দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ বলতে কী বুঝ?

অথবা, দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের সংজ্ঞা দাও ।
অথবা, দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ কাকে বলে?
অথবা, দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ কী?
উত্তর৷ ভূমিকা :
দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের সাহায্যে কার্ল মার্কস এবং ফেডারিখ এঙ্গেলস মানবসমাজ পরিবর্তন ও অগ্রগতি বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক চিন্তার অভ্যুদয় ঘটান। দ্বন্দ্ববাদকে বস্তুজগতের বিশ্লেষণে প্রয়োগ করেন বলে তাদের দর্শন দ্বন্দ্বমূলক নামে পরিচিত।
দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ : দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ বুঝতে হলে দ্বন্দ্বতত্ত্ব বলতে কি বুঝায় – তা আলোচনা করা প্রয়োজন। গ্রিক শব্দ (dialego) থেকে ডায়ালেকটিক্‌স্‌ শব্দটি উদ্ভব ঘটেছে। বিরুদ্ধ পক্ষের যুক্তির অন্তর্নিহিত স্ববিরোধ প্রকাশ করে এবং তা অতিক্রম করে সত্যে উপনীত হওয়ার পদ্ধতিকে প্রাচীন কালে দ্বন্দ্বতত্ত্ব বলা হতো। অনেক প্রাচীন দার্শনিক বিশ্বাস করতেন যে, চিন্তাধারার অভ্যন্তরীণ স্ববিরোধীগুলো উদ্ঘাটন করা এবং পরস্পরবিরোধী মতামতের সংঘাতের মাধ্যমে সত্যে উপনীত হওয়া সম্ভব। পরবর্তীকালে দ্বন্দ্বমূলক যুক্তির বিচারে এ পদ্ধতি প্রাকৃতিক জগতের ব্যাখ্যায় প্রয়োগ করা হয়। এ পদ্ধতি অনুসারে, “বস্তুজগত সর্বদা পরিবর্তনশীল ও গতিময়, বস্তুজগতের পরিবর্তন ও বিকাশ হলো প্রকৃতির অন্তর্নিহিত স্ববিরোধী পরিণতি, পরস্পর বিরোধী প্রাকৃতিক শক্তির ঘাত প্রতিঘাতের ফল।” মার্কসীয় দ্বান্দ্বিক পদ্ধতিতে বস্তুই প্রধান। ‘ভাব’ বস্তু জগতের প্রতিফলন মাত্র। মার্কস দ্বন্দ্ববাদকে ভাববাদী দর্শনের অধীনতা থেকে মুক্ত করে বস্তুবাদী জগতে গতি, পরিবর্তন, রূপান্তর ও বিকাশ দ্বন্দ্ববাদে প্রয়োগ ঘটান । তাই মার্কসীয় দ্বন্দ্বমূলক পদ্ধতিকে দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ নামে আখ্যায়িত করেন।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, মার্কসের দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ তত্ত্বটি মানবসমাজের পরিবর্তন ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এ তত্ত্বটি জগতের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রয়োগ ঘটানো যায় ।