তোমার সমাজের যে কোন একটি সমস্যার উপর একটি গবেষণা নকশা তৈরি কর।

অথবা, একটি গবেষণার নকশা তৈরি করে দেখাও।
অথবা, একটি গবেষণা নকশা প্রস্তুত করে দেখাও।
অথবা, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে যেকোন একটি সমস্যার উপর গবেষণা নকশা
প্রস্তুত কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
সমাজ গবেষণার সমস্যা চিহ্নিতকরণ, কল্পনা গঠন ও চলক স্থিরকরণের পর গবেষক প্রকৃত অসুনন্ধানের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, যা হলো গবেষণার উপযুক্ত নকশা প্রণয়ন । বিজ্ঞানসম্মতভাবে কোনো সমস্যা সম্পর্কে অনুসন্ধান চালাতে হলে সেজন্য পরিকল্পনা করতে হয়। কারণ প্রত্যেক গবেষকই অনুসন্ধান কর্ম পরিচালনা করতে গিয়ে কখন, কিভাবে, কোথায়, কার কাছ থেকে, কত সময়, অর্থ ও শ্রম ব্যয়ে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে কল্পনা যাচাই বা গবেষণা করবেন সে সম্পর্কে বাস্তবসম্মত চিন্তাভাবনা করে থাকেন ।
গবেষণা নকশা : বস্তুত যে কোন বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের শুরু হয় প্রশ্ন আকারে বর্ণিত একটি সমস্যা ব্যক্তকরণের মধ্য দিয়ে। আর ঐ প্রশ্নের সঠিক উত্তর পাওয়ার জন গবেষকের কর্মপরিকল্পনাই হচ্ছে গবেষণার নকশা। নকশা প্রণয়নের মাধ্যমে একটি গবেষণার অন্তর্ভুক্ত পর্যায় বা ধাপগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনা যায় ।
একটি কার্যকরী গবেষণা নকশা : আমাদের সমাজে বিদ্যমান সমস্যার উপর একটি গবেষণা নকশা নিম্নে তুলে ধরা হলো :
ক. গবেষণা শিরোনাম : বাংলাদেশে নারীদের আর্থসামাজিক অবস্থার একটি পর্যালোচনা।
খ. গবেষণার তত্ত্বাবধায়ক : ড. ……..
গ. উপস্থাপনায় বা প্রস্তাবনায় :
১. ভূমিকা : গবেষণার কাঠামো।
২. বাংলাদেশের সামাজিক সাংস্কৃতিক পরিবেশ নারীর কিছু তাত্ত্বিক পর্যালোচনা : পর্দা, নারীর অর্থনৈতিক মূল্য এবং উৎপাদনের উৎসের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ, গ্রামীণ নারী, শহুরে নারী, সাম্প্রতিকালে বাংলাদেশের পরিবর্তন । সহযোগী অধ্যাপক . বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, রাজশাহী। .বি. এস. এস. পরীক্ষার্থী; সেশন ঃ….. রেজি. নং
৩. নারী এবং আইন : ভূমিকা, সিভিল ল, ব্যক্তিগত আইন, বিবাহ, তালাক, উত্তরাধিকার, অভিভাবকত্ব, ভরণপোষণ, বিবাহ প্রথা ও আইনগত অধিকার, আইন এবং বাস্তবের মধ্যে তফাৎ, সুপারিশ, বিবাহ, বহুবিবাহ, তালাক, যৌতুক, উত্তরাধিকার, হিন্দু আইন ।
৪. নারী এবং শিক্ষা : ভূমিকা, সংবিধান, শিক্ষার হার, বয়সভিত্তিক শিক্ষা, শিক্ষার ক্ষেত্রে সাফল্য, ভর্তি, উচ্চ শিক্ষা, স্কুল ত্যাগ ও বাদ পড়ার হার, স্কুল এবং অর্থায়ন, বয়স্ক শিক্ষা।
৫. নারী এবং কর্মসংস্থান : ভূমিকা, সংবিধান শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণের হার, কৃষি অকৃষি, কর্মরত মেয়েদের সমস্যা, মহিলাদের কর্মসংস্থানের প্রতি মনোভাব, মহিলাদের জন্য উন্নয়নকর্মসূচি, কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি, বার্ডের অধীনে কংসংস্থান, আর. আর. ডি. পি. ব্রাক, পাটের কাজ, বিসিক কনসার্ণ, গণসাহায্য কেন্দ্র, স্বনির্ভর আন্দোলন, মাদার ক্লাব, নারী পুনর্বাসন কেন্দ্র, জাতীয় মহিলা সমিতি, অন্যান্য সংস্থা, সরকারি নীতিমালা, কর্মরত মহিলাদের বৈশিষ্ট্য এবং কাজ করার কারণ, মহিলাদের উপর আধুনিক প্রযুক্তির প্রভাব।
৬. সংখ্যাগত বৈশিষ্ট্য : ভূমিকা, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১৯৫১-১৯৭৪, বয়স কাঠামো, লিঙ্গ হার, লিঙ্গভিত্তিক বয়স কাঠামো, বিবাহের বয়স, পটভূমি অনুযায়ী বিবাহের বয়স, বিবাহের অবস্থা, বিবাহের ধরন, বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত, বহুবিবাহ, নারী পুরুষের মধ্যে বিবাহজনিত তফাৎ, বিবাহের ক্ষেত্রে বয়সের তফাৎ, নারী প্রধান পরিবার, লিঙ্গভিত্তিক বিবাহ সম্পর্কে অন্যান্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আলামত, বিবাহের সময়ে নারী পুরুষের বৈবাহিক অবস্থা, পূর্ববর্তী বিবাহের সময় তাদের বয়সের তফাৎ, “বর কনের বিবাহের বয়সের তফাৎ, তালাকপ্রাপ্ত পুরুষ এবং নারীদের পুনর্বিবাহের সুযোগ, সন্তান ছাড়া ও সন্তানসহকারে বিবাহের সুযোগ, সন্তান না থাকার ফলে তালাকের হার, পুরুষ এবং নারীর বৈবাহিক জীবনচক্র, মৃত ্যুর হার, প্রত্যাশিত জীবন, বয়সভিত্তিক মৃত্যুর হার, মাতৃমৃত্যু, শিশু ও বাল্য মৃত্যু, জন্মহার ।
৭. নারীর মর্যাদা ও পূর্ণ উৎপাদনমূলক আচরণ : ভূমিকা, শিক্ষা এবং জন্মহার, নারীশিক্ষার সাথে জন্মদানের সম্পর্ক, মাঠ পর্যায়ে কিছু তথ্য, শিক্ষা ও জন্মদান, নারীশিক্ষা এবং জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর ব্যবহার, নারীশিক্ষা এবং গর্ভনিরোধক দ্রব্যের সম্ভাব্য চাহিদা, নারীশিক্ষার সাথে জন্মদানের সম্পর্ক, অনিয়মিত সম্পর্ক, নারী শ্রমিকের মর্যাদা এবং জন্মদান, নারী শ্রমিকের অংশগ্রহণ এবং জন্মদান, মাঠ পর্যায়ে অভিজ্ঞতা, বৈবাহিক সম্পর্ক এবং জন্মদান, মাঠ পর্যায়ের কিছু অভিজ্ঞতা, বিবাহ এবং জন্মদানের বয়স সমসায়িক কিছু ব্যবস্থা, মাঠ পর্যায়ের কিছু অভিজ্ঞতা।
৮. বাংলাদেশের নারীদের সংগঠিত সামাজিক আন্দোলন, অতীত বনাম বর্তমান : ভূমিকা, ব্রিটিশ শাসনামল (১৭৫৭- ১৯৪৭) পাকিস্তান আমল (১৯৪৭-১৯৭১), বাংলাদেশ আমল ।
৯. গবেষণার উদ্দেশ্য : ক. বাংলাদেশের নারীদের আর্থসামাজিক অবস্থা জানা এবং খ. প্রয়োজনীয় কর্মপরিকল্পনা ও সুপারিশমালা তৈরি করা।
১০. গবেষণার অনুকল্প : ক. বাংলাদেশের নারীদের আর্থসামাজিক অবস্থা ভলো নয় এবং খ. প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও সচেতনতার অভাবেই নারী উন্নয়ন স্তিমিত, ফলে সমাজ উন্নয়নের ধীরগতি।
১১. গবেষণার সমগ্রক ও নমুনায়ন : গবেষণার সমগ্রক হিসেবে সারা বাংলাদেশকে দেখা হবে এবং নমুনায়ন করা হবে। দেশের ছয়টি বিভাগ থেকে ৩টি করে জেলা নিয়ে মোট ১৮টি জেলা ।
১২. গবেষণার পদ্ধতি : এ গবেষণায় Cluster method এর মাধ্যমে জেলা ও গ্রাম নির্ধারণ করে পরবর্তিতে | Random Sampling এর মাধ্যমে উপাত্ত নেয়া হবে এবং বিভিন্ন পেশাজীবী নারীদের পর্যবেক্ষণ করা হবে।





নোট : উক্ত গবেষণা নকশার উদাহরণটির বি আই ডি এস এর গবেষক রফিকুল হুদা চৌধুরী ও মিস নিলুফার রায়হান আহম্মেদ ১৯৮০ সালে বাংলাদেশের নারীদের উপর একটি গবেষণা পরিচালনা করেন, যার শিরোনাম ছিল ‘Female Status in Bangladesh’ থেকে নেয়া হয়েছে ।