অথবা, দাসপ্রথার বৈশিষ্ট্য কী কী?
অথবা, দাসপ্রথার বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ কর।
করা উত্তর৷ ভূমিকা : সমাজ সর্বদা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলে। সামাজিক পরিবর্তন চিরন্তন। এক সমাজ পরিবর্তিত হয়ে অন্য সমাজে রূপ লাভ করে। কোন সমাজব্যবস্থাই স্থায়ী রূপ লাভ করে না। সমাজ বিকাশের একটি পর্যায়ে দাসভিত্তিক সমাজের উদ্ভব ঘটে। দাস সমাজ দাসপ্রথার উপর প্রতিষ্ঠিত। দাসপ্রথা কতকগুলো দিক দিয়ে অন্যান্য বিষয় থেকে স্বাতন্ত্র্যমণ্ডিত। প্রাচীনকালে সমগ্র পৃথিবী জুড়ে দাসপ্রথা বিদ্যমান ছিল। ভারতবর্ষেও দাসপ্রথার অস্তিত্ব ছিল।
তবে ইউরোপের ন্যায় ভারতবর্ষে অমানবিক দাসপ্রথার উদ্ভব ঘটে নি।
দাসপ্রথার বৈশিষ্ট্য (Characteristic of slavery) : দাসপ্রথার কতকগুলো বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। এগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. সামাজিক শ্রেণীবিভাজন : দাসপ্রথার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সামাজিক শ্রেণীবিভাজন। এ সামাজিক শ্রেণীবিভাজনের
ক্ষেত্রে দাসপ্রথা লক্ষ্য করা যায়। দাস সমাজে দু’টি শ্রেণী ছিল । যথা : i. দাস মালিক বা মনিব শ্রেণী ও ii. দাস।
২. অর্থনৈতিক স্বার্থ : অর্থনৈতিক স্বার্থে দাসপ্রথার উদ্ভব ঘটানো হয়। দাসপ্রথা সমাজে আভিজাত্যের ধারণার বিকাশ ঘটে। যারা মালিক তারা অভিজাত শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত ছিল। আভিজাত্যকে টিকিয়ে রাখার জন্য দাসপ্রথাকেও টিকিয়ে রাখা হয়েছিল।
৩. মালিকের আজ্ঞাবহ : দাস সর্বদা মালিকের আজ্ঞাবহ। দাসের উপর মনিবের ক্ষমতা অপরিসীম। তারা মনিবের সম্পত্তি।
৪. গির্জাকেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা : দাসপ্রথায় গির্জাকেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থার প্রচলন ছিল। অভিজাতরা আইন প্রণয়নের মাধ্যমে দাসপ্রথা টিকিয়ে রাখত। দাসকে তারা অধিকারের বস্তু হিসেবে মনে করত।
৫. যুদ্ধবন্দিরাই দাসে পরিণত হতো : দাস সমাজে যুদ্ধবিগ্রহ লেগেই থাকত। যুদ্ধে পরাজিতদের দাসে পরিণত করা হতো। দাসদের একটা বড় অংশ ছিল যুদ্ধবন্দি।
৬. অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি কৃষি : দাস সমাজে অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি ছিল কৃষি। অর্থাৎ কৃষিভিত্তিক সমাজব্যবস্থায় দাসপ্রথা টিকে ছিল।
৭. দাসদের অন্যত্র বিক্রি করা : দাস সমাজে কৃষির পাশাপাশি স্বল্প পরিসরে ব্যবসায় বাণিজ্যের প্রচলন ছিল। দাসদেরকে একস্থান থেকে অন্যস্থানে বিক্রি করা হতো।
৮. দাসদের রাজনৈতিক অধিকার নেই : দাসদের কোন রাজনৈতিক অধিকার ছিল না। তারা সরকার গঠন ও পরিচালনা করতে পারত না। সামাজিকভাবে তারা ছিল ঘৃণিত। তারা জনসভায় অংশগ্রহণ করতে পারত না।
৯. দাসরা পণ্যের ন্যায় বিক্রি হতো : দাসরা পণ্যের ন্যায় ছিল। অন্যান্য বাণিজ্যিক পণ্যের ন্যায় দাসদের ক্রয় বিক্রয় করা হতো।
১০. দাসরা মালিকের অধীনে থাকত : দাসপ্রথায় জোরপূর্বক শ্রম আদায় করা হতো। দাসরা ছিল মালিকের অধীন। মালিক তার ইচ্ছামতো দাসদের শ্রমে নিয়োগ করত। দাসরা অবসর কাটাতে পারত না। মালিকের হুকুম তাদেরকে সর্বদা মেনে চলতে হতো।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, দাসপ্রথা হলো একটি প্রাচীন সামাজিক প্রতিষ্ঠান। মূলত, দাসপ্রথা ছিল চরমভাবে অমানবিক, সমাজের এক শ্রেণীর মানুষ দাসদের শোষণ করে আরাম আয়েশ করত। অন্যদিকে, দাসরা মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য ছিল। বর্তমানে সমগ্র পৃথিবীতে দাসপ্রথার বিরুদ্ধে সকলে সোচ্চার।