অথবা, ডকুমেন্ট স্টাডি কি? সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রে কি ধরনের ডকুমেন্ট স্টাডি ব্যবহার করা হয়? এর কি কি সুবিধা অসুবিধা রয়েছে আলোচনা কর।
অথবা, ডকুমেন্ট স্টাডি কাকে বলে? সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রে কি ধরনের ডকুমেন্ট স্টাডি ব্যবহার করা হয়? এর কি কি সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য রয়েছে আলোচনা কর।
অথবা, ডকুমেন্ট স্টাডির সংজ্ঞা দাও? সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রে কি ধরনের ডকুমেন্ট স্টাডি ব্যবহার করা হয়? এর কি কি ইতিবাচক ও নেতিবাচক সম্পর্ক রয়েছে আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার হয়ে থাকে। সাক্ষাৎকার, পর্যবেক্ষণ, প্রশ্নপত্র ইত্যাদি পদ্ধতির ন্যায় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হল ডকুমেন্ট স্টাডি । সমাজের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার জন্য এ পদ্ধতির ব্যবহার বহুল প্রচলিত। প্রত্যেক ডকুমেন্টের জন্য একটি সামাজিক মূল্যবোধ থাকা উচিত
ডকুমেন্ট স্টাডির মাধ্যমে পূর্বের সংগৃহীত তথ্যাবলি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
ডকুমেন্ট স্টাডি : ডকুমেন্ট বলতে লিখিত কোন তথ্যাবলি বুঝায়। যে লিখিত তথ্যাবলি বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল সমৃদ্ধ এবং যা অধ্যয়ন করলে গবেষণার প্রয়োজনীয় বিষয়াদি সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায় তাই ডকুমেন্ট স্টাডি।
প্রমাণ্য সংজ্ঞা : বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে ডকুমেন্ট স্টাডি সম্পর্কে সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে তাঁদের কয়েকটি সংজ্ঞা উপস্থাপন করা হল :
P.V Young (1984) বলেছেন, “The documentary sources of information are those which are contained in the published and unpublished documents reports, statistics, manuscripts, letters, diaries and so on.” অর্থাৎ, প্রত্যেক ডকুমেন্ট কিছু নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে লিপিবদ্ধ করা হয়। ব্যক্তিগত পর্যায়ে ডায়েরি, চিঠিপত্র, ব্যবসায়িক পর্যায়ে অর্থসংক্রান্ত রেকর্ড। এছাড়া ডকুমেন্টের আরও কিছু ধরন আছে। যেমন- ম্যাগাজিন, সংবাদপত্র, জার্নাল, গবেষণা রিপোর্ট, নিউজ লেটার ইত্যাদি |
ডকুমেন্টের ধরন : ডকুমেন্টের ধরন উৎস অনুযায়ী দু’ধরনের হয়ে থাকে । যথা :
ক. প্রাথমিক ডকুমেন্ট ও
খ. মাধ্যমিক ডকুমেন্ট।
ক. প্রাথমিক ডকুমেন্ট : যখন একটি ঘটনা বা অবস্থার সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ব্যক্তির বর্ণনা অবিকৃতি করে রক্ষা হয় তখন তাই প্রাথমিক ডকুমেন্ট হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
খ. মাধ্যমিক ডকুমেন্ট : এ ধরনের উৎসকে মাধ্যমিক তথ্যের উৎসও বলা হয়। তথ্য সংগ্রহকারী নিজে যেখানে সংশ্লিষ্ট ঘটনার অংশগ্রহণকারী পর্যবেক্ষণকারীর নিকট থেকে সরাসরি তথ্য সংগ্রহ করে তখন তাকে মাধ্যমিক তথ্য হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। মাধ্যমিক ডকুমেন্ট ঐতিহাসিক গবেষণায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
ডকুমেন্ট স্টাডির সুবিধা : নিম্নে এ পদ্ধদির সুবিধাসমূহ আলোচনা করা হল ঃ
১. অন্যান্য ও দুষ্প্রাপ্য বিষয়াদি : ডকুমেন্ট স্টাডির সবচেয়ে বড় সুবিধা হল সেসব বিষয়াদি সম্পর্কে অনুসন্ধান করা যেখানে গবেষকের শারীরিক প্রবেশাধিকার সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে তথ্য সংগ্রহের জন্য ডকুমেন্ট স্টাডির ব্যবহার সুবিধাজনক।
২. প্রতিক্রিয়াহীনতা : এ পদ্ধতির মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য উত্তরদাতার ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় না।
৩. নমুনার আকার : এ ধরনের স্টাডিতে বৃত্ত মাপের নমুনা ও বিস্তৃত এলাকা নিয়ে কাজ করে। এখানে বৃহৎ এলাকা ও বৃহৎ স্টাডির বিষয়টি জড়িত।
৪. স্বতঃস্ফূর্ততা : এ পদ্ধতিতে গবেষণার ক্ষেত্রে গবেষক ও গবেষণার বিষয়ের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ত মনোভাব বিরাজ করে । এখানে গবেষক নিজেই কাজ করেন বলে এ স্বতঃস্ফূর্তভাব বিরাজ করে।
৫. স্বীকারোক্তি : ডকুমেন্টের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি স্বীকারোক্তি দান করে থাকে। এজন্য ডায়েরির মত ব্যক্তিগত নথিপত্র পাঠ করে কোন ব্যক্তি সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য জানা যায় ।
৬. কম ব্যয়বহুল : এ পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে অন্যান্য পদ্ধতির চেয়ে কম
অর্থ ব্যয় হয়। কারণ ডকুমেন্ট থেকে সংগৃহীত তথ্যাবলির জন্য বেশি অর্থের প্রয়োজন হয় না। এখানে তথ্য সাজানো থাকে শুধুমাত্র প্রয়োজন অনুযায়ী সংগ্রহ করা হয় ।
৭. উচ্চমান : ডকুমেন্টে যে তথ্য সংগৃহীত থাকে তা অধিকাংশেই উচ্চ শিক্ষিত লোকদের দ্বারা করা হয়। ফলে এটাতে উচ্চমান জ্ঞানগর্ভ পূর্ণ তথ্য সুসজ্জিত থাকে।
ডকুমেন্ট স্টাডির সমস্যা বা সীমাবদ্ধতা : নিম্নে ডকুমেন্ট পদ্ধতির সমস্যা বা সীমাবদ্ধতাসমূহ আলোচনা করা হল :
১. ক্ষণস্থায়ী : এ পদ্ধতিতে তথ্য সংরক্ষণ করা হয় ক্ষণস্থায়ীভাবে। কারণ অনেক নথিপত্র, জার্নাল, বইপুস্তক বেশি দিন সংগ্রহে রাখা সম্ভব নয়।
২. পক্ষপাতদুষ্ট : অনেক সময় এমন ডকুমেন্ট ব্যবহার করা হয় যা মূলত গবেষণার জন্য লিখিত নয়। আবার এমন লক্ষ্য উদ্দেশ্য নির্দিষ্ট করা থাকে যা পক্ষপাতদুষ্ট। এখানে নিরপেক্ষ হওয়ার সুযোগ কম থাকে।
৩. অসম্পূর্ণতা : এ পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করা হয় তৎকালীন আর্থসাাাজিক পরিবেশ পরিস্থিতির সাথে তাল মিলিয়ে বর্তমানের সাথে এর যোগসূত্র কম থাকে।
৪. অপর্যাপ্ততা : পক্ষপাত ও অসম্পূর্ণতার প্রেক্ষিতে সব ধরনের তথ্যাবলি সন্নিবেশিত করা হয় না। ফলে ডকুমেন্ট পর্যাপ্ত থাকে না ।
৫. নমুনায়নের ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্ব : অনেক সময় নমুনায়ন করা হয় শিক্ষিত ও উচ্চবিত্তের জনগোষ্ঠীর দ্বারা। ফলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী এর থেকে বাদ পড়ে যায়। আবার উচ্চবিত্ত গবেষণায় নিম্নবিত্ত পরিবারকে অবজ্ঞা করে ডকুমেন্ট তৈরি করে থাকে। ফলে পক্ষপাতিত্বের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
৬. ভাষাগত সীমাবদ্ধতা : অনেক সময় ডকুমেন্ট লেখা হয় এমন ভাষায় যা থেকে তথ্য সংগ্রহ মুশকিল। এ ধরনের ডকুমেন্ট গবেষণার জন্য কার্যকরী করা যায় না।
৭. তথ্যের যথার্থতা নিয়ে সন্দেহ : অনেক সময় ডকুমেন্টে এমন সব তথ্য সন্নিবেশিত করা হয় যার যথার্থতা নিয়ে জাগে। তখন গবেষণার জন্য এটা কাজে লাগানো যায় না।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে, ডকুমেন্ট স্টাডি গবেষণার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হওয়া সত্ত্বেও এর ব্যবহারিক কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তারপরও গবেষণার জন্য এর প্রয়োগ উল্লেখযোগ্য।