নমুনায়ন কি? নমুনায়নের সুবিধা ও অসুবিধা আলোচনা কর।

অথবা, নমুনায়ন বলতে কী বুঝ? নমুনায়নের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য আলোচনা কর।
অথবা, নমুনায়ন কাকে বলে? নমুনায়নের ইতিবাচক ও নেতিবচাক দিক আলোচনা কর।
অথবা, নমুনায়ন সংজ্ঞাদাও? নমুনায়নের সামঞ্জস্য ও আসামঞ্জস্য আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : গবেষণার জন্য সমগ্রক হতে কতিপয় একক বাছাই করে সমগ্রক সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। বাছাইকৃত এ একককে বলে নমুনা। যে প্রক্রিয়ায় একক বাছাই করা হয়, তাকে বলে নমুনায়ন। নমুনায়নের মাধ্যমে
সমগ্রক সম্পর্কে সহজে ধারণা পাওয়া যায়।নমুনায়ন (Sampling) : নমুনা বা Sample কথাটি আমাদের খুবই পরিচিত। কেননা আমাদের দৈনিক ব্যবহারিক কাজে আমরা এ প্রত্যয়টি ব্যবহার করে থাকি। যেমন- ডাক্তার এক ফোঁটা রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে রোগীর দেহের সমস্ত রক্ত সম্পর্কে রিপোর্ট দিয়ে থাকেন। অনুরূপভাবে একজন ক্রেতা সামান্য পণ্য পরীক্ষণ করে সমস্ত পণ্য ভালো না
মন্দ বিচার করে থাকেন। আর এসব প্রক্রিয়াই হল নমুনায়ন। আর নমুনায়ন বুঝাতে হলে কতকগুলো বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা
নেওয়া দরকার। যথা : সমগ্রক বা তথ্যবিশ্ব। আর নমুনা বলতে আমরা বুঝে থাকি এ সমগ্রকেরই একটি অংশ বিশেষ।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : নমুনায়ন সম্পর্কে বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সংজ্ঞা আলোচনা করা হল :
Wilkinson & Bhandarkar 4, “The method of selecting for surely a porton (or a
sample of the universe) with a view to drawing conclusion about the universe in ‘to to’ is known as sampling, sampling is only a part of the population.” অর্থাৎ, সগ্রক সম্পর্কে ধারণা গ্রহণের জন্য সমগ্রক থেকে একটা সংজ্ঞা বেঁধে নেওয়ার প্রক্রিয়াই নমুনায়ন হিসেবে পরিচিত। নমুনায়ন হচ্ছে সমগ্রকের একটা অংশবিশেষ। তার
P. V. Young বলেছেন, “A statistical sample is a meniature picture on cross-section of which the sample is taken.” অর্থাৎ, নমুনা হচ্ছে কোন সমষ্টির একটা ক্ষুদ্র অংশ যা সমগ্রক থেকে চয়ন করা হয়ে থাকে।
W. G. Goode এবং P. K. Hatt বলেছেন, “A sample as the name implies is a smaller representation of a large whole.” অর্থাৎ, আক্ষরিক অর্থে নমুনা হল বৃহৎ সমষ্টির একটি প্রতিনিধিত্বশীল ক্ষুদ্রাংশ।
S. P. Gupta এবং M. P. Gupta এর মতে, “Sampling is only a total which helps to know the characteristics of the universe or population by examining only a small part of it.” অর্থাৎ, নমুনায়ন
হল সমগ্রকের একটি পরীক্ষালব্ধ অংশমাত্র যা সমগ্রকের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরতে পারে। তাঁরা নমুনায়নের সংজ্ঞায় সমগ্রক সম্পর্কে প্রতিনিধিত্বকে আলোচনায় এনেছেন। মূলত সমগ্রকের একটি উপযুক্ত প্রতিনিধি নমুনায়নের মাধ্যমে উপস্থাপন করা যায়।
Black Champion 4, “The process of drawing those elements from the larger
population or universe is called sampling.” অর্থাৎ, নমুনায়ন হল বৃহত্তর সমগ্রক থেকে কিছু উপাদান বাছাই
করার প্রক্রিয়া। নমুনায়ন প্রসঙ্গে Earl R. Babbie বলেছেন, “বৃহত্তর উপাদান সম্পর্কে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার লক্ষ্যে বৃহত্তর
উপাদান থেকে কতিপয় উপাদান নির্বাচনের প্রক্রিয়াই হচ্ছে নমুনায়ন।” উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একটি গাছে অনেক রকমের আম আছে। আম গাছ থেকে একটি আম সংগ্রহ করা হলে সে আমটি হবে ঐ গাছের নমুনা আম। আর নমুনা হিসেবে একটি আম সংগ্রহের প্রক্রিয়া হল নমুনায়ন।
সুতরাং বলা যায়, সমগ্রক থেকে এর সকল বৈশিষ্ট্যের প্রতীক হিসেবে যে অংশ গবেষণার তথ্য সংগ্রহের জন্য বিজ্ঞানসম্মত বিশেষ প্রক্রিয়ায় গ্রহণ করে সমগ্রক সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ব্যবহার করা হয় তাকে নমুনা বলে। আর যে প্রক্রিয়ায় এ নমুনা নির্বাচন করা হয় তাকে নমুনায়ন বলে।
নমুনায়নের সুবিধা : নমুনায়ন বহুল প্রচলিত পদ্ধতি হিসেবে পরিচিত। নিম্নে নমুনায়নের সুবিধাগুলো আলোচনা করা হল :
১. ব্যয় কম : নমুনায়ন প্রক্রিয়ায় ব্যয় কম। এ প্রক্রিয়ায় অনুসন্ধানকার্য পরিচালনার জন্য শুমারি জরিপ অপেক্ষা অনেক কম ব্যয় হয় । নমুনায়নে সমগ্রকের একটি অংশ নির্বাচন করা হয় বলে এর ব্যয় কম।
২. স্বল্প সময় : নমুনায়ন প্রক্রিয়ায় শুমারি অনুসন্ধানকার্য পরিচালনা অপেক্ষা স্বল্প সময় ব্যয় হয়। জরুরি বিষয়ে অল্প সময়ে অনুসন্ধানকার্য পরিচালনার জন্য নমুনায়ন অধিক ফলপ্রসূ। নমুনায়নে সুনির্দিষ্ট বিষয়ে গবেষণা করা হয় বলে এতে স্বল্প সময় ব্যয় হয়।
ongefth
৩. দ্রুত ফলাফল প্রদান : নমুনায়ন প্রক্রিয়ায় শুমারি অনুসন্ধানকার্য পরিচালনা অপেক্ষা দ্রুত ফলাফল প্রদান করা যায়। কোন বিষয়ে যদি দ্রুত ফলাফল প্রদান সম্ভব হয়, তাহলে গবেষণাকার্য দ্রুত সম্পাদন করা যায়। নমুনায়নের মাধ্যমে। কোন বিষয়ে দ্রুত ফলাফল প্রদান করা যায়।
৪. কম শ্রম ব্যয় : নমুনায়ন প্রক্রিয়ায় কতিপয় বিষয়ে গবেষণা করা হয়। এতে ব্যয় কম হয়। তাছাড়া স্বল্প সময়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়। নমুনায়নে শ্রমও কম ব্যয় হয়।
৫. নির্ভরশীল : নমুনায়নে স্বল্প বিষয়ে গবেষণা করা হয়। স্বল্প বিষয় গবেষণার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা ফলে নমুনায়নের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য বেশি নির্ভরশীল হয়।
:
হয়। এর
৬. সঠিক তথ্য প্রদান : নমুনায়নে বাছাইকৃত অংশ পর্যবেক্ষণ করা হয়। এজন্য নমুনায়ন কোন বিষয়ে সঠিক তথ্য প্রদানে সক্ষম।
৭. প্রশিক্ষণগত সুবিধা : নমুনায়নে অপেক্ষাকৃত কমসংখ্যক কর্মীর প্রয়োজন হয়। কেননা এতে উপাত্তের সংখ্যা কম।
৮. গবেষণা মূল্যায়ন : এমন কিছু গবেষণা আছে যেখানে বারবার গবেষণা মূল্যায়নের প্রয়োজন হয়। কিন্তু এ প্রক্রিয়াটি তত কঠিন নয়। নমুনায়নের মাধ্যমে সহজেই গবেষণা মূল্যায়ন করা যায়।
৯. সহজ পরিচালনা পদ্ধতি : নমুনায়নে তথ্য কম; শ্রম কম ব্যয় হয়। দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লোকের উপস্থিতিতে খুব সহজেই নমুনায়ন পদ্ধতি পরিচালনা করা যায়।
নমুনায়নের অসুবিধা : নমুনায়ন বহুল প্রচলিত পদ্ধতি হলেও এর কিছু অসুবিধা আছে। নিম্নে এগুলো আলোচনা করা হল ঃ
১. প্রতিনিধিত্বের সমস্যা : নমুনায়ন প্রক্রিয়া সমগ্র অংশ থেকে প্রতিনিধি নির্বাচন করা হয় মাত্র। প্রতিনিধিত্বের সমস্যা এ প্রসঙ্গে থেকে যেতে পারে। অনেক সময় প্রতিনিধিত্বশীল একক কোন বিষয়ে সঠিকভাবে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না। সঠিকভাবে কোন একক প্রতিনিধিত্ব করতে না পারলে কোন বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায় না।
২. নমুনা প্রাপ্তির সমস্যা : নমুনায়নে ক্ষুদ্র অংশের বিচার বিশ্লেষণ করা হয়। সমগ্রক হতে যে কতিপয় বিষয় নমুনায়ন করা হয়, সেগুলো বিশ্লেষণের মাধ্যমেই গোটা বিষয় সম্পর্কে ধারণা করা হয়। অনেক সময় নির্বাচিত অংশ
পরবর্তীতে গবেষণার জন্য সহজভাবে পাওয়া যায় না।
৩. দক্ষতার প্রয়োজন : সঠিকভাবে নমুনায়ন প্রক্রিয়া পরিচালনার জন্য দক্ষতার প্রয়োজন। উপযুক্ত ও সঠিক নমুনা নির্বাচনের জন্য দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তির প্রয়োজন। আবার দক্ষ ব্যক্তির অপ্রতুলতাও রয়েছে।
Tolls ৪. নমুনার বৈচিত্র্য : বৈচিত্র্যময় পৃথিবীর সবকিছুই বিচিত্র। সমগ্রকের প্রতিটি একক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। নমুনায়নে নির্দিষ্ট বিষয়ে গবেষণা করা হয়। এ নির্দিষ্ট বিষয়ের সাথে অপরাপর বিষয়ের মিল না থাকার সম্ভাবনাই বেশি থাকে।
৫. বাস্তবতার অভাব : নমুনায়নে যে বিষয়ে গবেষণা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, অপরাপর বিষয়ে সে সিদ্ধান্ত নাও আসতে পারে। ধরে নেওয়া হয় নমুনা একক যে ফলাফল দেয় অপরাপর বিষয় একই ফলাফল প্রদানে সক্ষম। কিন্তু এভাবে সিদ্ধান্ত নিলে ফলাফলে বাস্তবতার অভাব দেখা দেয়।
১৬. পক্ষপাতিত্বের সমস্যা : নমুনায়ন প্রক্রিয়ায় পক্ষপাতিত্বের সমস্যা অন্যতম সমস্যা। নমুনায়ন প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত ব্যক্তিদের নিকট থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তাই পক্ষপাতিত্বের সম্ভাবনা থেকে যায়।
৭. সমজাতীয়তার অভাব : নমুনায়নের আরেকটি সমস্যা হচ্ছে সমজাতীয়তার অভাব। নমুনায়নে গোষ্ঠী সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়, কিন্তু স্বতন্ত্র বিষয়ে ধারণা লাভের জন্য নমুনায়ন ফলপ্রসূ নয়।
উপসং হার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি, নমুনায়নের একদিকে যেমন কতিপয় সুবিধা আছে, তেমনি কিছু অসুবিধাও আছে। নমুনায়নে কিছু অসুবিধা থাকলেও এর সুবিধা বেশি। কোন বিষয়ে অল্প সময় অর্থ, শ্রম, মেধা ব্যয় করে সিদ্ধান্ত গ্রহণে নমুনায়ন অধিক ফলপ্রসূ।