উত্তর : ভূমিকা : বাংলার ইতিহাসে কররানী বংশের শাসনামল একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। তারা ছিলেন আফগান বা পাঠান জাতির একটি শাখা। ঐতিহাসিক জন স্টুয়ার্ট বলেন, “শেরশাহ ও তার পুত্র ইসলাম শাহ কর্তৃক আফগান গোত্র বওজীপুর রাজ্য ও খাওয়াসপুর তান্ডার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল লাভ করলে তারা অদ্ভুতভাবে একটি পৃথক বংশের সূচনা করে। কররানী বংশের মধ্যে একজন
উল্লেখযোগ্য শাসক ছিলেন দাউদ খান কররানী। নিম্নে দাউদ খান কররানী সম্পর্কে তুলে ধরা হলো :
দাউদ খান কররানী : বায়েজীদ কররানীর মৃত্যুর পর ভ্রাতা দাউদ খান কররানী ১৫৭২ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। তিনি ছিলেন কররানী বংশের শেষ স্বাধীন
নরপতি। তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের অধীনতা অস্বীকার করলে আকবর তার সেনাপতি মুনিম খানকে তার বিরুদ্ধে প্রেরণ
করেন। দাউদ সেনাপতি লোদী খান ও গুজার খানের সাহায্যে মুনিম খানকে মূল্যবান উপহার পাঠিয়ে এবং আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করে প্রাথমিক মুঘল অভিযান প্রতিহত করেন। পরবর্তীতে
আবার তিনি বিদ্রোহ করেন।
১. আকবরের সাথে যুদ্ধ: ১৫৭৩ সালে আকবর মুনিম খানের সাহায্যে টোডরমলকে প্রেরণ করেন। দাউদ খান উজির লোদী খান, কুতলু লোহানী, গুজার খান এবং শ্রীহরির সাথে একত্রিত হয়ে মুঘল বাহিনীকে পরাজিত করে। অতঃপর মুনিম খান এক বিশাল বাহিনী নিয়ে দাউদ খানকে আক্রমণ করে। ১৫৭৪ খ্রিস্টাব্দে আকবর সসৈন্যে অগ্রসর হয়ে হাজীপুর অধিকার করেন। দাউদ খান ভয়ে তান্ডায় পলায়ন করলে আকবর পাটনা
অধিকার করেন। পরে মুঘল বাহিনী তান্ডা অধিকার করে। ১৫৭৫ সালে দাউদ আকবরের বাহিনীর সাথে তুকোরাই যুদ্ধ করে মুঘল বাহিনীর কাছে পরাজিত হয়ে সন্ধি স্থাপন করেন।
২. রাজমহলের যুদ্ধ: ১৫৭৫ সালের ২৩ অক্টোবর মুঘল সেনাপতি মুনিম খান মৃত্যুবরণ করলে দাউদ খান কররানী চুক্তিশর্ত ভঙ্গ করে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। ১৫৭৫ সালে আকবর খান জাহানকে সেনাপতি নিযুক্ত করে
বাংলা অভিযানে প্রেরণ করেন। দাউদ খান মুঘল বাহিনীর সাথে ১৫৭৬ সালে রাজমহলের যুদ্ধে অংশ নেয়। যুদ্ধে দাউদ খান পরাজিত হন এবং চুক্তিভঙ্গের অভিযোগে তাকে হত্যা করা হয়। ফলে বাংলার আফগান স্বাধীন সালতানাত সমাপ্ত হয়।
উপসংহার : দাউদ খানের পতনের সাথে সাথে বাংলায় আফগানদের সার্বভৌমত্বের অবসান ঘটে। এর ফলে বাংলার ২৪০ বছরের স্বাধীন সত্তাও বিলুপ্ত হয়। কররানী বংশের শাসনামলে বাংলা একটি শক্তিশালী রাজ্য ছিল। এ বংশের পতনের সাথে বাংলা মুঘল শাসনের অন্তর্ভুক্ত হয়।