অথবা , নগরসভা বলতে কী বুঝ ? অথবা , নগরসভা কাকে বলে ? অথবা , নগরসভা সম্পর্কে আলোচনা কর ।
উত্তর ৷ ভূমিকা : প্রাচীন গ্রিসের রাজনৈতিক ব্যবস্থা ছিল নগরকেন্দ্রিক । এক একটি নগর নিয়ে এক একটি রাষ্ট্র গঠিত হতো । নগররাষ্ট্রের সমাজব্যবস্থায় নগরসভা একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান । এথেন্সের নাগরিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে নগরসভা অন্যতম ।
নগরসভা : এথেন্সের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে নগরসভা বা এক্লেসিয়া সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ও সর্বোচ্চ রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান । নগররাষ্ট্রের সমুদয় পুরুষ নাগরিকদের সমন্বয়ে এ নগরসভা গঠিত । এ সভা একপ্রকার শহরসভা যাতে ২০ বছর বয়স্ক প্রতিটি পুরুষ নাগরিক অংশগ্রহণ করতে পারতো । কোন মহিলা এর সভ্য হতে পারতো না । সচরাচর এতে উপস্থিতির সংখ্যা ছিল মাত্র কয়েক হাজার এবং ছয় হাজার সভ্য মিলিতভাবে কোরাম গঠন করতে পারতো । নিয়মিতভাবে বছরে দশ বার এর অধিবেশন বসতো এবং কাউন্সিলের আহ্বানে একটি জরুরি অধিবেশনও বসতে পারতো এ সভার ডিক্রি আইনে পরিণত হতো । আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে এটাই ছিল সর্বেসর্বা । এদিক দিয়ে আধুনিক আইনসভার সাথে সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় , নগরসভার কার্যকালের মেয়াদ ছিল নিতান্ত স্বল্প । এতে পুনর্নির্বাচনের ব্যবস্থাও ছিল । এর মাধ্যমে মোটামুটিভাবে সকলেই রাষ্ট্রীয় কার্যে অংশগ্রহণের সুযোগ লাভ করতো ।
প্রশ্ন : এথেন্স ও স্পার্টার সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা কর অথবা , এথেল ও স্পার্টার সমাজব্যবস্থা বর্ণনা কর । অথবা , এথেন্স ও স্পার্টার সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা দাও ।
উত্তর ৷ ভূমিকা : প্রাচীন গ্রিসের সমাজব্যবস্থায় এথেন্স ও স্পার্টা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ । এ নগররাষ্ট্রগুলোর সমাজব্যবস্থা , শাসনব্যবস্থা ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ গ্রিক সমাজ , সভ্যতা এবং শাসন পদ্ধতি ইতিহাস সম্পর্কে জানতে সাহায্য করে । মূলত এ দুটি নগররাষ্ট্র ছিল প্রাচীন গ্রিক নগররাষ্ট্রসমূহের মধ্যে সবচেয়ে উন্নত , সুন্দর ও প্রতিনিধিত্ব মূলক । এথেন্স ও স্পার্টার সমাজব্যবস্থা : এথেন্স ও স্পার্টার সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো :
এথেন্সের সমাজব্যবস্থা : এথেন্সের সমাজব্যবস্থায় সমগ্র জনগোষ্ঠী তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল । এ শ্রেণীগুলো হলো :
১. নাগরিক ( Citizen ) , ২. বিদেশি ( Foreigner ও ৩. দাস ( Slave ) নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. নাগরিক : এথেন্সের জনসমাজের সর্বোচ্চ স্তরে ছিল নাগরিকরণ । নগরের সদস্য হওয়ায় নগরের রাজনীতিতে তারা সক্রিয়ভাবে অশংগ্রহণ করতে পারত । কারণ তাদের পিতামাতা যে নগরের নাগরিক সন্তানগণও সে নগরের নাগরিক বলে গণ্য হতো নাগরিকতার অর্থই হলো নগরের সদস্যপদ লাভ । নগরের সদস্যপদ লাডের ন্যূনতম কাজ হলো নগরসভায় উপস্থিত থাকা । এরা রাজনৈতিক , সামাজিক ও অর্থনৈতিক সকল অধিকার ভোগ করতো ।
২. বিদেশিগণ : প্রাচীন গ্রিসের সমাজব্যবস্থায় দ্বিতীয় স্তরে রয়েছে বিদেশিগণ । এরা দাসদের উপরের স্তরে ছিল । এথেন্সের মতো বাণিজ্য প্রধান নগরে তাদের সংখ্যা ছিল অত্যন্ত বেশি । এরা কেবল অর্থনৈতিক অধিকার ভোগ করতো ।
৩. দাস : সমাজের সর্বনিম্ন স্তরে ছিল দাসগণ । এ দাসদের সংখ্যা ছিল গ্রিসে সর্বজনীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল । দাসগণ সমাজের কোনপ্রকার সামাজিক , রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক এক – তৃতীয়াংশ । দাসপ্রথা প্রাচীন অধিকার ভোগ করতে পারতো না ।
স্পার্টার সমাজব্যবস্থা : স্পার্টার সমাজব্যবস্থায় জনগোষ্ঠী মোট তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত । এ শ্রেণীগুলো হলো : ১. ডোরিয়ান ( Dorian ) , ২. পেরিঅয়কয় ( Perioikoi ) ও ৩. হেলস ( Helots ) ।
১. ডোরিয়ান : ভোরিয়ান বংশোদ্ভূত লোকেরা ছিলেন স্পার্টার সর্বোত্তম শ্রেণীর লোক । তারা সম্পত্তি রাখতে পারলেও কোন ব্যবসায় বাণিজ্যে লিপ্ত হতে পারতেন না । প্রকৃতপক্ষে তারাই ছিল স্পার্টার যথার্থ নাগরিক । শৈশবের থেকে তাদের শিক্ষাজীবন শুরু হতো এবং পরিণত বয়স পর্যন্ত চলতো । এরাই স্পার্টার রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতো । ২. পেরিঅয়কম : এরা ছিল সমাজের দ্বিতীয় বা মধ্যবিত্ত শ্রেণী । এরা মূলত শিশ্ম ও ব্যবসায় – বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতো । এদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকার ছিল তবে কোনরূপ রাজনৈতিক অধিকার ছিল না ।
৩. হেলটস্ ( Helots ) : স্পার্টার সর্বনিম্ন শ্রেণীর লোকদেরকে হেলটস বলা হতো । তারা ছিল মূলত দাস শ্রেণীভুক্ত । কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে প্রভু শ্রেণীর সেবা করাই ছিল তাদের জীবনের মূল উদ্দেশ্য । রাজনৈতিক জীবনে তাদের কোন অধিকার ছিল না এমনকি সামাজিক জীবনেও তারা ছিল পশ্চাৎপদ ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে , প্রাচীন গ্রিসের এথেন্স ও স্পার্টাতে জনগণ তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল । এদের মধ্যে মর্যাদা ও অধিকারের ক্ষেত্রে পার্থক্য ছিল । আজকের ন্যায় সর্বজনীন অধিকার সে যুগে ছিল না ।