দাসপ্রথা কী?

অথবা, দাসপ্রথা বলতে কী বুঝ?
অথবা, দাসপ্রথা কাকে বলে?
অথবা, দাসপ্রথা বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
সমাজ সর্বদা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলে। সামাজিক পরিবর্তন চিরন্তন। এক সমাজ পরিবর্তিত হয়ে অন্য সমাজে রূপ লাভ করে। কোন সমাজব্যবস্থাই স্থায়ী রূপ লাভ করে না। সমাজ বিকাশের একটি পর্যায়ে দাসভিত্তিক সমাজের উদ্ভব ঘটে। দাস সমাজ দাসপ্রথার উপর প্রতিষ্ঠিত। দাসপ্রথা কতকগুলো দিক দিয়ে অন্যান্য বিষয় থেকে স্বাতন্ত্র্যমণ্ডিত। প্রাচীনকালে সমগ্র পৃথিবী জুড়ে দাসপ্রথা বিদ্যমান ছিল। ভারতবর্ষেও দাসপ্রথার অস্তিত্ব ছিল। তবে ইউরোপের ন্যায় ভারতবর্ষে অমানবিক দাসপ্রথার উদ্ভব ঘটে নি।
দাসপ্রথা : দাস প্রথা হলো ব্যক্তিগত পর্যায়ে আধিপত্য বশ্যতা সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে উদ্ভূত একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান। এ সম্পর্কের মাত্রা বেশ বিস্তৃত। এর একদিকে রয়েছে প্রভুর হাতে দাসের জীবন মরণের অধিকার, অন্যদিকে রয়েছে সুচিন্তিতভাবে প্রণীত পারস্পরিক দায়দায়িত্বের আইনগত বিধান। কিন্তু এসবের মূল উপাদানটি হলো, আপন স্বার্থোপযোগী কাজে দাসকে বাধ্য করা প্রভুর অধিকার। সমগ্র পৃথিবীর ইতিহাসে দাসপ্রথা কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সূচনা করেছে। আদিম সাম্যবাদী সমাজের পতনের মধ্য দিয়ে দাসপ্রথার উদ্ভব ঘটে। সমগ্র প্রাচীনকাল ধরে পৃথিবীতে দাসপ্রথার
প্রচলন ছিল। প্রাচীন রোমান ও গ্রিক সভ্যতায় দাসপ্রথা প্রচলনের কথা জানা যায়।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : বিভিন্ন তাত্ত্বিক ও সমাজবিজ্ঞানী ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দাসপ্রথাকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। নিম্নে তাদের দেওয়া কয়েকটি সংজ্ঞা উপস্থাপন করা হলো :
এল. টি. হবহাউস (L.T. Hobbhouse) দাসের সংজ্ঞা প্রসঙ্গে বলেছেন, “দাস হচ্ছে সেই ব্যক্তি যাকে আইন ও প্রথা অন্যের সম্পত্তিতে পরিণত করে। চরম অবস্থায় দাস সম্পূর্ণভাবে অধিকারহীন অস্থাবর সম্পত্তি। কখনও তাকে গাধা বা গরুর মতোই রক্ষা করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পরিষ্কারভাবে বলতে গেলে দাস তার বিচার শক্তি ও ব্যক্তিত্ব হারিয়ে ফেলে, মানবীয় অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়, এমনকি বাঁচার অধিকার থেকেও সে বঞ্চিত।”
কার্ল মার্কস (Karl Marx) দাস সমাজ সম্পর্কে বলেছেন, “দাস সমাজ হলো প্রথম শ্রেণীবিভক্ত সমাজ। এ সমাজে তিনি দু’টি বিরোধধর্মী শ্রেণীর অস্তিত্ব লক্ষ্য করেছেন। এগুলো হলো দাস মালিক ও দাস।”
উপসংহার : উপর্যুক্ত সংজ্ঞার আলোকে বলা যায় যে, সামাজিক স্তরবিন্যাসের একটি অন্যতম ধরন হচ্ছে দাসপ্রথা। মূলত দাস প্রথানির্ভর সমাজ বলতে এমন অসমতার সমাজকে বুঝায় যেখানে কিছু লোক সম্পূর্ণভাবে অথবা আংশিকভাবে অধিকারবিহীন।