তার শরীর নিতান্ত দুর্বল ও মন অত্যন্ত অস্থির হইয়া পড়িল।”— ব্যাখ্যা কর।

উৎস : আলোচ্য অংশটুকু স্বনামাধন্য কথাসাহিত্যিক আবুল মনসুর আহমদ রচিত ‘হুযুর কেবলা’ গল্প থেকে চয়ন
প্রসঙ্গ : পীরের মুরিদ হওয়ার পর ধ্যান-জপ ও কৃচ্ছ্রতা সাধন করতে গিয়ে এমদাদের যে দূরবস্থা হয়েছিল তার বর্ণনা প্রসঙ্গে গল্পকার উক্তিটি করেছেন।
বিশ্লেষণ : মনের অস্থিরতা দূর করার মানসে আধ্যাত্মিক জগতে প্রবেশ করার লক্ষ্য নিয়ে এমদাদ সুফি সাদুল্লাহর শরণাপন্ন হলে সুফি সাহেব তাকে এক কামেল পীরের কাছে নিয়ে যান। পীর সাহেবের কথাবার্তা, আদব-কায়দা, শান-শওকত প্রভৃতি দেখার পর এমদাদ বিস্মিত ও অভিভূত হয়ে যায়। যথার্থ লোকের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে ভেবে সে পীর সাহেবের মুরিদ হয়ে গেল। নতুন মুরিদ পেয়ে হুযুর নিজের লতিফার যিকির জারি করে সেই যিকির এমদাদের লতিফায় নিক্ষেপ করে দিলেন। এমদাদ সাগ্রহে প্রথম লতিফা যিকির-জলী শুরু করে দিল। দিনরাত সে চোখ বুজে ‘এল্‌হু’ ‘এলহু’ করতে লাগল। পীর সাহেব এমদাদকে বলেছিলেন যে, এ সাধনায় সফল হলে তার রুহ ঘড়ির কাঁটার ন্যায় কাঁপতে থাকবে। কিন্তু সাধ্যমত চেষ্টা করেও এমদাদ তার কলবকে লতিফায় মুতাওয়াজ্জাহ করতে সমর্থ হলো না। তার রুহ ঘড়ির কাঁটার মতো কাঁপার পরিবর্তে বাড়িতে ফুফু আম্মার কাছে ফিরে যাওয়ার জন্য ছট্‌ফট্ করতে লাগল। এ অস্থিরতার মধ্য দিয়ে বেশ কিছুদিন কেটে গেল। কঠোর সাধনা করতে গিয়ে তার শরীর ও মনের বারোটা বেজে গেল। অনাহার আর অনিদ্রার কারণে তার চোখ জোড়া কোটরে ঢুকে গেল। এমদাদের শরীর নিতান্ত দুর্বল ও মন সাংঘাতিকভাবে অস্থির হয়ে পড়ল। সে একথা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারল যে এমন করে আর কিছুদিন অতিবাহিত হলে তার রুহ জেম্স থেকে মুক্ত হয়ে আলমে-আমরে পৌছে যাবে। অর্থাৎ এমনভাবে কিছুদিন কাটলে এমদাদকে মরতে হবে।
মন্তব্য : পীর সাহেবের পাল্লায় পড়ে এমদাদের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার এমন অবনতি হলো যা তাকে মৃত্যুর দোরগোড়ায় পৌছে দিয়েছিল।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%b9%e0%a7%81%e0%a6%af%e0%a7%81%e0%a6%b0-%e0%a6%95%e0%a7%87%e0%a6%ac%e0%a6%b2%e0%a6%be-%e0%a6%97%e0%a6%b2%e0%a7%8d%e0%a6%aa-%e0%a6%86%e0%a6%ac%e0%a7%81%e0%a6%b2-%e0%a6%ae%e0%a6%a8%e0%a6%b8/