উত্তর : সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ রচিত ‘নয়নচারা’ গল্পে আলোচ্য উদ্ধৃতির মাধ্যমে দুর্ভিক্ষপীড়িত ক্ষুধার্ত মানুষগুলোর বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেছেন। ক্ষুধার্ত মানুষগুলোর জীবনে রাতের অন্ধকারের পরিবেশ যে আরও ভয়ঙ্কর রূপ নিয়ে হাজির হয় তা গল্পকার বোঝাতে চেয়েছেন। নয়নচারা গ্রামের আমু, ভুতো, ভুতনি দুর্ভিক্ষের শিকার হয়ে ক্ষুধার যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে গ্রাম থেকে শহরে আসে জীবিকার অন্বেষণে । কিন্তু জীবিকার কোন সন্ধান না পেয়ে আমুর ক্ষুধা তাড়িত অবসন্ন দেহখানী এক মুঠো ভাতের আশায় শহরের অলিগলি ঘুরে ফিরে। কোনো দিন তারা দুটো খেতে পেলেও তা জীবনধারণের জন্যে অসম্ভব হয়ে পড়ে। শহরে আমুর মতো দুর্ভিক্ষ-পীড়িত মানুষেরা শহরের অলিতে- গলিতে দুমুঠো খাদ্যের অন্বেষণে ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কাছে আত্মসমর্পণ করে। আমুর মনে হয় এক বিশাল অন্ধকার যেন হিংস্রতায় পাশবিক ইচ্ছায় নিষ্ঠুর ভাব-গ্রাস করার জন্য তার দিকে এগিয়ে আসছে। এই শহরে আমুর মতো ক্ষুধাতাড়িতেরা মর্মান্তিকভাবে পরাজিত, প্রতিবাদ কিংবা প্রতিরোধ অসম্ভব। কেননা দুর্ভিক্ষের করাল গ্রাসাচ্ছিত নির্দয় সময়ের কিনারায় দাঁড়িয়ে চারিদিকে মৃত্যুর যে ছায়া নেমে আসে তা থেকে আমুদের মুক্তি নেই। দুর্ভিক্ষ কবলিত মানুষগুলো দারুণভাবে পরাজিত হয়ে অন্নহীন অবস্থায় খড়কুটোর মতো রাজপথে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকে। রাত নামলেই ফুটপাত ক্ষুধার্ত মানুষের বিছানায় পরিণত হয়। রাতে ভুতনিটা বড় কাশে। একবার কাশতে আরম্ভ করলে আর থামে না। অন্যদিকে ভুতনির ভাই ভূতোও গলায় একটানা আওয়াজ হয়। চারদিকে একটা চাপা উত্তেজনা- এছাড়া অবশিষ্ট সময় নীরব, শান্ত। এ রাত যেন তাদের জীবন থেকে আর শেষ হতে চায় না। সার্বিক বিচারে বলা যায়, কষ্টকর সময় মানুষের জীবন থেকে যে সহজে পার হতে চায় না তা আলোচ্য উক্তিতে প্রকাশিত।তাছাড়া কষ্টকর সময়কে মানুষের যে আর কষ্টকর এবং দীর্ঘ মনে হয় তা আলোচ্য অংশে আভাসিত।