দলীয় দ্বন্দ্বের বৈশিষ্ট্য লিখ ।

অথবা, দলীয় দ্বন্দ্বের প্রকৃতি তুলে ধর।
অথবা, দলীয় দ্বন্দ্বের প্রকৃতির মানদণ্ড তুলে ধর।
অথবা, দলীয় দ্বন্দ্বের প্রকৃতির বিষয়বস্তু আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : সহযোগিতার বিপরীতে অবস্থান করে দলীয় দ্বন্দ্ব। দলে দ্বন্দ্ব থাকাটাই স্বাভাবিক। দ্বন্দ্বের পাশাপাশি দলে সমাধানও রয়েছে। দ্বন্দ্বের কতিপয় বৈশিষ্ট্য বা প্রকৃতি পরিলক্ষিত হয়।
দলীয় দ্বন্দ্বের বৈশিষ্ট্য : দলীয় দ্বন্দ্বের যেসব বৈশিষ্ট্য বা স্বরূপ রয়েছে নিম্নে দেয়া হলো :
১. সচেতন প্রক্রিয়া : দলীয় দ্বন্দ্ব একটি পরিকল্পিত সচেতন কার্যপ্রক্রিয়া। এতে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর প্রভাব বিদ্যমান থাকে। এতে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর পরাজয় বা নিজেদের পরাজয়ের সম্ভাবনা থাকে। এ প্রসঙ্গে সমাজবিজ্ঞানী পার্ক ও বার্জেস বলেছেন, “Conflict is always conscious and evokes the deepest emotions and strongest passions.”
২. পরিবর্তনশীলতা : দ্বন্দ্ব মাত্রই পরিবর্তনশীল। অর্থাৎ দ্বন্দ্ব সব সময় এক রকম থাকে না। দলের যে কোন ধরনের
দ্বন্দ্ব এর মূল্যবোধ, আদর্শ, বিশ্বাস, স্বার্থ প্রভৃতির প্রেক্ষিতে পরিবর্তন হয়।
৩. সর্বজনীন ব্যাপার : দ্বন্দ্ব একটি সর্বজনীন বিষয়। এটি যে কোন সময় যে কোন ব্যাপারে সংঘটিত হতে পারে। দলের ক্ষতিসাধন ছাড়াও দ্বন্দ্ব দলের গতিশীলতা আনয়নে ভূমিকা রাখে। এটি অতীতে ছিল, বর্তমানে আছে এবং
ভবিষ্যতেও থাকবে।

  1. দলীয় আন্তঃক্রিয়ার সংঘাতমূলক দিক : দলীয় আন্তঃক্রিয়ার একটি নেতিবাচক দিক হলো দলীয় দ্বন্দ্ব। এর সূত্রপাত হয় দলীয় স্বার্থকে কেন্দ্র করে। প্রতিপক্ষকে প্রতিহত, ঘায়েল, নিশ্চিহ্ন বা পরাস্ত করা এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। on of
    ৫. সমাধানযোগ্যতা : দলীয় দ্বন্দ্বের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো এর সমাধানযোগ্যতা। দ্বন্দ্ব যে কারণেই সৃষ্টি হোক না কেন, এটি সমাধানযোগ্য। দলে দ্বন্দ্ব যেভাবেই সৃষ্টি হোক না কেন, দলের অন্যান্য সদস্যরা তা সমাধানের জন্য প্রচেষ্টা চালায়।
    ৬. ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রক্রিয়া : ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রক্রিয়া দলীয় দ্বন্দ্বের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। কেননা দলীয় দ্বন্দ্ব মূলত ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে সূচনা হয়। পরবর্তীতে সদস্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে দুটি পক্ষ সৃষ্টি হয়। দ্বন্দ্ব মূলত উদ্ভব হয় দলের অভ্যন্তরে।
    ৭. প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করা : প্রতিক্ষককে পরাস্ত করা দ্বন্দ্বের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। প্রতিপক্ষ পরাজিত হলে দ্বন্দ্বের অবসান হয় । প্রতিপক্ষ পরাজিত হলে দলের আর কোন উদ্দেশ্য থাকে না ।
    ৮. ক্ষণস্থায়ী প্রক্রিয়া : দ্বন্দ্ব সব সময় দলে বিরাজ করে না। এটি অবিরাম চলে না। মূলত রাগ, বিদ্বেষ, হিংসা প্রভৃতির অবসান হলে দ্বন্দ্বও প্রশমিত হয়। সিএন সংকর রাও এর মতে, “Conflict never takes place continuously, it takes place occasionally, No society can sustain itself in a state of continuous conflict.”
    উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, দলীয় দ্বন্দ্ব এসব বৈশিষ্ট্য বা প্রকৃতি বহন করে চলে। দলীয় দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য চেষ্টা করা হয়। দ্বন্দ্ব অনেকাংশে নিরসন হলেও তা পুরোপুরি মুক্ত করা সম্ভব নয়। এটি সমাজের মধ্যে বিরাজ করে। অর্থাৎ সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বহাল রয়েছে।