দাস প্রথা সম্পর্কে যা জান লিখ।

অথবা, দাসপ্রথা ব্যবস্থার বিশদ পরিচয় দাও।
অথবা, দাসপ্রথা কী? এ সম্পর্কে যা জান লেখ।
অথবা, দাসপ্রথা ব্যবস্থার সামগ্রিক পরিচয় লিপিবদ্ধ কর।
উত্তরা৷ ভূমিকা :
‘Social stratification’ বা সামাজিক স্তরবিন্যাস প্রত্যয়টি একটি সমাজতান্ত্রিক প্রত্যয়। ভূতত্ত্বে ‘Strata’ প্রত্যয়টি মাটি বা শিলার বিভিন্ন স্তর (Strata) বুঝাতে ব্যবহৃত হয়। ভূতত্ত্বের এ প্রত্যয়টি সমাজের উঁচুনিচু বিভিন্ন শ্রেণি বা মর্যাদার মানুষকে বুঝাতে সমাজবিজ্ঞানে গৃহীত হয়েছে। স্তর প্রত্যয়টিকে সিঁড়ি বা মইয়ের ধাপের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। স্তরবিন্যাস বলতে বুঝায় যেভাবে স্তরগুলো সজ্জিত বা বিন্যস্ত। অতএব সামাজিক স্তরবিন্যাস অর্থ সমাজের ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা শ্রেণির উঁচুনিচু অবস্থান বা বিন্যাস ব্যবস্থা।
দাসপ্রথা (Slavery) : দাসপ্রথা ‘Social stratification’-এর প্রাচীনতম রূপ। অসম সামাজিক সম্পর্কের চরম দৃষ্টান্ত ‘Slavery’. পৃথিবীর সর্বত্র প্রাচীনসভ্যতা ‘Slavery’-র উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। বিভিন্ন সমাজে বিভিন্ন সময়ে দাসপ্রথা বিক্ষিপ্ত অবস্থায় দেখা যায়। দাসপ্রথার দুটি উদাহরণ লক্ষ্য করা যায়। যথা :
প্রথমত, প্রাচীন সমাজ বিশেষ করে প্রাচীন গ্রিস ও রোমান সমাজের দাসব্যবস্থা।
দ্বিতীয়ত, অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীর আমেরিকার দক্ষিণাংশের রাজ্যসমূহে ‘তৃতীয়পদ পর্যন্ত’ এই ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল।
উপর্যুক্ত দুই প্রকার দাসপ্রথা অর্থনৈতিক স্বার্থে প্রতিষ্ঠিত হয়। দাসপ্রথার বিকাশের সাথে এক ধরনের অভিজাত শ্রেণির উদ্ভব ঘটে যারা দাসের শ্রমের উপর নির্ভরশীল। ‘Max Weber’ দাসপ্রথাকে ‘Industrial system’ হিসেবে গণ্য করেছেন। পাশ্চাত্য সমাজে দাসপ্রথার পূর্ণ বিকাশ ঘটেছিল।
দাসপ্রথার বৈশিষ্ট্য: দাসপ্রথার বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ :
প্রথমত, দাসের একমাত্র পরিচয় যে, তারা প্রভুর সম্পত্তি। তাদের উপর প্রভুর অবাধ কর্তৃত্ব স্বীকৃত। হবহাউস বলেছেন, “দাস হচ্ছে এমন একজন মানুষ যাকে সমাজের আইন এবং প্রথা অন্যের সম্পত্তি হিসেবে বিবেচনা করে।”দ্বিতীয়ত, সামাজিকভাবে দাসরা ছিল ঘৃণার পাত্র। সম্মান ও মর্যাদার প্রশ্নই আসে না।
তৃতীয়ত, দাসকে বাধ্যতামূলকভাবে পরিশ্রম করতে হতো—এ বিষয়ে তার কোন ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ছিল না। দাসপ্রথা সমাজকে দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত করেছিল :
১. দাস মালিক : এরা দাসদের উৎপাদন ভোগকারী।
২. দাস : এরা ছিল উৎপাদনের হাতিয়ার। দাসপ্রথার দু’টি প্রধান রূপ হলো বাণিজ্যিক ও গার্হস্থ্য। বাণিজ্যিক দাসপ্রথার উদাহরণ হলো আঠারো শতকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আবাদী জমিতে নিযুক্ত আফ্রিকা থেকে আনীত দাসরা, আর গার্হস্থ্য দাসপ্রথা ভারতীয় উপমহাদেশে প্রচলিত ছিল। দাসদের জীবনমরণের অধিকার ছিল প্রভুদের মর্জির উপর। তারা পণ্যের মতো হাট-বাজারে বিক্রি হতো। তাদের কান নাগরিক অধিকার ছিল না। তাদের শ্রমের ফসল দাস মালিকেরা আত্মসাৎ করতো। মূলত প্রাচীন রোম ও গ্রিক ভ্যতা গড়ে উঠেছিল দাসপ্রথার উপর ভিত্তি করে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপেক্ষিতে বলতে পারি যে, সামাজিক স্তরবিন্যাস প্রত্যয়টি একটি মাজতান্ত্রিক প্রত্যয়। সামাজিক স্তরবিন্যাস অর্থ সমাজে ব্যক্তি গোষ্ঠী বা শ্রেণির উঁচুনিচ অবস্থা বা বিন্যাস ব্যবস্থা। মাজিক স্তরবিন্যাসের অন্যতম স্তর হলো দাসপ্রথা। দাসদের জীবনমরনের অধিকার ছিল প্রভুদের উপর। তারা পণ্যের তো হাটেবাজারে বিক্রি হতো। তাদের কোন নাগরিক অধিকার ছিল না। মূলত প্রাচীন রোম ও গ্রিক সভ্যতা গড়ে ঠেছিল। দাসপ্রথার উপর ভিত্তি করে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%b7%e0%a6%b7%e0%a7%8d%e0%a6%a0-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%a4/