তাঁহার এই অত্যন্ত অগোছানো নিতান্ত নিরীহ এবং একটু অধিক মাত্রায় ভোজনপটু মেয়েটিকে পরের ঘরে অপরিচিত মহলে পাঠাতে তাঁহার বুক উদ্বেল হইয়া উঠতেছিল।”— ব্যাখ্যা কর।

উৎস : ব্যাখ্যেয় অংশটুকু ত্রিশোত্তর বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কথাসাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত পুঁইমাচা শীর্ষক ছোটগল্প থেকে চয়ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ : দরিদ্র ব্রাহ্মণ সহায়হরি চাটুয্যের অবিবেচক কন্যা ক্ষেন্তির শ্বশুরবাড়ি গমনের প্রাক্কালে স্ত্রী অন্নপূর্ণার মনে যে শঙ্কার উদ্রেক হয়েছিল সে সম্পর্কে গল্পকার মন্তব্যটি করেছেন।
বিশ্লেষণ : স্নেহময়ী মা অন্নপূর্ণা তাঁর বড় মেয়ে ক্ষেন্তির স্বভাব চরিত্র সম্পর্কে অবগত ছিলেন। অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে অরক্ষণীয়া ক্ষেন্তির বিবাহ সম্পন্ন হলো। ক্ষেন্তিকে এখন শ্বশুরালয়ে যেতে হবে। মেয়েকে বিদায় দেওয়ার সময় দুশ্চিন্তায় অন্নপূর্ণার বুক উদ্বেল হয়ে উঠল । নিজের মেয়েকে তিনি ভালো করেই জানতেন। ক্ষেন্তি ছিল অত্যন্ত অগোছানো প্রকৃতির। কোন কাজই সে ঠিকমতো গুছিয়ে করতে পারত না। বাপের বাড়িতে বসে এই অপরাধের জন্য তাকে প্রতিনিয়ত মায়ের বকুনি শুনতে হতো। ক্ষেন্তি ছিল নিতান্ত নিরীহ ও গোবেচারা প্রকৃতির। ভালোমন্দ বুঝে চলার ক্ষমতা তার ছিল না। এছাড়া সে ছিল ভোজনপটু। খেতে খুব ভালোবাসত। কিন্তু শ্বশুরবাড়িতে তো এসব চলবে না। সেখানকার মানুষ এই সহজ সরল মেয়েটিকে যদি বুঝতে না পারে এই আশঙ্কায় মায়ের মন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ল। বাপের বাড়িতে সে যেভাবে চলাফেরা করেছে শ্বশুরবাড়িতে তো আর তা চলবে না। তারা হয়তো এই হতভাগিনীকে ঠিকমতো চিনতেই পারবে না। অথচ অন্নপূর্ণার দৃষ্টিতে ক্ষেন্তি খুবই ভালো মানুষ। কাজেকর্মে বকো, মারো, গাল দাও টু শব্দটি করবে না। মায়ের ধারণা সে যার ঘরে যাবে, তাদের অনেক সুখ দেবে। ক্ষেন্তির বিদায়ের সময় অন্নপূর্ণা বিদায় জানাতে এসে এ সকল কথা ভেবে ব্যাকুল হয়ে পড়লেন। পরের ঘরে মেয়েকে ভয় ও আতঙ্কে তিনি উদ্বেল হয়ে উঠলেন। পাঠাতে গিয়ে মেয়েকে পাঠাতে গিয়ে তাঁর বুক কেঁপে উঠল । অজানা
মন্তব্য : বিয়ের পর মেয়েকে পরের ঘরে অপরিচিত মহলে পাঠাতে গিয়ে বাঙালি মায়েরা চরম উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়েন। ক্ষেন্তিকে শ্বশুরবাড়ি পাঠাতে গিয়ে অন্নপূর্ণার বেলায়ও তাই হয়েছিল।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%aa%e0%a7%81%e0%a6%81%e0%a6%87%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%9a%e0%a6%be-%e0%a6%97%e0%a6%b2%e0%a7%8d%e0%a6%aa-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%ad%e0%a7%82%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%ad%e0%a7%82%e0%a6%b7/