অথবা, আকাশ ও কাল বলতে জৈনরা কী বুঝায়?
অথবা, আকাশ বা দেশ কী?
অথবা, দেশ ও কাল কী?
উত্তর৷ ভূমিকা : জৈন দর্শনে দ্রব্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। জৈনদের মতে, দ্রব্য মাত্রই সৎ বা তত্ত্ব। সৎ এর ন্যায় দ্রব্যের উৎপত্তি, বিনাশ ও স্থায়িত্ব এ তিনটি লক্ষণ আছে। গুণের দিক দিয়ে দ্রব্য নিত্য বা স্থিতিশীল আব পর্যায় বা আগন্তুক গুণের দিক হতে দ্রব্য উৎপত্তি ও বিনাশশীল । জৈনরা দ্রব্যকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করেছেন তার মধ্যে অন্যতম দুটি জীব এবং অজীব । অজীব আবার পাঁচ প্রকার। যথা : পুদগল, কাল, আকাশ বা দেশ, ধর্ম ও অধর্ম।
দেশ ও কাল: নিম্নে প্রশ্নানুসারে দেশ ও কাল নিয়ে আলোচনা করা হলো :
দেশ বা আকাশ : বিস্তৃত বস্তুকে ধারণ করাই আকাশ বা দেশের কাজ। জীব পুদগল, ধর্ম ও অধর্ম সবই আকাশে অবস্থান করে। আকাশের বা দেশের অস্তিত্বকে প্রত্যক্ষের সাহায্যে জানা যায় না। অনুমানের সাহায্যে জানতে হয়। যেসব দ্রব্য বিস্তৃত তাদের বিস্তারের জন্য কোন দেশ বা স্থান প্রয়োজন। এ স্থানই আকাশ রা দেশ। সুতরাং আকাশ আছে। জৈন মতে, আকাশ এবং বিস্তৃতি সমার্থক আছে। জৈন মতে, আকাশ বা দেশ দু’প্রকার। যথা : লোকাকাশ এবং আলোকাকাশ। যে আকাশে জীব বা আত্মা, অন্যান্য দ্রব্য এবং বিশ্বব্রহ্মাণ্ড অবস্থান করে তাকে লোকাকাশ বলে। আর বিশ্বব্রাহ্মণ্ড অতিক্রম করে যে মহাশূন্য অবস্থান করে তাকে আলোকাকাশ বলে। জৈন মতে, আলোকাকাশে কোন দ্রব্যই অবস্থান করে।
কাল : যে দ্রব্যের দ্বারা অপরাপর দ্রব্যের অবিচ্ছিন্নতা, পরিণতি, গতি, নতুনত্ব ও পুরাতনত্ব সম্ভব হয় তাকে কাল বলে। জৈন মতে, কাল নাস্তিকায় হলেও কালের সত্তা কেউ অস্বীকার করতে পারে না, কারণ কালই জাগতিক ঘটনাগুলো ঘটিয়ে থাকে। তবে কালকে প্রত্যক্ষ করা যায় না। কালকে অনুমানের সাহায্যে জানতে হয়। যেমন- যখন বলি, আমার বন্ধুটি আমার কাছে অনেকক্ষণ ছিল, এর অর্থ কালের বিভিন্নক্ষণে বন্ধুর আমার নিকট অবস্থান করা। দ্রব্যের অবিচ্ছিন্নতা, দ্রব্যের পরিণতি, দ্রব্যের গতি, দ্রব্যের নতুনত্ব ও পুরাতনত্ব এ সবই কাল সাপেক্ষ।
জৈন মতে কাল দু’প্রকার। যথা : অনন্তকাল ও খণ্ডকাল। কাল অবিভাজ্য এর আদিও নেই অন্তও নেই। তবে ব্যবহারিক প্রয়োজনে কালকে খণ্ড খণ্ড করা যায়। এ খণ্ড কালকেই সময় বলা হয় এবং এ সময়ই দিন, ঘণ্টা
প্রভৃতিতে বিভক্ত ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, জৈনরা দ্রব্য সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে দ্রব্যের বিভিন্ন রূপের মধ্যে দেশ বা আকাশ ও কালকে অন্যতম দুটি দ্রব্য বলে স্বীকার করেছেন। জৈনদের দেশ ও কাল সম্পর্কিত আলোচনা পরবর্তী ভারতীয় দর্শনে প্রভাব বিস্তার করেছিল।