছে। এখানে সে খোলা আকাশের নিচে অন্যদের সাথে রাত কাটায়। রাস্তার ফুটপাত তাদের আশ্রয়স্থল। সারাদিন আমু শহরের মানুষের য়ারে দুয়ারে, দোকানে-দোকানে হাত পেতে বেড়ায় একমুঠো খাবারের জন্য। কিন্তু এখানকার মানুষগুলো বড্ড হৃদয়হীন। এদের অন্তর যেন পাথর দিয়ে গড়া। এদের মনে দয়ামায়া, মমতা, স্নেহ-ভালোবাসা বলতে কিছুই নেই। আমু এদের চোখে দেখতে পায়
পাশবিক হিংস্রতা। এরা তাকে খাবারের পরিবর্তে লাথি-ঝাঁটা দিয়ে বিদায় করে। কুকুরের মতো মনে করে তাড়িয়ে দেয়। এদের নির্দয় ব্যবহার দেখে আমুর বুক ফেটে যায়। একদিন শহরের এক হোটেল মালিকের হাতে মার খেয়ে আমু হাঁটতে হাঁটতে মনের অজান্তে কোথায় চলে যায় বুঝতে পারে না। হঠাৎ সে নিজেকে আবিষ্কার করে একটা বদ্ধ দরজার সামনে। সহসা বদ্ধ দরজা খুলে যায়। এক মমতাময়ী গৃহবধূ আমুকে কিছু খাবার দেয়। মেয়েটাকে দেখে আমুর খুব চেনা চেনা মনে হয়। এমন মধুর নম্র ব্যবহার সে শহরের কারও কাছ থেকে পায়নি। এ মেয়েটা ঠিক যেন তাদের নয়নচারা গ্রামের মেয়েদের মতো। এর মধ্যে দয়া আছে, মায়া আছে, মমতা আছে। আমুর নিশ্চিত বিশ্বাস জাগে- এ নয়নচারা গ্রামেরই মেয়ে। বিস্মিত আমু প্রশ্ন করে, ‘নয়নচারা গাঁয়ে কি মায়ের বাড়ি?
মন্তব্য: শহরের হৃদয়হীন মানুষের নিষ্ঠুর আচরণের মধ্যে একজনের কাছ থেকে ভালো ব্যবহার পেয়ে আমুর মনে উল্লিখিত প্রশ্নটি জেগেছিল।