উৎস : উদ্ধৃত অংশটুকু যৌবনের প্রাবন্ধিক কাজী নজরুল ইসলামের ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ প্রবন্ধ থেকে গৃহীত হয়েছে।
প্রসঙ্গ : প্রবীণ বিচারক এবং তারুণ্যদীপ্ত প্রাবন্ধিকের দৃষ্টিভঙ্গি ও আদর্শগত মিলবন্ধন হবে কিনা সে সম্পর্কে এখানে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন রাজবন্দী কবি।
বিশ্লেষণ : রাজদ্রোহে অভিযুক্ত কবির বিচারকার্যে রায় প্রদানকারী বিচারক বয়সে প্রবীণ। ব্রিটিশ রাজশক্তির সাথে তাল মিলিয়ে, তাদের কণ্ঠে সুর মিলিয়ে, তাদেরই স্বভাবজাত হয়ে যিনি বিচারক পদে নিযুক্ত হয়েছেন। তিনি স্বাভাবিকভাবেই তাদেরই পক্ষাবলম্বন করবেন এটাই যুক্তিযুক্ত। যদিও তাঁর বয়স হয়েছে, মৃত্যু হাতছানি দিয়ে ডাকছে তাঁকে তবুও তাঁর মনমানসিকতার পরিবর্তন হবে কবি এমন আশা করেন না। তবে শেষ সময়ে প্রকৃত আইনের প্রতি, বাস্তব অবস্থার প্রতি তাঁর সচেতনতা জাগতেও পারে, এটাই কবির ভরসা। কিন্তু এ বিষয়ে কোন নিশ্চয়তা নেই। কারণ কবি এ দেশীয় রাজশক্তির জুলুম, অত্যাচার, ক্ষমতা প্রয়োগের তাণ্ডব দেখেছেন ও শুনেছেন। শোষিত ও নিপীড়িতের কান্না তাঁর হৃদয় স্পর্শ করেছে। তাদের অসহায়, হতাশাগ্রস্ত মূর্তি তাঁর অন্তর মথিত করেছে। তিনি শাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে তাদের কথাই লিখেছেন, রাজশক্তির বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন। এদেশের স্বাধীনতা এ দেশের মানুষের মুক্তিই এখন তাঁর ব্রত। তারুণ্যের অমিতশক্তি নিয়ে তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় হয়েছেন। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা, মানবতা প্রতিষ্ঠাই তাঁর আদর্শ। কিন্তু বিচারকের আদর্শ রাজশক্তির প্রতি অকুণ্ঠ আনুগত্য। তবে দু’জনই কবি। একজন অস্ততারা আর একজন উদয়তারা। একজনকে ডাকছে মৃত্যু আর একজনকে ডাকছে স্বাধীনমুক্ত জীবন। এ দু’বিপরীত মেরুর বিপরীত আদর্শের মিলন হবে বলে কবি মনে করেন না। এ ব্যাপারে কবির সংশয় সন্দেহ ব্যাপক।
মন্তব্য : রাজশক্তিকর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত বিচারক প্রবীণ হলেও ধামাধরা আর কবির কল্যাণকর্ম আদর্শ স্বাধীনতার সোপান রচনায় উৎসর্গীকৃত । কাজেই এ দু’বিপরীত পক্ষের সংযোগ সন্দেহাতীত নয়, বরং অসম্ভব।