অথবা; “গ্রাম সরকার একটি যথার্থ স্থানীয় সরকার” তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।
অথবা, “গ্রাম সরকার যথার্থ স্থানীয় সরকার”-ব্যাখ্যা কর।
অথবা, স্থানীয় সরকার হিসেবে গ্রাম সরকার সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : গ্রাম সরকার (Village Government) ব্যবস্থা বাংলাদেশের স্থানীয় শাসনের ক্ষেত্রে নতুন কোনো বিষয় নয়। স্বাধীনতা পরবর্তী সরকারগুলোর প্রায় সকলেই ভিন্ন ভিন্ন নামে এ ধরনের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রয়াস চালিয়েছে। এক্ষেত্রে অবশ্য প্রথম কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তিনি গ্রামকে সকল প্রকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার যে অব্যাহত প্রচেষ্টা গ্রহণ করেন, তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান জোট সরকার এ ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ গ্রহণ করে।
গ্রাম সরকার যথার্থ স্থানীয় সরকার : সরকার গ্রাম বাংলার উন্নয়ন ও স্থানীয় প্রশাসনকে আরও তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত করার লক্ষ্যে এবং গ্রাম পরিষদ আইনের বাধ্যবাধকতা ও দলীয় অঙ্গীকার পূরণের লক্ষ্যে ‘গ্রাম সরকার’ গঠনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। এ গ্রাম সরকার হচ্ছে স্থানীয় সরকারের সবচেয়ে নিম্নস্তরের ইউনিট। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা প্রয়োজন, ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকার চারস্তরবিশিষ্ট স্থানীয় শাসন সংক্রান্ত আইন পাস করে। স্তরগুলো হলো : প্রথম স্তর- গ্রাম পরিষদ, দ্বিতীয় স্তর- ইউনিয়ন পরিষদ, তৃতীয় স্তর- উপজেলা পরিষদ এবং চতুর্থ স্তর- জেলা পরিষদ। আইন অনুযায়ী গ্রাম পরিষদ দেশের প্রত্যেক ইউনিয়নের নয়টি ওয়ার্ডে প্রতিষ্ঠিত হবে এবং উপজেলা ও জেলা পরিষদসমূহ যথাক্রমে দেশের প্রতিটি উপজেলা ও জেলায় প্রতিষ্ঠিত হবে। যাহোক, প্রতিটি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য নির্ধারিত এবং বিস্তৃত কার্যক্রম থাকে। উদাহরণস্বরূপ, গ্রাম পরিষদ প্রতিটি গ্রামে উৎপাদন বৃদ্ধি, স্থানীয় অবকাঠামো (যেমন- পাকা সড়ক, সেতু ও নর্দমা) রক্ষণাবেক্ষণ, স্থানীয় প্রাকৃতিক সম্পদের ভিত্তি উন্নয়ন, প্রাইমারি স্কুল, মাদ্রাসা, মক্তব ইত্যাদির তত্ত্বাবধান, ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে অভিভাবকদের অনুপ্রাণিত করা, স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যসেবা সম্বন্ধে সচেতনতা সৃষ্টি, বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ প্রকল্প বাস্তবায়ন, বিশেষ করে নলকূপ স্থাপনের জায়গা ঠিক করে দেওয়া আর্থসামাজিক কর্মকাণ্ড গ্রহণে সমবায় বা সংস্থা প্রতিষ্ঠা, গুরুত্বপূর্ণ পরিসংখ্যানসমূহ, যেমন- জন্ম, মৃত্যু, বিবাহের উপাত্ত সংগ্রহ ও
সংরক্ষণ, গ্রামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, গ্রামের সকল গৃহস্থালির মধ্যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক জরিপ চালানো ইত্যাদির জন্য উন্নয়ন প্রকল্প কর্মসূচি প্রণয়নে অংশগ্রহণ করা। গ্রাম পরিষদ তাদের কার্যক্রম ও সমস্যা সম্পর্কে ইউনিয়ন পরিষদকে অবহিত করবে। অন্য তিন স্তরের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহ স্থানীয় পর্যায়ে উন্নয়ন কার্যক্রমের অর্থায়নে সম্পদ উন্নয়নের কর্তৃত্বসহ বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্ব ও কর্তৃত্বে অনুরূপ কার্যক্রমে নিয়োজিত থাকবে। স্থানীয় সরকারের প্রায় সকল কার্যাবলিই গ্রাম সরকারের উপর বর্তায়। পারতপক্ষে, গ্রাম সরকার ইউনিয়ন পরিষদের সহায়ক সংগঠন হিসেবে কাজ করার কথা। স্থানীয় পর্যায়ে সরকার ব্যবস্থা, অর্থাৎ কর্পোরেশন, পৌরসভা, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, গ্রাম, ও অপরাপর সংস্থার কর্মতৎপরতা হয়েছে স্থানীয় সরকারের উদাহরণ। এ অর্থেও গ্রাম সরকার হচ্ছে যে সরকার ক্ষুদ্র এলাকায় বা গ্রামে অবস্থান
করে এবং কিছু অর্পিত ক্ষমতা প্রয়োগ করে। তাই আমরা এক কথায় বলতে পারি, গ্রাম সরকার হচ্ছে প্রকৃত স্থানীয় সরকারের নমুনা।
উপসংহার : গ্রাম সরকারের ইতিহাস বা পটভূমি, এর গঠন প্রণালী এবং গ্রামের উন্নয়নে বিভিন
্ন কার্যবিধি বা ভূমিকা আলোচনা সাপেক্ষে একথা নিশ্চিত করে বলা যায় যে, গ্রাম সরকারই স্থানীয় সরকারের যথার্থ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্রামোন্নয়ন ও গ্রামীণ প্রশাসনিক কাঠামোর নেতৃত্ব দিতে পারে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, জিয়াউর রহমান সে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে দৃষ্টিতে রেখে ১৯৮০ সালে স্বনির্ভর গ্রাম সরকার চালু করেছিলেন। পরবর্তী সরকারগণ নীতিগতভাবে তা মেনে নিয়ে কেবলমাত্র পদ্ধতি ও রূপরেখাতে কিছু কিছু পরিবর্তন সাধন করেছেন। এ থেকে প্রমাণিত হচ্ছে, গ্রামে স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠিত হওয়া বা এর প্রয়োজনীয়তা সকলেই অনুধাবন করেন। কাজেই এ একটি বিষয়ে নিশ্চয়ই সকল রাজনৈতিক দলের মধ্যে সত্যিকার ঐক্য অর্জিত হতে পারে।