তাহার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা দিল, কিন্তু মুখ দিয়া কথা বাহির হইল না।”— ব্যাখ্যা কর।

উৎস : ব্যাখ্যেয় অংশটুকু ত্রিশোত্তর বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কথাসাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘পুঁইমাচা’ শীর্ষক ছোটগল্প থেকে চয়ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ : মেটে আলু চুরি করে এনে ধরা পড়ার পর মায়ের জেরার মুখে ক্ষেন্তির যে দূরবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল, তাই আলোচ্য পংক্তিতে প্রকাশ পেয়েছে।
বিশ্লেষণ : দরিদ্র ব্রাহ্মণ সহায়হরি চাটুয্যে প্রায়ই চেয়ে না চেয়ে পরের জিনিস বাড়িতে নিয়ে আসতেন। কিন্তু তাঁর স্ত্রী অন্নপূর্ণা স্বামীর এ সকল কর্মকাণ্ড একদম পছন্দ করতেন না। বড় মেয়ে ক্ষেন্তি পিতার এ সব দুষ্কর্মের সহযোগী হতো। একদিন সহায়হরি ক্ষেন্তিকে সাথে করে বরজপোতার জঙ্গল থেকে মাটি খুঁড়ে একটা বড় মেটে আলু বাড়িতে নিয়ে এলেন। অন্নপূর্ণা এ সময় পুকুর ঘাটে গিয়েছিলেন। পরে বাড়ি ফিরে মেটে আলুটি দেখে তাঁর সন্দেহ হলো। তিনি স্বামী ও মেয়েকে জেরা শুরু করলেন। সহায়হরি আত্মত্মরক্ষার্থে ডাহা মিথ্যা করে জানালেন যে, ও পাড়ার ময়শা চৌকিদার তাকে সম্মান করে আলুটি দিয়েছে। স্বামীর কথা অন্নপূর্ণা বিশ্বাস করলেন না। কারণ কিছুক্ষণ পূর্বে তিনি দুর্গাদের বাড়িতে যাওয়ার পথে বরজপোতার জঙ্গলে খুপ খুপ শব্দ শুনতে পেয়েছিলেন। তাঁর ধারণা ওই জঙ্গল থেকেই আলুটি আনা হয়েছে। তিনি বড় মেয়ে ক্ষেন্তিকে ডেকে জেরা শুরু করলেন। মেটে আলুটি বাপ-বেটিতে জঙ্গল থেকে তুলে এনেছে কি না জানতে চাইলে ক্ষেন্তির গলা শুকিয়ে গেল। সে মায়ের রক্তচক্ষুর দিকে তাকিয়ে একবার আলুটির দিকে দৃষ্টিপাত করল। ভয়ে আর সংকোচে তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা দিল। তার মুখ দিয়ে একটি শব্দও বের হলো না। সহজ সরল মেয়েটি মাকে খুব ভয় পেত। মায়ের কাঠিন্য অবহিত ছিল। তাই চুরির অপরাধবোধ জাগ্রত হতে তার এতটুকু সময় লাগল না।
মন্তব্য : চৌর্যবৃত্তির অপরাধবোধের কারণেই ক্ষেন্তির এমন দুরবস্থা হয়েছিল। এজন্যই ক্ষেন্তি টুশব্দটি করতে পারেনি।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%aa%e0%a7%81%e0%a6%81%e0%a6%87%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%9a%e0%a6%be-%e0%a6%97%e0%a6%b2%e0%a7%8d%e0%a6%aa-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%ad%e0%a7%82%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%ad%e0%a7%82%e0%a6%b7/