উৎস : আলোচ্য অংশটুকু রাজদ্রোহী প্রাবন্ধিক কাজী নজরুল ইসলামের ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ প্রবন্ধ থেকে নেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গ : রাজদ্রোহের কারণ ও স্বরূপ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কবি এখানে রাজার দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি সচেতন মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
বিশ্লেষণ : রাজা প্রজার সেবক নন। প্রজাপালন রাজার উদ্দেশ্য নয়, বরং প্রজারাই রাজার সব রকম সুযোগ-সুবিধা ও বিলাসিতার নিশ্চয়তা দেবে এবং সর্বক্ষণ রাজার সেবায় আত্মনিয়োগ করবে এমনই মনোভাব রাজা পোষণ করেন। সেদিক থেকে প্রজারা অর্থাৎ এদেশের মানুষ ব্রিটিশ রাজ্যের দাস বা সেবক অন্য কথায় গোলাম। রাজা প্রজাদের উপর যথেচ্ছাচার করবে, অন্যায়ভাবে মারবে, অপমান করবে, অথচ প্রজাদের পক্ষাবলম্বন করা যাবে না। দাসদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করলে শোষণ বঞ্চনায় হাড় জিরজির করলেও কোন প্রতিবাদ করা যাবে না। প্রতিকার বা প্রতিবিধানের কথাতো বলাই বাহুল্য। এদেশের মানুষ যেন মানুষ নয়। মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার কোন সুযোগ বা অধিকার তাদের নেই। তারা যেমন কোণঠাসা ‘আধমরা’ হয়ে আছে তেমনি থাকবে। অবহেলা, অপমানে, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যে তারা অধঃপাতে যাবে, তাতে রাজার এবং রাজার তোষামোদকারীদের কিছু আসে যায় না। কিন্তু কবি সচেতন মানুষ। তাই দাসদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে তিনি সক্রিয়। তিনি দাসদেরকে তাঁর মতই সচেতন করে তুলতে চান। কবির কবিতায়, উপন্যাসে, প্রবন্ধে, বক্তৃতায়, গানে তারই অনুরণন। প্রতিবাদ, বিদ্রোহ, সংগ্রামে তারই প্রতিফলন। কবির জাগরণী বার্তায় এদেশের মানুষ সচেতন হয়েছে। জেগে উঠেছে, অধিকার আদায়ের জন্য সোচ্চার হয়েছে। রাজার অন্যায় কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে মানুষকে জাগিয়ে তোলাটাই কবির অপরাধ। দাসকে দাস বলেছেন, অন্যায়কে অন্যায় বলেছেন- এটাই তাঁর দোষ। আর এজন্যই তিনি রাজদ্রোহের অভিযোগে অভিযুক্ত রাজকারাগারে বন্দী।
মন্তব্য: সম্পদ অপহরণকারী শাসকেরা শোষণ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার স্বার্থে কবির মতো সচেতন ও বিদ্রোহীদের প্রতি এমন কঠোর আচরণই করে থাকেন।