নদীর ধারে খ্যাপার মত ঘুরিতে ঘুরিতে তাহার মনে হয় পৃথিবীর যত খাদ্য ও যত নারী আছে একা সব দখল করিতে না পারিলে তাহার তৃপ্তি হইবে না।”- ব্যাখ্যা কর।

উৎস : ব্যাখ্যেয় গদ্যাংশটুকু ত্রিশোত্তর বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রাণপুরুষ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বিরচিত ‘প্রাগৈতিহাসিক’ শীর্ষক ছোটগল্প থেকে চয়ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ : এখানে ভিখুর লাগামহীন কামস্পৃহা সম্পর্কে গল্পকার উল্লিখিত অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
বিশ্লেষণ : বসন্তপুরের বৈকুণ্ঠ সাহার গদিতে ডাকাতি করতে গিয়ে দুর্ধর্ষ ভিখু ডান কাঁধে বর্শার একটা খোঁচা খেয়ে পালিয়ে আসতে সক্ষম হলেও তার ডান হাতটা চিরদিনের জন্য পঙ্গু হয়ে যায়। অগত্যা সে মহকুমা শহরের বাজারের পথে একটা তেঁতুল গাছের তলায় বসে ভিক্ষা করতে শুরু করে। ভিক্ষালব্ধ পয়সায় পেট পুরে খেয়ে এবং আরামে ঘুমিয়ে কিছুদিনের মধ্যেই সে তার পূর্বেকার শক্তি ও স্বাস্থ্য ফিরে পায়। ফলে তার কামতৃষ্ণা প্রখর হয়ে ওঠে। নারীসঙ্গহীন এই নিরুৎসব জীবন তার আর ভালো লাগে না। ইতোমধ্যে তার আয় কমে আসে। সামনে শীত। শীতের মধ্যে বিন্নুর ভাঙা চালায় রাত কাটানো সম্ভব হবে না। মাথা গোঁজার ভালো ঘর এবং দুবেলা খাওয়ার নিশ্চয়তা না পেলে কোন ভিখারিণী তার সাথে থাকতে রাজি হবে না। এসব কথা চিন্তা করতে করতে ডিথু পাগলের মতো নদীর ধারে ঘুরে বেড়ায়। সেখানে খ্যাপার মতো ঘুরতে ঘুরতে তার মনে হয়, জগতের সব খাদ্য ও নারী একা দখল করতে না পারলে তার তৃপ্তি হবে না। এভাবে ভিখুর মধ্যে কাম ও লালসার বিকৃত বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
মন্তব্য : ক্ষুধা ও কামসর্বস্ব ভিখু প্রাগৈতিহাসিক, আদিম ও বন্য মানুষের প্রতিমূর্তি ছাড়া আর কিছুই নয় ।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%97%e0%a7%88%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%97%e0%a6%b2%e0%a7%8d%e0%a6%aa-%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a6%bf/