অথবা, দারিদ্র্যের সংজ্ঞা দাও।
অথবা, দারিদ্র্য কাকে বলে?
অথবা, দরিদ্র্যতা কী?
অথবা, দারিদ্র্য কারা?
উত্তর : ভূমিকা : “The study of poverty is central to any examination of social inequality, including an analysis of who is poor and the reasons for their poverty.” – Jary & Jary. পৃথিবীর সর্বত্র দারিদ্র্য অন্যতম প্রধান সামাজিক সমস্যা। যাবতীয় সামাজিক সমস্যা দারিদ্র্য থেকেই উদ্ভূত। দারিদ্র্য সামাজিক উন্নয়নের পথে বড় বাধা হিসেবে কাজ করে। দারিদ্র্য কারও কাম্য না হলেও পৃথিবীতে বিভিন্ন মাত্রায় এবং বিভিন্ন আঙ্গিকে দারিদ্র্য দেখা দিচ্ছে।
দারিদ্র্য (Poverty) : বাংলাদেশের মানুষের জন্য দারিদ্র্য হচ্ছে চরম অভিশাপস্বরূপ। বাংলাদেশে ‘দারিদ্র্য’ সবচেয়ে বড় সামাজিক সমস্যা হলেও এ প্রত্যয়টি দেশ-কাল-পাত্রভেদে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। অর্থাৎ দারিদ্র্য ধারণাটি পুরোপুরি আপেক্ষিক। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যে অবস্থাকে দারিদ্র্য বলে চিহ্নিত করা হয় বাংলাদেশে সে অবস্থা দারিদ্র্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত নাও হতে পারে। যেমন- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রাইভেট কার না থাকাকে দারিদ্র্যের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : বিভিন্ন মনীষীর দৃষ্টিতে এবং গ্রন্থে দারিদ্র্য বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত হয়েছে। নিম্নে দারিদ্র্যের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সংজ্ঞা উপস্থাপন করা হলো :
সমাজবিজ্ঞানী গিলিন এবং গিলিন (Gillin & Gillin) বলেছেন, “ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য সমাজে যারা মৌলিক চাহিদা পূরণার্থে অক্ষম এবং স্বল্প আয়ের কারণে শারীরিক ও মানসিক চাহিদাসমূহ পূরণ করতে পারে না তারাই দরিদ্র।” জেরি এবং জেরি (Jary & Jary) এ প্রসঙ্গে বলেছেন, “যারা সমাজে বস্তুগত এবং সাংস্কৃতিক উপাদানের সমন্বয়ে
নিজেদের দৃঢ় অস্তিত্ব সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে পারে না তারাই দরিদ্র।” (The lack of sufficient material and cultural resources to sustain a healthy existence.) বাংলাদেশ সরকারের পঞ্চম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় দারিদ্র্য প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, “দারিদ্র্য বলতে জীবনযাত্রার ন্যূনতম মানের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদের মালিকানা ও ব্যবহারের অধিকার থেকে বঞ্চিত মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও মানসিক অবস্থাকে বুঝায়।”
The World Book Encyclopedia তে বলা হয়েছে, “সমাজে আদর্শগতভাবে বেঁচে থাকার জন্য আয় ও সম্পদের অভাবকেই দারিদ্র্য বলে। তবে দারিদ্র্যের ধারণাটি স্থান ও কালভেদে পরিবর্তনীয়।”
The New Encyclopedia Britanica তে বলা হয়েছে, “নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা ও সমাজে আদর্শ স্থানীয়ভাবে বেঁচে থাকার অক্ষমতা তথা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানের ন্যায় মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের অক্ষমতাকে দারিদ্র্য বলে।” International Encyclopedia of Social Science 3, “Social poverty implies not merely economic inequality (or property, income, living standards etc.) but also social inequality
that is a relation of inferiority, dependence or exploitation.”
সমাজকল্যাণ বিশারদ আয়েশা নোমান বলেছেন, “সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে দারিদ্র্য বলতে সে স্তরকে বুঝায়, যেখানে জীবনযাত্রার মান মৌলিক চাহিদা পূরণে অক্ষম।” অমর্ত্য সেন এ প্রসঙ্গে বলেছেন, “দারিদ্র্য একটি আপেক্ষিক বঞ্চনা; যা একজনের কাছে দারিদ্র্য অন্যের কাছে নাও হতে পারে।”
উপসংহার : উপরিউক্ত সংজ্ঞাগুলোর প্রেক্ষিতে বলতে পারি, দারিদ্র্য একটি আপেক্ষিক প্রত্যয়। সমাজে মানুষ কেবল অর্থনৈতিক দারিদ্র্যের শিকার নয়; মানুষ অর্থনৈতিকভাবে ছাড়াও সামাজিক, মানসিক, স্বাস্থ্যগত, সংস্কৃতিগত, বস্তুগতভাবেও দরিদ্র হতে পারে। বেঁচে থাকার জন্য মানুষের মৌলিক চাহিদাসমূহ পূরণের অক্ষমতাকেই মূলত দারিদ্র্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তাই দারিদ্র্য কতকগুলো বিষয়কে নির্দেশ করে।